১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষা শুরু : সিটে বসতে হবে ৩০ মিনিট আগে

প্রকাশিত: ২:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮

Manual2 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। এই পরীক্ষা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; যার মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে আসন গ্রহণ, সব শিক্ষা বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা, আজ শুক্রবার থেকে পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ, প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে পরীক্ষা বাতিল, শুধু কেন্দ্রসচিব একটি সাধারণ ফোন (স্মার্টফোন নয়) সঙ্গে রাখতে পারবেন ইত্যাদি।

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক সভায় এসব তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শুধু কেন্দ্রে প্রবেশ নয়, সিটে বসতে হবে পরীক্ষার্থীদের। কেউ এ সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে না পারলে তার পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। ফলে সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা শুরুর সময় নির্ধারণ করা হলেও কার্যত শিক্ষার্থীদের সকাল সাড়ে ৯টা মাথায় রেখে বাসা থেকে বের হতে হবে। কিছুদিন ধরেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা বলা হচ্ছিল। এর আগে জেএসসি পরীক্ষায় আধাঘণ্টা আগে পরীক্ষার হলে প্রবেশের কথা বলা হলেও তা শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যবাধকতা ছিল না।

পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে কেন্দ্রে  প্রবেশের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। তাঁরা বলছেন, পরীক্ষা শুরুর সময়সীমা যদি ১০টাই হয় তাহলে কেন আধাঘণ্টা আগে প্রবেশ করতে হবে? আর রাজধানীতে যে যানজট তাতে এত আগে পৌঁছানো কষ্টকর। আর আগে পৌঁছানো গেলেও পরীক্ষার প্রস্তুতিতে তা বাধার সৃষ্টি করবে।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, পরীক্ষা শুরুর আগেই সাধারণত প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠছে। কারণ কেন্দ গুলোতে আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নের প্যাকেট খোলার নিয়ম রয়েছে। শিক্ষকরা প্রশ্ন খুলেই তা মোবাইলে ছবি তুলে কেন্দে র বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এরপর তা আবার সমাধানসহ শিক্ষার্থীদের কাছে চলে আসছে। আবার অনেক কেন্দে  গোপনে নির্দিষ্ট সময়ের আগেও প্রশ্নের প্যাকেট খুলে ফেলা হচ্ছে। পরীক্ষা শুরুর আধাঘণ্টা আগে শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করলে এর পরই প্রশ্ন খোলা হবে। তাতে আগেভাগে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন পাওয়ার সুুযোগ থাকবে না।

রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষার্থী আরিফ হোসেনের বাবা আকবর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পরীক্ষা ১০টায় শুরু হলে কেন সাড়ে ৯টায় প্রবেশ করতে হবে? তাহলে সাড়ে ৯টায় পরীক্ষা শুরু করলেই হয়। মন্ত্রণালয় প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে না পেরে শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলছে।’

Manual2 Ad Code

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শাখার একজন শিক্ষার্থীর বাবা আবদুল আলীম বলেন, ‘আমার বাসা খিলগাঁও। পরীক্ষা দিতে আমার সন্তানকে প্রতিদিন মগবাজারে আসতে হবে। এমনিতেই বাসা থেকে স্কুলে আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। এখন যদি সাড়ে ৯টায় কেন্দে  প্রবেশ করতে হয় তাহলে কমপক্ষে সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে বের হতে হবে। তাহলে সকালের প্রস্তুতিটাই তো নিতে পারবে না।’

তবে গতকালের সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই পরীক্ষার্থীদের নিজ আসনে বসতে হবে। এরপর আর কোনোভাবেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

এবার সারা দেশে প্রথমবারের মতো অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যদিও গত বছর এসএসসি পরীক্ষার আগেই তা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে তাতে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলে সারা দেশের পরীক্ষাই ঝুঁকিতে পড়বে।

Manual8 Ad Code

আজ শুক্রবার থেকে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে সভায় উপস্থিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

Manual3 Ad Code

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যদিও এসএসসি পরীক্ষা শুরুর তিন দিন আগে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কিন্তু বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাত দিন আগে থেকেই নতুন করে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেন বলেন, ‘কোথাও প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে। পরীক্ষা শেষের পরেও যদি প্রমাণ পাওয়া যায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তবে সে পরীক্ষাও বাতিল করা হবে। অভিন্ন প্রশ্নপত্র দিয়ে সারা দেশে পরীক্ষা আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা একটি বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগোচ্ছি। সব স্থানে মানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করে সুষ্ঠুভাবে এসএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন করাটাই এখন বড় লক্ষ্যমাত্রা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কোনো ধরনের আপস করতে রাজি নই আমরা। কেউ যদি দায়িত্বে অবহেলা বা কোনো ধরনের অনিয়ম করে তাকেই অপরাধী বলে গণ্য করা হবে।’

Manual7 Ad Code

সভায় শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘কেন্দ্রসচিব একটি সাধারণ ফোন (স্মার্টফোন নয়) সঙ্গে রাখতে পারবেন। অন্য কেউ কোনো ধরনের মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখতে পারবে না। আমরাও পরীক্ষাকেন্দ্রে গেলে মোবাইল ফোন বাইরে রেখে যাব।’

সভায় উপস্থিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম পরিচালক নাজমুল আলম বলেন, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ট্রেজারি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেক বড় গাফিলতি হয়। সেখান থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ফেসবুকে প্রশ্নপত্র বিক্রির বিজ্ঞাপন পাওয়া গেছে। আমরা তা নিয়ে কাজ করছি।’

এ ছাড়া প্রশ্নপত্র বিতরণের সময় অনেক কেন্দ্রসচিব উপস্থিত না হয়ে তাঁদের প্রতিনিধিদের পাঠান। এটি বন্ধ করে কেন্দ্রসচিবের উপস্থিতি নিশ্চিত, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে নিয়োজিত রাখা, ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে অধিক প্রচারণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা ও বিভাগের কর্মকর্তারা।

এ ছাড়া সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাহানারা বানু, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..