সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২০
স্টাফ রিপোর্টার :: প্রবাদে আছে নুন আনতে পান্থা ফুরায়, প্রবাদের এই বাক্যের সাথে খাপ খাইয়ে এক সময় চলছিল সংসার। ভাড়ায় খাটা শ্রমিকের মজুরী আর কাঠুরী হয়ে পাহাড়-জঙ্গল থেকে আহরিত কাঠবিক্রির টাকা দিয়ে কোন মতে চলতো যার সংসার। তিনি হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী ১ নং লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়ন’র সাউদ গ্রামের মশাহিদ আলীর পুত্র তমিজ উদ্দিন ওরফে মতই ওরফে পাথুরে তমিজ। তিনি ওই ইউপির ৯নং ওয়ার্ড সদস্য। অতি অল্প দিনেই এখন তার বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ি, বিশাল বিত্তবৈভব এবং কোটি কোটি টাকা মূল্যের জায়গা-জমি ও মিরাসদারী। জ্ঞাতআয় বহির্ভুত টাকায় তিনি এখন পাহাড়ী এলাকার এক নব্যসম্রাট। লোভা নদীতে কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের দুই দুইটি স্পীডবোট ফেলে রেখেছেন তিনি। যখন ইচ্ছে তখনই এই স্পীডবোট নিয়ে নদীর একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে ঘুরে বেড়ান তিনি। অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকার বদৌলতে খেতাব পেয়েছেন সমাজসেবী ও জনসেবকের, কালোটাকার জোরে ইউপি মেম্বারের পদটিও বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয়া রাজ্য থেকে কানাইঘাটের উপর দিয়ে বয়ে আসা পহাড়ী লোভা নদী। এই নদীর বুকে সম্পুর্ণ অবৈধ পন্থায় বিশাল বিশাল গর্ত করে পাথর উত্তোলন করে থাকেন তমিজ। সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় ফাকি দিয়ে চলেছেন। ফলে রাতারাতি জিরো থেকে হিরো ও আঙ্গুুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন এই তমিজ মেম্বার। তার এসব বেপরোয়া কর্মকান্ডে কানাইঘাটের লোভানদী এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। বদলে গেছে ওই সীমান্তিক এলাকায় বাংলাদেশের মানিচিত্র। টাকার জোরে প্রভাবশালী হয়ে ওঠায় ভয়ে এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না।
চারদলীয় জোট সরকার আমালে রাজনৈতিক নেতা-হোতা ও কর্তাব্যক্তিদের শেল্টারে থেকে হরিলুট করেছেন এবং এখনো করে চলেছেন সরকারের মালিকানা পাথরমহাল ও টিলা ভূমি। পাহাড়ী নদী লোভার পানি শুকিয়ে গেলে পাথর উত্তোলনে মরিয়া হয়ে ওঠেন তমিজ। যেখানে ইচ্ছে সেখানেই গর্ত করে কোটি কোটি টাকার পাথর আহরন করে থাকেন তিনি। পাশাপাশি খাবলে খাচ্ছেন এলাকার টিলা পাহাড় ও পাহাড়ি জনবসতি। টাকা ও ক্ষমতার জোরে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তার এতো প্রভাব এতো বিত্ত-বৈভব। তাইতো এলাকাবাসী আড়ালে তাকে পাথরখেকো তমিজ, পাথুরে তমিজ ও পাপী তমিজসহ বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষায়িত করলেও প্রকাশ্যে মূখ খোলতে সাহস পান না কেউই। শুধু পাথরখেকো নয়, পাশাপাশি অনুগত একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটও রয়েছে তার। আর সেই সিন্ডিকেট নিয়ে পর্দার আড়ালে রয়েছে তার কোটি কোটি টাকার রকমফের অবৈধ ব্যবসা। এই অবৈধ ব্যবসার খোঁজ-খবর রাখে না স্থানীয় প্রশাসন। অবৈধ ব্যবসা ও সিন্ডিকেটের পাশাপাশি এলাকার একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে