তিন কুতুব’র আশীর্বাদে এখন গোয়াইনঘাটের চোরাচালান

প্রকাশিত: ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২৪

তিন কুতুব’র আশীর্বাদে এখন গোয়াইনঘাটের চোরাচালান

Manual6 Ad Code

ক্রাইম প্রতিবেদক: বৈষম্যহীন ছাত্র-আন্দোলনে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গত (৫ আগষ্ট) পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সিলেট জেলার চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য গোয়াইনঘাটের চোরাচালান সিন্ডিকেটেরও হাতবদল হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এ সিন্ডিকেট একক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন সিলেট ও গোয়াইনঘাটের তৎকালীন ছাত্রলীগসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

 

Manual4 Ad Code

তবে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পরই চিনি চোরাচালানের সঙ্গে ইতিমধ্যে গোয়াইনঘাট বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠছে। যদিও বিএনপির ত্যাগী কোনো নেতাকর্মী এমন চোরাকারবারে জড়িত নয় বলে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের দাবি।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়াইনঘাটের একাধিক চোরাকারবারি জানান- ক্ষমতার পালাবদলের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে থেকেও স্থানীয় যুবদল-ছাত্রদল নামধারী ৪ কুতুব’র যোগসাজশে এখন চলছে গোয়াইনঘাটের চোরাচালান সিন্ডিকেট। এক কথায় এই তিন কুতুব’র আশীর্বাদে চলছে গোয়াইনঘাটের চোরাচালান!

 

এই তিন কুতুব হচ্ছেন- উপজেলার যুবদল নেতা- কামরুল, খায়রুল ও রাসেল।

 

এই তিন কুতুব নেপথ্যে থেকে তাদের অপরাপর সহযোগী- হালিম, বুলবুল, জসিম, হোসেন, জিয়া ও ছাত্রদল নেতা- আরিফুল ইসলাম, ফরিদ, কামাল, হুসেন, সোলেমান ও মোশাররফের মারফতে নিয়ন্ত্রণ করছেন চোরাচালান রাজ্য গোয়াইনঘাটের চোরাচালান সিন্ডিকেট বলে সুত্র জানায়। এই তিন কুতুবের নেতৃত্বেই উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বানের পানির মতোই দেশে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ, চিনি, চা-পাতা, কসমেটিক্স, কিট, শাড়ি, থ্রীপিস, লেহেঙ্গা, মদ, ফেনসিডিলসহ হরেকরকমের ভারতীয় পণ্য। এছাড়া এই তিন কুতুবের অপরাপর সহযোগীরা এসকল পণ্য নিরাপদে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর সু-ব্যবস্থার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন এমনকি বিনিময়ে যুবদল-ছাত্রদল নামধারী এই তিন কুতুবসহ সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাতিয়ে নিচ্ছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা।

Manual6 Ad Code

 

গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান- উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ও রুস্তমপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা- রাধানগর, মাতুরতল, বিছানাকান্দি-হাঁদারপাড়সহ অসংখ্য সীমান্ত দিয়ে এই তিন কুতুবের নেতৃত্বে অবাধে দেশে আসছে ভারতীয় নানানরকম পণ্য সামগ্রী। এসকল পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চিনি, চা পাতা, কসমেটিক, কিট, শাড়ি, থ্রীপিস, লেহেঙ্গা, মদ, ফেনসিডিল, চোরাই গাড়ি, অস্ত্রসহ বিভিন্ন পণ্য এই তিন কুতুবের হাত ধরে আসলেও এসব নিয়ে যেনও কোন মাথা ব্যাথা নেই স্থানীয় থানা পুলিশের। তবে থানা পুলিশের এমন নীরব ভূমিকার পিছনে রয়েছে কালো টাকার গল্প বলে অভিযোগ করেন তারা।

 

এদিকে, এ সকল পণ্য তামাবিল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক, গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে নগরের পাইকারি বাজার কালীঘাট ও লালদিঘীরপাড়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। আগে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের অনুসারীরা পাহাড়া দিয়ে প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবৈধ চোরাই চিনি ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মালামালের ট্রাক সিলেট শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিরাপদে পৌঁছার ব্যবস্থা করে দিতেন এবং এখনো তা অব্যাহত আছে শুধু লাইনের নিয়ন্ত্রণে দল ও ব্যাক্তির বদল ঘটেছে মাত্র।

 

Manual1 Ad Code

অন্যদিকে, একাধিক চোরাকারবারির ভাষ্যমতে- সরকার পতনের পর চোরাকারবারিরা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। কারণ চোরাচালানের হোতা ছাত্রলীগ নেতারাও আত্মগোপনে চলে যান। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় বিজিবির নজরদারিও আগের চেয়ে বেড়েছিলো, রাস্তায় সেনাবাহিনীর চেকপোষ্ট বসানো হয়েছিলো, পুলিশও নিয়মিত অভিযান চালিয়েছিলো। ফলে অনেকটা কমে গেলেও একবারে থেমে যায়নি চোরাচালান। কিন্তু যেমন লাউ তেমন কদু কিছুদিন যেতেই না যেতে এই তিন কুতুবের আশীর্বাদে এখন গোয়াইনঘাটের চোরাচালান। এখন শহরে নির্বিঘ্নে চোরাই চিনির প্রবেশের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চলা কিছুব্যক্তি ও অসাধু কিছু ব্যবসায়ীরা।

 

Manual1 Ad Code

অভিযোগের বিষয়ে জানতে যুবদল নেতা কামরুলের সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- আপনারা পারলে আমার কিছু করেন বলে হুংকার দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

 

এসব বিষয়ে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া সাত্তারের সেলফোনে যোগাযোগ করলে তিনি গণমাধ্যমকে জানান- তিনি বাঁ তাঁর সংগঠনের কেউ চোরাকারবারের সাথে জড়িত নয়, বরং দলের হাইকমান্ড থেকে নেতাকর্মীদের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা আছে এসবে না জড়ানোর। তারপরও কেউ যদি চোরাকারবারে জড়িত থাকে এবং সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

এসব বিষয়ে জানতে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ এর সরকারি সেলফোন যোগাযোগ করলে তিনি ফোনকল রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

October 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..