জৈন্তাপুরে প্রশাসনের নামে বালু শ্রমিকদের নিকট হতে চাঁদা আদায়

প্রকাশিত: ৬:১২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

জৈন্তাপুরে প্রশাসনের নামে বালু শ্রমিকদের নিকট হতে চাঁদা আদায়

Manual3 Ad Code

ক্রাইম প্রতিবেদক: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার প্রধান ও সারাদেশে বাংলার নীল নদী নামে পরিচিত সারী নদী। এই। উপজেলার সর্ববৃহত বালু খনি হিসাবে পরিচিত। যার ফলে সরকার নদীটি ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় করছে। ২০১০ সনে লালাখাল চা-বাগান ও নাজিমগড় রির্সোট সারী নদীর উৎস মূখে কয়েকটি দাগের উপর মামলা করে। মামলার প্রেক্ষিতে পুরো সারী নদী হতে বালু উত্তোলনে সরকারি ইজারা বন্দ হয়ে য়ায়। ফলে বেশ কয়েক বৎসর সারী নদীর ইজারা বন্ধ থাকে।

 

পরবর্তীতে স্থানীয় শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এবং রাজস্ব আদায়ের স্বর্থে সরকার মামলা ভূক্ত এরিয়া চিহ্নিত করে সারী নদীকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করে। সারীঘাট ব্রীজ হতে পিযাইনের মুখ পর্যন্ত (সারী-১), সারী ব্রীজ হতে কামরাঙ্গী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘাট এরিয়া পর্যন্ত (সারী-২) এবং কামরাঙ্গী স্কুল ঘাট হতে সারী নদীর জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত (মামলা ভূক্ত এরিায়া) (সারী-৩) বিভক্ত করে।

 

Manual6 Ad Code

রাজস্ব আদায় এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের কথা বিবেচনা করে সারী-১, সারী-২ ও বড়গাং নদী ইজারা প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করছেন। সারী-৩ মামলা ভূক্ত এরিয়া কোন প্রকার বালু পাথর উত্তোলন সংগ্রহ পরিবহন করা হতে শ্রমিকদের বিরত নিষেদাজ্ঞা জারী করেন মাহামান্য আদালত।

 

সম্প্রতি একটি বালু ও পাথর খেকু চক্র সারী-৩ (মামলাভুক্ত) এরিয়া হতে জমে থাকা বালু পাথরের উপর লেলুপ দৃষ্টি পড়ে। তারা মহামান্য আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে শ্রমিকদের সহজে বালু সংগ্রেহর লোভ দেখিয়ে নিরিহ শ্রমিকদেরকে ভূল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে মামলা ভূক্ত (সারী-৩) হতে নৌকা প্রতি ৮শত হতে ১হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে আসছে। শ্রমিকদের কষ্ট কম হওয়ায় এবং স্টক বালু পাওয়ার কারনে একান্ত বাধ্য হয়ে চাঁদা দিয়ে বালু সংগ্রহ করেছে।

Manual8 Ad Code

 

চাঁদা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে চাঁদা আদায়কারী ও বারকী শ্রমিকদের মধ্যে হাত্হাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে সারী-৩ হতে চাঁদাবাজী বন্দের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া আগষ্ট মাসে সরজমিন পরিদর্শন করেন। ঐসময় দুটি নৌকাসহ তিনশত ফিট বালু জব্দ করেন। কঠোর ভাবে আদালতের নিষেদাজ্ঞা পালনের নির্দেশনা জারী করেন।

 

বৈষম্য বিরুদী ছাত্র আন্দোরনের পর বালু ও পাথর খেকু চক্র প্রশাসনের নাম ভাঙ্গীয়ে সারী-৩ মামলা ভূক্ত এরিয়া হতে পুনরায় বালুর বিনিময়ে বারকী শ্রমিকদের নিকট হতে ৮শত হতে ১হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছে।

 

Manual3 Ad Code

এ বিষয়ে সারী নদীর বালু শ্রমিক (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জানান- আমরা নিরিহ শ্রমিক। পেটের দায়ে পানিতে বালতী ফেলে কিংবা ডুব দিয়ে বালু সংগ্রহ করতে হয়। এক্ষেত্রে ২শত ফুট কিংবা আড়াইশত ফুট বালু সংগ্রহ করতে প্রায় তিনঘন্টা সময় ব্যয় হয়ে যায়। ফলে একনৌকার অধিক বালু সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। এজন্য আমরা সময় বাঁচাতে একের অধিক নৌকা বালু উত্তোলনের জন্য একান্ত বাধ্য হয়ে আমরা চাঁদা দিয়ে সারী-৩ হতে বালু সংগ্রহ করি। ফলে প্রতিদিন ভোর হতে বিকাল তিনটার মধ্যে দুই হতে তিন নৌকা বালু সংগ্রহ করছি। এভাবে কয়েকশত নৌকা সারী তিন হতে বালু পাথর সংগ্রহ করছেন বলে তারা জানান। টাকা না দিলে সারী-৩ হতে বালু সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। চাঁদা না দিলে তাদের উপর বালু খেকু চক্রের সদস্যরা হামলা চালায়।

 

অপর শ্রমিক জানান, এই চক্রকে টাকা দিলে তাদের কোন সমস্য হয় না। তাদের দেওয়া চাঁদা নাকি প্রশাসন সহ আপনাদের সাংবাদিকরাও পান। তাই চাঁদা দিয়ে বালু সংগ্রহ করতে হয়। যেহেতু চাঁদা দিলেও সংশ্লিষ্ট কেউ আমাদের বাঁধাও দেয় না। তাই বাধ্য হয়েই ঝমেলা বিহীন ভাবে আমরা সারী-৩ হতে বালু আহরন করছি।

 

অপর আরেক শ্রমিক জানান, আপনারা শ্রমিক বেশে আমাদের সাথে আসুন দেখবেন বালু খেকু চক্রের সদস্যরা কিভাবে নৌকায় বালু উত্তোলনের আগেই চাঁদা আদায় করছেন। আগে চাঁদা দিয়ে পরে নৌকা লোড করতে হয়। আমাদের দাবী সরকার হয়ত কঠোর ভাবে সারী-৩ হতে বালু উত্তোলন আহরণ বন্দ করার জন্য। নতুবা সারী-১, সারী-২ ও বড়গাং নদীর ন্যয় ইজারা প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করলেও আমরা চাঁদাবাজীর কবল হতে মুক্তিপাব। সরকার হারাবেনা রাজস্ব।

 

এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় একজন প্রবীণ মুরব্বী চাঁদাবাজ চক্রের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান- এগুলো জেনে আর পত্রিকায় লিখে কি হবে। হয়ত দুই-এক দিন বন্দ হবে। পরে আবারও চালু হবে। আপনারাও তাদের কাছে এই সেই হয়ে যাবেন। আপনাদের অনেক লোক সাইকেল গাড়ী নিয়ে আসেন এবং চা,পান সিগারেট খেয়ে আর ফি নৌকায় জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সময় কাটিয়ে চলে যাবেন। টাকার বিনিময়ে জিরো পয়েন্ট হতে বালু পাথর সংগ্রহ হচ্ছে। এসব বন্দ হয়নি আর হবেওনা। তিনি আরও বলেন, সারী-৩ মামলা দিয়ে বন্ধ থাক সবাই চাচ্ছে। বন্ধ রাখতে পারলে চক্রের পকেটে বৎসরে কয়েক কোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন হবে। তারা কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা মিলে মিশে খাবে। নতুবা প্রশাসন সঠিক ভাবে অভিযান করত। তিনি আরও বলেন প্রশাসন অভিযানে আসার পূর্বেই চক্রের সদস্য সহ সবাই লাপাত্তা হয়ে যায়। আই ওয়াশের জন্য দুই একটি নৌকা রাখা হয় মাত্র।

Manual2 Ad Code

 

অনুসন্ধানে জানা যায়- গত ১ বছরে সারী ৩ হতে নিরিহ শ্রমিকের পেটে লাত্তি মেরে ৮০০ টাকা হারে ১১ কোটি টাকার চাদাঁবাজী হয়েছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্চুক এক সাবেক জন প্রতিনিধি বলেন গরিব মানুষ শ্রমিক যদি সারী ৩ হতে বালি পাথর আরোহন করে তবে চাঁদা দিবে কেন।চললে ফ্রি চলবে না হয় চাঁদাবাজী বন্ধ হবে।

 

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া জানান- সারী ৩ সম্পর্কে আমি বার বার ভিজিট করেছি যদি অবৈধ ভাবে কোন উৎকোচ কেহ আদায় করে। তবে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহন করবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2024
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..