জনমানুষের উপর চালিয়ে থাকেন নানা জুলুম নির্যাতন। ভয়ে কেউই বিচারপ্রার্থী হয় না তমিজের কোন অপরাধ-অপকর্মের। অগত্যা কেউ বিচার প্রার্থী হলে আইনী হয়রানীর শিকার হয়ে উল্টো বিচারের কাটগড়ায় দাঁড়াতে হয় তাকে। একজন কাঠুরী থেকে রাতারাতি বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া মেম্বার তমিজের আয়ের উৎস্য নিয়ে প্রশ্ন এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে। অভিযান দিলেও তমিজ বাহিনীর এলাকায় কোন ধরনের অভিযান হয়নি।
অনুসন্ধ্যানে কানাইঘাটের এই পাহাড়ি নব্যসম্রাট তমিজ ওরফে পাথুরে তমিজের পাহাড়সম সম্পদ ও আয়ের উৎস সম্পর্কে বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য।
তমিজ তার বাহিনীর মহড়া দিয়ে পাথর উত্তোলনের প্রতিটি গর্ত থেকে দুই লাখ টাকা করে চাঁদা আদায় করে থাকেন। এই বাহিরে রয়েছে রয়েলটির নামে চাঁদাবাজি।এই চাঁদাবাজরা পাথর থেকে অর্ধৈকের ও বেশি টাকা আদায় করে।
জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি আওয়ামীলীগ নেতা মোস্তাক আহমদ পলাশ ও তমিজ উদ্দিন কোয়ারীর ছয়টি গর্ত বন্ধ করে দেন। পরে বড় অংকের টাকার বিনিময় ৮ জানুয়ারি বুধবার উপজেলার ছতিপুর গ্রামের নূর উদ্দিনের ছেলে আহাদ হোসেন, আলতাফ উদ্দিনের ছেলে রাসেল আহমদ, সমশের আলমের ছেলে তাহের আহমদ, কান্দলা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে বিল্লাল আহমদ ও সাউদ গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে শাহাব উদ্দিনের গর্তসহ মোট পাঁচটি বন্ধ কোয়ারী খুলে দেন। কিন্তু তাদের চাওয়ার পরিমান টাকা না দেওয়ায় রেজয়ানের একটি পাথর উত্তোলেনের গর্ত এখনো বন্ধ রাখেন। তমিজ বাহিনীর সাথে রয়েছে কানাইঘাট থানা পুলিশের গভীর সখ্যতা। তারা থানা পুলিশের মাধ্যমে ঘরে বসেই সহজে টাকা উত্তোলন করতে পারেন। এই টাকার ভাগ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই টাকা রাজনৈতিক নেতা নামের বোয়ালদের কাছেও পাঠাতে হয়।
কানাইঘাট থানা পুলিশের এএসআই বেলাল-এর দায়িত্ব প্রতিদিন কোয়ারী এলাকা। যার ফলে মাস শেষে বেলাল এসকল টাকা আদায় করে তমিজ উদ্দিন বাহিনীর নিকট হিসাব সমজিয়ে দেন। এসকল দায়িত্বে রয়েছেন থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা।
তমিজ বাহিনীর চাঁদাবাজি ও নিপীড়নে এলাকার শান্তিকামী লোকজন অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের পড়তে হয় বিভিন্ন হামলা মামলায়। বিদায় এই চক্রটি নিরবে পুলিশের মাধ্যমে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। অনুসন্ধ্যানে তমিজ মেম্বারের অবৈধ সম্পদ-সহ নানা কুকীর্তির ব্যাপক তথ্য বেরিয়ে আসবে।
এই অবৈধ পাথর খেকো তমিজ বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট জেলা পুলিশ সুপারসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আশু পদক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার নিরীহ ব্যবসায়ী ও শান্তিকামী মানুষ।
অভিয়োগের ব্যাপারে তমিজ মেম্বারের সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি চাঁদাবাজি করলে কেউ মামলা করতে পারে। লেখালেখি ও নিউজ-টিউজের কোন তোয়ায়াক্কা করি না আমি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd