সিলেট ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:১৫ অপরাহ্ণ, জুন ২, ২০১৯
কুলাউড়ায় অপহরণের ছয় ঘণ্টা পর শ্রীমঙ্গল থেকে উদ্ধার হওয়া চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মাহাদী অমি (০৯) কে অপহরণে অংশ নেয় তার প্রতিবেশী এক যুবকসহ মোট ৪ যুবক। উদ্ধারকৃত অমি কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও এলাকার কাতার প্রবাসী মো. আব্দুল হাসিমের ছেলে। বর্তমানে তার পরিবার পৌর শহরের মাগুরায় বসবাস করছেন।
শনিবার (১ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এতথ্য নিশ্চিত করেন কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস হাসান। তিনি বলেন, তাদের মূল টার্গেট ছিলো অমিকে অপহরণ করে ২ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায় করতে।
আটককৃত অপহরণকারীরা হলো- বিয়ানীবাজার উপজেলার মোল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে কুলাউড়া পৌর শহরের মাগুরা এলাকার নিজাম আহমদের ছেলে রেদওয়ান আহমদ (২৫), কুলাউড়া পৌর শহরের জয়পাশা (৭নং ওয়ার্ড) এলাকার মৃত শাজাহান মিয়ার ছেলে হৃদয় আহমদ (২২), উপজেলার জয়চন্ডি ইউনিয়নের দানাপুর গ্রামের মৃত তোয়াব আলীর ছেলে কামরুল ইসলাম (২২) ও পৌর শহরের জয়পাশা (৭ নং ওয়ার্ড) এলাকার মৃত ইন্তাজ চৌকিদারের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২৪)। এদের মধ্যে তিনজন আটক হলেও খায়রুল বর্তমানে পলাতক আছে।
জানা যায়, শুক্রবার (৩১ মে) রাতে তারাবীর নামাজ শেষে সাড়ে ৯ টার দিকে মাহাদী অমি মসজিদ থেকে বের হয়। এসময় হৃদয় নামে পূর্বপরিচিত যুবকের সাথে দেখা হয় অমির। হৃদয় তাকে মোটরসাইকেলে তুলে শহরের দক্ষিণবাজার হয়ে মাগুরার সানরাইজ কেজি স্কুলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকে একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ-১১-৯৬৯৭) নিয়ে ওঁতপেতে থাকে রেদওয়ান, কামরুল ও খায়রুল। স্কুলের সামনে পৌঁছামাত্র খায়রুল অমির মুখ চেপে ধরে এবং বাকিরা তাকে জোরপূর্বক গাড়িতে তুলে। গাড়িতে ওঠামাত্র অপহরণকারীরা পানি জাতীয় দ্রব্যে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত করে অমিকে জোর করে পান করায়। এরপর থেকে অমি অচেতন অবস্থায় ছিলো।
মাইক্রোবাসযোগে কুলাউড়া থেকে শ্রীমঙ্গলে গিয়ে রেদওয়ানের পূর্ব পরিচিত একটি ঘরে নিয়ে তুলে অমিকে। মাইক্রোবাসটির চালক ছিলো হৃদয়। সেখান থেকে রাত আনুমানিক ১টার দিকে অমিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাড়াউড়া ইউনিয়নের ইসবপুর গ্রামের ৪নং পুলের পাশে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত অন্ধকার ঘরে স্থানান্তরিত করে অপহরণকারীরা।
এদিকে রাত পৌণে ১০টা পর্যন্ত অমি বাসায় না যাওয়ায় অমির মা গুলশানা বেগম ছেলেকে খুঁজতে থাকেন। বিগত কয়েকদিন রেদওয়ানের সাথে ছেলেকে দেখেছিলেন তাই তিনি রেদওয়ানের খোঁজে তার বাসায় যান অমির মা। রেদওয়ানের কোন তথ্য না পাওয়ায় সন্দেহ হলে তিনি সরাসরি কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তীর শরণাপন্ন হন।
খবর পেয়ে মৌলভীবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে এবং কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস হাসান ও কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী অমিকে উদ্ধারের জন্য মাঠে নামেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অমি হৃদয়ের সাথে হাঁটছিলো এমন তথ্য পেয়ে ওসি ইয়ারদৌস প্রথমে হৃদয়ের ভাইকে ধরে নিয়ে আসেন এবং তার দেয়া তথ্যমতে হৃদয়কে আটক করা করা হয়। পরে হৃদয়ের দেয়া তথ্য মতে রাত সাড়ে ৩টার দিকে অপহৃত মাহাদী অমিকে সেই আস্তানা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে এবং রেদওয়ান ও কামরুলকে আটক করে পুলিশ।
এবিষয়ে অমির মামা যুক্তরাজ্য প্রবাসী নাহিদ আহমদ (৩২) বলেন, ‘আমি গত ৩০ মে দেশে এসেছি। ভাগ্নে অমিকে অপহরণ করে তারা (অপহরণকারীরা) মূলত আমার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। যেহেতু তারা পূর্ব পরিচিত এবং আমাদের সম্পর্কে জানতো তাই এমনটা ধারণা করছি।’
অমির মা গুলশানা বেগম বলেন, প্রায় সময় প্রতিবেশী রেদওয়ানের সাথে আমার ছেলে অমি মেলামেশা করতো। প্রায় ৮ বছর যাবৎ একই এলাকায় বসবাস তাই কোন সন্দেহ ছিলো না। কিন্তু তারা এমনটি করবে ভাবতেও অবাক লাগছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুলাউড়া থানার ওসি (তদন্ত) সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, এ ঘটনায় অপহরণকারী চক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে। খায়রুল নামে একজন পলাতক আছে। তবে দ্রুত তাকে আটকের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস হাসান বলেন, এ ঘটনায় অমির মা বাদি হয়ে একটি মামলা (নং-১, ০১/০৬/২০১৯ইং) দায়ের করেছেন। অপহরণকারী তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কোর্টের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd