বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: মানব পাচার মামলার বাদীকে অস্ত্র দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্ঠার অভিযোগে সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় দায়ের করা মামলায় ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে উপজেলার রামপাশা বাজারের সমুজ মিয়ার চায়ের দোকান থেকে থানা পুলিশ ওই ৩ জনকে আটক করে। বৃহস্পতিবার সকালে আটককৃত ৩ জনসহ মানব পাচারকারী রফিকুল ইসলামকে প্রধান অভিযুক্ত করে ৫ জনের নাম উল্লেখ ও আর ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন উপজেলার নওধার (মাঝপাড়া) গ্রামের ইলিয়াস আলীর পুত্র রেজাউল ইসলাম রাজু। মামলা নং ২১ (তাং ২৮.১১.১৯ইং)। রাজুর দায়ের করা মামলায় আটককৃত ৩ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উপজেলার রাজনগর গ্রামের মৃত আত্তর আলীর পুত্র আবদুল কাদির (৪০), রামপাশা (কোনাপাড়া) গ্রামের মৃত আবদুল মানিকের পুত্র আলী হায়দার মহুরী (৩৮), বিশ্বনাথ নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা আসু মিয়ার পুত্র আবুল কালাম (৩০)। বাদী রেজাউল ইসলাম রাজু দায়ের করা মানব পাচার মামলার প্রধান আসামী উপজেলার কাঠলীপাড়া গ্রামের মৃত চমক আলীর পুত্র রফিকুল ইসলাম (৫৫)’কে এ মামলায় প্রধান অভিযুক্ত ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী (চেরাগী) গ্রামের সৈয়দ আলীর পুত্র শাহিন আহমদ (৩০)’কে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বাদীর দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদী রেজাউল ইসলাম রাজু তার মামলার প্রধান অভিযুক্ত উপজেলার কাঠলীপাড়া গ্রামের মৃত চমক আলীর পুত্র রফিকুল ইসলামকে প্রধান অভিযুক্ত করাসহ ৫ জনের নাম উল্লেখ ও ১০/১১ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত রেখে গত ১৬ মে মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইন-২০১২ এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৮ (তাং ১৬.৫.১৯ইং)। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তধীন রয়েছে। এ মামলা দায়েরের পর থেকে অভিযুক্ত রফিকুল ইসলামসহ অপর আসামিরা বাদী (রাজু) ও তার পরিবার সদস্যদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রাণী করাসহ প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে আসছে। এমতাবস্থায় গত ২৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে থাকা বাদীকে মামলার প্রথম সাক্ষী দেলোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে তাকে (রাজুকে) জানায় এই মামলার অভিযুক্ত আলী হায়দার মহুরী ও রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত আবদুল কাদির ও আবুল কালাম যোগাযোগ করে বাদী (রাজু) ও সাক্ষী দিলোয়ার হোসেনকে একটি মিথ্যা অস্ত্র মামলায় জড়ানোর জন্য গত এক সপ্তাহ পূর্বে ২ লাখ টাকায় চুক্তি করেছে। সেই মোতাবেক প্রধান অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম, গ্রেফতারকৃত আলী হায়দার মহুরী ও অপর অভিযুক্ত শাহিন আহমদ তাদেরকে (কাদির ও কালাম) ১ লাখ ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছে। কিন্তু টাকা ভাগভাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে সমস্যা হওয়ায় কাদির ও কালাম অপর অভিযুক্ত আলী হায়দার মহুরীর কাজে টাকা ফেরত চায়। বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় রামপাশা বাজারের সবুজ মিয়ার চায়ের দোকানে অভিযুক্ত কাদির, আবুল কালাম অপর অভিযুক্ত আলী হায়দার মহুরীকে ডেকে এনে বাদিকে অস্ত্র মামলায় জড়ানোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এসময় তাদের মধ্যে কথাকাটাটি সৃষ্টি হলে সাক্ষীসহ স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে বাদী রেজাউল ইসলাম রাজুকে বিষয়টি অবহিত করলে বাদি তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তারকৃত আলী হায়দার মহুরী কাছ থেকে বিস্তারিত জানেন। বাদী সাথে সাথে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ৩ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বাদী রেজাউল ইসলাম রাজুকে মিথ্যা অস্ত্র মামলায় জড়ানোর পায়তারার কথা স্বীকার করে গ্রেফতারকৃতরা (আবদুল কাদির, আলী হায়দার মহুরী, আবুল কালাম)।
মানব পাচার মামলার বাদীকে মিথ্যা অস্ত্র মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্ঠার অভিযোগে থানা মামলা দায়ের ও ৩ জনকে গ্রেফতারের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানা ওসি (তদন্ত) রমা প্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, গ্রেফতারকৃতদেরকে বৃহস্পতিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।