সিলেট ৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা সফর, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের ‘প্রভাবশালী সিন্ডিকেটে’ কাছে জিম্মি থাকার অভিযোগ করেছেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। তিনি জানিয়েছেন, ‘একালার উন্নয়ন, সমস্যা, সম্ভাবনাসহ সব বিষয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারী বিধিবিধান উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের স্বার্থে কাজ করে আর্থিক মুনাফা অর্জন করছেন। জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে আমার সাথে পরামর্শ করার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি তা অবজ্ঞা করে যাচ্ছেন।’
শনিবার দুপুরে সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের সিলেট নগরের নবাব রোডস্থ বাসায় লিখিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।
তবে সব অভিযোগ অস্বিকার করেছেন ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার জানিয়েছেন, ‘আমি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এজেন্টা বাস্তবায়নে কাজ করছি। মাননীয় এমপি মহোদয় যে অভিযোগ করেছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা। বিষয়টি আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ দেখবেন। প্রয়োজনে তারা তদন্ত কমিটি করবেন। তখনই বিষয়টা পরিস্কার হবে।’
এদিকে লিখত বক্তব্যে মোকাব্বির বলেন, ‘বাংলাদেশের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ি, দুর্নীতিবাজ আম রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটগুলো মত আমার নির্বাচনী এলাকায়ও রয়েছে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। উদাহরণ হিসেবে বলতে চাই, দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহযোগিতায় একটি চক্র দীর্ঘ দিন ধরে আমার নির্বাচনী এলাকার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছিলো। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দেয় এবং আশেপাশে বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছিলো। বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি সাথে সাথে এই ব্যাপারে আশু প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণলায়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে একটি ডিও লেটার পাঠাই। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনরূপ ব্যবস্থা নিতে আগ্রহ না দেখালে আমি বিষয়টি মহান সংসদে উত্থাপন করি। যার ফলশ্রুতিতে সংশ্লিষ্ট মহলের টনক নড়ে এবং কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়। রক্ষা পায় অসংখ্য মানুষের বাড়িঘর, সহায় সম্পদ।’
তিনি বলেন, ‘সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যেখানে বিনামূল্যে জমি পাওয়া যাবে না, সেখানে তিন গুণ বেশি টাকা দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমার সংসদীয় এলাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনামূল্যে জমি দেয়ার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও ওসমানী নগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের সক্রিয় সহযোগিতায় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জমি অধিগ্রহণের নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি প্রমাণ সহ আমার নজে আসলে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ডিও লেটার পাঠাই এবং মহান জাতীয় সংসদের বিষয়টি উত্থাপন করি। একইভাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ওসমানী নগরের নির্বাহী কর্মকর্তা সরকারী বিধিবিধান উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের স্বার্থে কাজ করে আর্থিক মুনাফা অর্জন উপজেলার এই সব কাজের ব্যাপারে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে আমার সাথে পরামর্শ করার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তিনি তা অবজ্ঞা করে যাচ্ছেন। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও তিনি জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজের সিন্ডিকেটের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। এসকল অভিযোগের স্বপক্ষে আমাদের কাছে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ রয়েছে।’
‘এই নির্বাহী কর্মকর্তার যোগসাজশে সম্প্রতি ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে টিসিবির পণ্য বাজারমূল্যে খোলা বাজাে বিক্রি হওয়ার কথাও আপনাদের অজানা থাকার কথা নয়। এধরনের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।’
‘তাছাড়া আমার মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক টিআর/ কাবিটা প্রকল্পের কাজ যারা ১০০% সম্পন করেছেন, তাদের কাছ থেকে ১০-১৫% টাকা পকেটস্থ করারও অভিযোগ রয়েছে এই নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যারা তার দাবি অনুযায়ি ১০/১৫% টাকা দিচ্ছেন না, তাদের বিল আটকে রেখে নানাভাবে হয়রানী করে যাচ্ছেন। এ ধরনের অন্যায় চাপে বাধ্য হয়ে অনেকেই দাবী অনুযায়ি পারসেন্টেজ দিয়ে যাচ্ছেন। এসব দূর্নীতির সাক্ষ্য-প্রমাণ সময়মত কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রজাতন্ত্রের এই কর্মচারী প্রতিটি ক্ষেত্রে এমন কিছু সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে রেখেছেন, যাদের দৌরাত্ম্যে আমার নির্বাচনী এলাকার সাধারণ জনগণ সরকারী সেবা ও সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একজন দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তার কারণে রাষ্ট্রের মালিক জনগণের সাংবিধানিক অধিকার এমনভাবে ক্ষুন্ন হতে দেয়া যায়না।’ -যোগ করেন তিনি।
ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের বিরুদ্ধে এমপি মোকাব্বির বলেন, উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগগুলো আমি উর্ধ্বতন কর্তৃক্ষের সামনে তুলে ধরায়, তিনি (ইউএনও) এবং তার দোসর বিশেষ সুবিধাভোগী চক্রটি আমার উপর রুষ্ট হয়। তারা একজন সংসদ সদস্যের বিশেষ মর্যাদা ও অধিকার ক্ষুণ্ন করতে এখন পদে পদে বাধার সৃষ্টি করে চলেছে এবং নানাভাবে অপদস্ত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই অপচেষ্টা কোন একজন ব্যক্তি বা একজন এমপির বিরুে একজন জনপ্রতিনিধির নির্বাচকমন্ডলী অর্থাৎ সংসদীয় এলাকার জনগণকেই অপদস্ত করা এবং মহান জাতীয় সংসদকেই অপমান করার সামিল।
সংবাদ সম্মেলনে মোকাব্বির তার নির্বাচনী এলাকার জনগণসহ দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd