চিকনাগুলে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব : নেপথ্যে মছদ্দর আলী

প্রকাশিত: ২:৫০ পূর্বাহ্ণ, মে ২৮, ২০২১

চিকনাগুলে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব : নেপথ্যে মছদ্দর আলী

স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ এলাকা ৬ নং চিকনাগুল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ৭ নং ওয়ার্ডের ঠাকুরের মাটি এলাকায় অবাধে চলছে লাল মাটির টিলা কাটার মহোৎসব। প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকেই কুপি জ্বালিয়ে শুরু হয় টিলা কাটা।

টিলা কেটে লাল মাটি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জৈন্তাপুর উপজেলার ৬ নং চিকনাগুল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ৭ নং ওয়ার্ডের সম্ভাব্য মেম্বার পদপ্রার্থী ও ঠাকুরের মাটি গ্রামের মৃত সমির আলীর পুত্র ওই এলাকার চিহ্নিত টিলা খেকো মছদ্দর আলী বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, বাড়িঘর নির্মাণের কথা বলে ৫০-৬০ ফুট উঁচু টিলা কেটে মাটির শ্রেণী পরিবর্তন করে সমতল করা হচ্ছে। আর পাহাড় ও টিলা কাটা মাটি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর ও নিচু জমি।প্রতিদিন ট্রাক বোঝাই করে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। আর বিভিন্ন স্থানে প্লট ভরাট করা হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা ফুটে।

অভিযোগ রয়েছে, টিলা কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছ-গাছালি ছিল। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর তারা মাটি কেটে নিয়ে যান। মাটির যোগান দিতে বিশাল কয়েকটি পাহাড় কেটে সাবাড় করে চলেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি চিহ্নিত টিলা খেকো মছদ্দর আলীসহ তার হাতে গড়া একটি টিলা খেকো চক্র।

এদিকে পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

মছদ্দর আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে, টিলা কাটার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আমার রাখা কিছু নিচু জায়গা আছে তা ভরাট করার জন্য টিলাটি কাটা হচ্ছে। আর আমি না পেরে টিলা কাটছি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন যে আমি বর্তমানে যে প্লট গুলোতে টিলার লাল মাটি দিচ্ছি ওই প্লট গুলোতে অধিকাংশ ক্ষেতের মাটি দিয়ে ভরাট করেছি তাই প্লট গুলোতে খুব একটা বেশি টিলার লাল মাটি লাগছে না শুধু প্লট গুলো হ্যান্ডওভার করার জন্য আর কিছু না। বর্তমানে আমি মৃত: সোনাফর আলীর টিলা কাটছি। এক পর্যায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বিষয় জানতে চাইলে তিনি বিষয় টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।তবে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান তিনি এবং তার সাথে একবার দেখা করার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধও করেন তিনি। যাহার অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

পরিবেশবিদ আব্দুল হাই আল হাদী জানান, সিলেটের উত্তর পূর্বাঞ্চল ভূ-তাত্তিক পাহাড়ি অঞ্চল। সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক উন্নয়নের কাজে ১৯৯৬ সালে পাহাড় ও টিলার বিশাল অংশ বিলীন করে দেওয়া হয়। বর্তমানে যে টিলাগুলো রয়েছে তা বিপন্ন হয়ে গেলে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়বে। পাহাড়কাটা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আশঙ্কা রয়েছে ভূমিকম্প বা লাগাতার বর্ষণের সময় ভূমিধস হয়ে বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে। তাই তিনি পাহাড় খেকোদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার অনুরোধ জানান।

জৈন্তাপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও উনার মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া গেছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে।

আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। সিলেটের ছয় উপজেলায় পাহাড় টিলা কাটা রোধে ২০১১ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। সিলেট সদর উপজেলা, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর জন্য ৯৭৫০/১১ একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১ মার্চ পাহাড় টিলা কাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালত রায় দেয়। এই আইনের মাধ্যমে অপরাধ দমনে জরুরি প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে পারবে।

সর্বশেষে স্থানীয় সচেতন মহল পরিবেশ ধ্বংসকারী ও চিহ্নিত টিলা খেকো মছদ্দর আলীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

May 2021
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..