তামাবিল সীমান্ত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের টার্গেট!

প্রকাশিত: ৭:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২২

তামাবিল সীমান্ত অস্ত্র ব্যবসায়ীদের টার্গেট!

নিজস্ব প্রতিবেদক: পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রায়ই আসছে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদের বড় চালান। দেশের বিভিন্ন সীমান্তের পাশাপাশি সিলেট সীমান্তকেও টার্গেট করেছে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে- সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়েও ভারত থেকে আসে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। দেশে নাশকতা সৃষ্টি করতে এবং সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই এসব অস্ত্র ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়। খবর বাংলাদেশ প্রতিদিনের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্রের চালান প্রবেশের হার বেড়েছে। আর এসব অস্ত্রের ক্রেতার অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবৈধ অস্ত্রৈর মজুদ গড়ে তোলা হচ্ছে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় একটি প্রাইভেট কারসহ পাঁচজনকে আটক করে গোয়েন্দা বিভাগ। তাদের কাছ থেকে ম্যাগাজিন, গুলিসহ আটটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। আটকদের একজন আকুল হোসেন যশোরের ছাত্রলীগ নেতা। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতীয় অবৈধ অস্ত্রের বাংলাদেশে চোরাচালান সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যে রীতিমতো পিলে চমকায় শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। এ সময় গ্রেফতার একজনের কাছ থেকে পাওয়া ফোন নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে কল করা হয় ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তখন ওই প্রান্ত থেকে ওপারের চক্রের সদস্যরা বলছিলেন, ‘যত প্রয়োজন তত অস্ত্র দেওয়া যাবে।’ পরে বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।

একাধিক গোয়েন্দাসূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়েও আসছে অবৈধ অস্ত্র। তবে যশোর সীমান্ত দিয়েই প্রধানত ভারতীয় অস্ত্র আসে। বোনাপোল সীমান্তের কাছে পুটখালী নামে একটি গ্রাম আছে। এর অন্যদিকে ভারত। ভারতের ওই এলাকায় কমপক্ষে তিনজন অস্ত্র ব্যবসায়ী আছেন, যারা বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠান। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে অবৈধ অস্ত্রের কারখানা আছে। যশোর ছাড়াও নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকেন্দ্রিক অস্ত্র চোরাচালান চক্র আছে। আছে ভারতীয় অস্ত্র চোরাচালান চক্রও। আর বান্দরবানভিত্তিক গ্রুপগুলো অস্ত্র আনে মিয়ানমার থেকে।

একাধিক সংস্থার তথ্য বলছে, স্থল ও জল পথের ৩০ রুটে দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছে। অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালান ঢুকছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়টি দুর্গম রুট দিয়ে নিয়মিত অস্ত্রের চালান ঢুকছে। এ ছাড়া শার্শার বেনাপোল স্থলবন্দর, চৌগাছার শাহজাদপুর, হিজলা, আন্দুলিয়া, মান্দারতলা, বেনাপোলের সীমান্তের গোগা, কায়বা, শিকারপুর ও দৌলতপুর সীমান্ত অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পছন্দের রুট। বিভিন্ন চোরাচালান পণ্যের মধ্য দিয়ে আনা হচ্ছে এসব অস্ত্র। এর বাইরে সাতক্ষীরা সদরের কুশখালী ও গাজীপুর ঘাট দিয়ে মাঝেমধ্যেই অস্ত্র বাংলাদেশে ঢুকছে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ভোলা নদী হয়ে এবং মোরেলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলা দিয়ে বলেশ্বরী নদীপথে অবৈধ অস্ত্র হাতবদল হয়। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, দিনাজপুরের হিলি, কুড়িগ্রামের দুর্গাপুর ও নাগেশ্বরী, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙার বরকল ও বাঘাইছড়ি, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসছে। কুমিল্লা সীমান্ত দিয়েও আসছে অবৈধ অস্ত্র।

এ বিষয়ে পুলিশ বলছে- যেহেতু সামনে নির্বাচন তাই কিছু অপরাধীর চাহিদা বাড়বে। দেশি-বিদেশি পৃষ্ঠপোষকদের কারণে হয়তো বাড়বে এসব ‘কামলা’র তৎপরতা। তবে জামিনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারির মধ্যে রেখেছে পুলিশ। বিশেষ করে যারা অতীতে অবৈধ অস্ত্র-সংক্রান্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

অপরদিকে, ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তালিকা এবং তথ্য সে দেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। ভারত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে পুলিশ আশা প্রকাশ করেছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..