হবিগঞ্জে অ্যাকাউন্টে আসা উপবৃত্তির টাকায় নয়-ছয়!

প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩১, ২০২২

হবিগঞ্জে অ্যাকাউন্টে আসা উপবৃত্তির টাকায় নয়-ছয়!

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক: শাওন ও মীম তারা আপন ভাই বোন। এর মধ্যে শাওন ১ম শ্রেণী ও মীম আক্তার হবিগঞ্জ শহরতলীর সুলতানমাহমুদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। তাদের পিতা মো. কিতাব আলী একজন দিনমজুর। তিনি সুলতানমাহমুদপুর এলাকার বাসিন্দা। অনেক কষ্ট করে তিনি সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন।

 

কিন্তু সম্প্রতি স্কুল থেকে তার দুই সন্তানের নাম আসে উপবৃত্তির টাকা। আর এতে করে অত্যান্ত খুশি হন তিনি। কিন্তু ক’দিন যেতে না যেতেই সেই খুশি রুপ নিয়েছে বিশাদে। নিজ অ্যাকাউন্টে ছেলে মেয়ের জন্য উপবৃত্তির টাকা আসলেও সেই টাকা উত্তোলনের পুর্বেই উধাও হয়ে গেছে! এমতাবস্থায় উপবৃত্তির টাকায় এমন নয়-ছয়ের ঘটনায় বিস্মিত হয়ে পড়েছেন তিনি।

 

কিতাব আলী অভিযোগ করে বলেন, বেশ কয়েকদিন শহরের মহিলা কলেজ রোড এলাকার ‘গুরুজী ডটকম’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ-এর অ্যাকাউন্ট খুলেন তিনি। এসময় তাকে একটি পিন কোড দেয়া হয়।

তিনি বলেন, সেই একই পিন কোড একই স্কুলের আরো কয়েকজন অভিভাবককে দেয়া হয়।

সন্দেহ করে কিতাব আলী বলেন, আমার অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির ৪ হাজার ৩৩০ টাকা এসেছে তা আমি দেখেছি। কিন্তু টাকা উত্তোলন করতে গেলে দেখি অ্যাকাউন্ডে মাত্র ৩০ টাকা রয়েছে। তিনি বলেন, আমি এবং গুরুজী ডটকমের কর্মচারীরা ছাড়া আর কেউ পিন নাম্বার জানে না। তা হলে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গেল কোথায়?

এদিকে শুধু গুরুজী ডটকমই নয় উপবৃত্তির টাকা প্রদানকারী আরো কয়েকটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও গ্রামগঞ্জ থেকে আসা অসহায় নিরীহ অভিভাকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন অভিভাবক।

 

ভোক্তভূগী অভিভাবক ফারুক মিয়া জানান, কিছু দিন পুর্বে আমি আমার সন্তানের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য শহরের পিটিআই রোড সংলগ্ন রিংকু নামে এক ব্যক্তির কম্পিউটারের দোকানে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি যারা টাকা উত্তোলন করছেন তাদের কাছ অতিরিক্ত ১শত করে টাকা আদায় করছে দোকানদাররা। যার কোন নিয়ম নেই।

 

তিনি বলেন, আমার পুর্বে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বহু জনের কাছ থেকে এমনভাবে টাকা নিয়েছেন যা আমি মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রাখি। পরবর্তীতে আমি টাকা উত্তোলন করতে গেলে আমি তাদেরকে টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করি এবং ভিডিও করার বিষয়টি জানাই। পরে দোকান কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং উপস্থিত লোকজনের টাকা ফেরত দেয়।

সচেতন মহল মনে করছেন, সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছে সেই টাকা যদি এভাবে লোপাট হয় তা হলে এর সুফল সাধারণ শিক্ষার্থীরা পাবে না। তাই কর্তৃপক্ষসহ সকলকে এ বিষয়ে আরো সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গুরুজী ডটকমের সত্ত্বাধিকারী জানান, আমরা শুধু অ্যাকাউন্ট খুলে পিন দিয়ে অভিভাবকদের কাছে দিয়ে দেই। টাকা পাঠানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যেহেতু এক সাথে অনেককে অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে হয় তাই অনেককে একই পিন নাম্বার দেয়া হয় যাতে করে তারা মনে রাখতে পারেন।

তিনি বলেন, কার টাকা কে উত্তোলন করছে সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. গোলাম মাওলা জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ এ বিষয়ে কোন অভিযোগও দেয়নি। তবে এমনটা হয়ে থাকলে অভিভাবকদের আরো সতর্ক হওয়ার আহব্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, টাকা অ্যাকাউন্টে পৌছামাত্র উত্তোলন করতে হবে অভিভাবকদের।

ক্রাইম সিলেট ডটকম/ রায়হান

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

July 2022
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..