খতমে বুখারির অনুষ্ঠানে হিন্দু ও নারী অতিথিকে নিয়ে তোলপাড়!

প্রকাশিত: ৩:৫৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০১৮


Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস সমাপনী অনুষ্ঠান ‘খতমে বুখারি’র একটি ছবি নিয়ে ফেসবুকে তীব্র সমালোচনার শুরু হয়েছে। কারণ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন নারী ও হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি অতিথি হিসেবে রয়েছেন। পাশে রয়েছে শোলাকিয়ার ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।

Manual3 Ad Code

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এটি মুন্সিগঞ্জের কাটাখালির সুফিয়া নাহার মহিলা মাদরাসার অনুষ্ঠানের ছবি। গতকাল ২০ এপ্রিল মাদরাসার শিক্ষা সমাপনী হিসেবে আয়োজন করা হয়েছিল এ অনুষ্ঠানের।

জানা যায়, অতিথির আসনে বসা যাদের নিয়ে আপত্তি করা হচ্ছে তারা সাধারণ অতিথি নন মুন্সিগঞ্জের দুটি আসনের সংসদ সদস্য।

তাদের একজন অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস মুন্সিগঞ্জ ৩ আসনের এমপি এবং আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক। অন্যজন অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি মুন্সিগঞ্জ ২ আসনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও হুইপ।

মাদরাসার পরিচালক মুফতি সরওয়ার এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবেই তাদের অতিথি করেছিলেন বলে জানা গেছে।

তবে এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আবু ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন এবং তিনিই বুখারি শেষ ছবক পড়িয়েছেন।

ছবিটি নিয়ে অনেক শিক্ষার্থীর মন্তব্যের সারসংক্ষেপ এমন- কওমি মাদরাসা শত বছর ধরে যে ঐহিত্য নিয়ে চলমান সে ধারায় অনেকটা আচমকা আঘাত এটি।

অনেকে বলছেন, খতমে বুখারিকে অতিমাত্রায় অনুষ্ঠানিকরণের ফল এটি। যা মাদরাসার স্বকীয়তাকে ধ্বংস করছে।

Manual1 Ad Code

তাদের মতে, একটা ইসলামি অনুষ্ঠান যেখানে স্টেজে রয়েছেন উলামায়ে কেরাম সেখানে একজন হিন্দু ব্যক্তি ও নারীর অতিথি হওয়াটা বেমানান।

তবে কেউ কেউ ভিন্নমতও ব্যক্ত করছেন। তাদের যুক্তি- সমাজের সঙ্গে না মিশে উল্টো স্রোতে চলা মুশকিল। এর আগেও চট্টগ্রামের একটি মাদরাসা এবং একটি ওয়াজের মাহফিলে নারী অতিথি দেখা গিয়েছিল।

তবে ফেসবুকের এসব আলোচনা সমালোচনাকে অযাচিত বলে ঘটনাকে খুব স্বাভাবিকই দেখছেন অনুষ্ঠানের অতিথি শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।তিনি হেসে হেসেই বলেন, এটা নিয়ে সমালোচনার কী আছে। তারা জনপ্রতিনিধি, যে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার অধিকার রাখে। আর এ ধরনের প্রোগ্রামে তো বিধর্মীদের বেশি আশা উচিত যা তাদের হেদায়াতের উছিলা হতে পারে।

আল্লামা মাসঊদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মাদরাসা কোনো ইবাদতগাহ নয়। এটা একটা শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে আসতে অজু করতে হয় না, তাহিয়াতুল অজুও পড়তে হয় না। মাদরাসায় কী হয় দেখার জন্য অন্যরা আসতেই পারে।

তিনি পাশের দেশ ভারতের উদাহরণ টেনে বলেন, আমাদের দেশে এসব নিয়ে এত প্রতিক্রিয়া হয় কিন্তু ভারতে এমন অনুষ্ঠান অহরহই দেখা যাবে। বরং তারা ভারতীয় আলেমরা অন্য ধর্মের লোকদের অতিথি করে এনে নিজেদের কার্যক্রম দেখান।

অনুষ্ঠানে বুখারি শরিফের শেষ দরস দেন বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আবু ইউসুফ। সমালোচনার কাচিতে পড়ছেন তিনিও। তবে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ার ইসলামের কাছে।

বলেন, আমি আসলে জানতাম না অনুষ্ঠানের অতিথি কারা। এ মাদরসায় গত বছরও আমি বুখারির শেষ দরস দিয়েছি সে হিসেবে তারা এবারও আমাকে রেখেছে। তবে অনুষ্ঠানে পৌঁছে জানতে পারলাম অন্যান্য অতিথিদের নাম। আর আমাকে বলা হয়েছিল নারী এমপি মাদরাসার ভেতরে গিয়ে ছাত্রীদের সাথে বসবেন।

তিনি বলেন, যখন বিষয়গুলো জানতে পেরেছি তখন প্রতিবাদের কোনো উপায় ছিল না। করলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যেত। যা নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতো।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সুফিয়া নাহার মহিলা মাদরাসার পরিচালক মুফতি সরওয়ার হোসাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, খতমে বুখারির অনুষ্ঠান ছিল মাদরাসার ভেতরে। আর বাইরে ছিল দোয়া মাহফিল।

তিনি আরও বলেন, যাদের অতিথি করা নিয়ে আপত্তি করা হচ্ছে তাদের তো দাওয়াত করেছি জনপ্রতিনিধি হিসেবে। তারা সবসময় মসজিদ মাদরাসায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আসেন। বিএনপি সরকার আমলে অনেক আলেম সংসদস সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল, তারা তো মন্দিরে গিয়েছে। সেগুলো উন্নয়নের জন্য টাকাও দিয়েছে।

এদিকে নারীর পর্দার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, এ সমস্যা তো নতুন নয়। গত ১০০ বছর ধরে আমরা সমস্যায় ভুগছি এবং আলোচনা করছি।

Manual5 Ad Code

কিন্তু এ সমস্যা নিয়ে আপনি যদি বসে থাকেন তাহলে তো ঘরে আবদ্ধ হয়ে যাবেন। আপনি বাজারে যান সেখানে খোলামেলা নারী, রাস্তায় বের হন সেখানেও নারী।

অথচ ইসলামি অনুষ্ঠান বলে নারী এমপি যেভাবে মাথা ঢেকে এসেছেন সেটা নিয়ে তো আপত্তি থাকার কথা না। তাছাড়া চার ইমামের মধ্যে আবু হানিফা রহ. ছাড়া অন্যদের মতে চেহারা পর্দার অন্তর্ভূক্ত নয়।

বিধর্মীদের মাদরাসায় আসাকে ভিন্নদৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন না মুফতি আবু ইউসুফও। তিনি বলেন, নবীজি সা. এর কাছেও হিন্দু ও ইহুদিরা দোয়া নিতে আসত। তিনি নিষেধ করতেন না। তাই মাদরাসায় তারা আসতে পারেন। তবে একসঙ্গে বসা নিয়ে আপত্তি রয়েছে।

তবে তিনি অনুষ্ঠান আয়োজকদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, কোনো রকম অপ্রীতিকর ও বিতর্ক তৈরি হয় এমন পরিস্থিতি যেন না সৃষ্টি হয় সেদিকে শতভাগ খেয়াল রেখে প্রোগ্রাম করা উচিত।

Manual7 Ad Code

মুন্সিগঞ্জের সুফিয়া নাহার মহিলা মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠার বয়স মাত্র দুই বছর। প্রতিষ্ঠাতা মুফতি সরওয়ার হোসাইন ইসলামিক ফাউন্ডেশন মুন্সিগঞ্জ শাখায়ও কর্মরত। নিজের স্ত্রী সুফিয়া নাহারের নামে মাদরাসাটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..