সিলেট ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:২৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২০
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: সিলেটের গোয়াইনঘাটে টমটম চালক কিশোর শাহীন আহমদ (১৪) খুনের রহস্য উদঘাটন ও মূল হোতা আবুল বশরকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নিহত কিশোর শাহীন আহমদের মাতাপিতা ও পরিবারের সদস্যরা।
৭ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিকেলে উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের নিয়াগুল গ্রামে নিহত কিশোর শাহীন আহমদ বাড়ি সরেজমিন গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান নিহত কিশোর শাহীনের পরিবার। এসময় দূর্বৃত্তদের হাতে নির্মম ভাবে খুন হওয়া কিশোর শাহীন আহমদের পিতা দিনমজুর আবুল কাসেম, মাতা, মরিয়ম বেগম, ৬ষ্ট শ্রেনীতে পড়ুয়া বোন ফারজানা বেগম, ৩য় শ্রেনীতে পড়ুয়া হেলেনা বেগম পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ওই প্রতিবেদকের প্রতি বিনয়ের সাথে আকুতি – মিনতি করেন। ওই সময়ে নিহত শাহীনের ১ম শ্রেনীতে পড়ুয়া বোন ইমরানা বেগম এবং শিশু শ্রেনীতে পড়ুয়া ঝুমা বেগম উপস্থিত ছিলেন।
নিহত কিশোর শাহীন আহমদের মা মরিয়ম বেগম ও বাবা আবুল কাসেম বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন সময়ে ছোট -বড় হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। আমরা জানি ওইসব হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনে বছরের পর বছর পার পরও মূল রহস্য অনেক সময় উদঘাটন সম্ভব হয়না। তারা বলেন, আমরা অতিদরিদ্র মানুষ ঠিকমত পেট ভরে তিন বেলা ভাত খেতে পারিনা। তাই আমাদের সন্তান শাহীন আহমদ খুনের পর আমরা মনে করেছিলাম আমাদের টাকা নেই। হয়তোবা আমাদের সন্তানদের খুনিদের পুলিশ ধরবেনা। আমাদের এ ধারণাকে ভুল প্রমান করে দিলেন পুলিশ। আমাদের সন্তান শাহীন আহমদ খুনের ঘটনার দুই দিনের মধ্যেই হত্যার মুল রহস্য উদঘাটন ও মূল হোতা বশরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ আমাদেরকে চিরঋণী করেছেন। ফলে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ নজরুল ইসলাম এবং শাহীন আহমদ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদসহ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ তায়ালা যে পুলিশ বাহীনির সম্মান আরো বৃদ্ধি করেন।
উল্লেখ্য,সিলেটের গোয়াইনঘাটের গুরকচি এলাকায় টমটম চালক কিশোর শাহিন আহমদ কে নৃশংস খুন হন। ঘটনাযর মূল হোতা আবুল বাশারকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।গ্রেফতারকৃত আবুল বশর গোয়াইনঘাট থানার গুরুকচি পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত মদরিছ আলীর ছেলে।গত ২ সেপ্টেম্বর (বুধবার) সন্ধায় আসামী বশর কে সিলেট শহরে পাঠানটুলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আসামী বশর টমটম চালক শাহিন খুনের কথা অকপটে স্বীকার করে,পরে রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতে হাজির করলে সে খুনের ঘটনায় জড়িত মর্মে ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।উল্লেখ্য গত ৩০ আগস্ট রাত দশটার পর থেকে গোয়াইনঘাট থানাধীন নিয়াগুল গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে টমটম চালক শাহিন আহমদ (১৪) টমটম চালাতে গিয়ে নিঁখোজ হয়। অনেক খুজাখুজি করার পর ৩১ আগস্ট ভোর বেলা গুরুকচি বাজার সংলগ্ন কাটাখাল নামক ব্রিজের নীচে তার লাশ পাওয়া যায়। এরকম নৃশংস ঘটনার সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম ঘটনার রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনায় জড়িত আসামী গ্রেফতারের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন সহ আসামী গ্রেফতারে থানা পুলিশ,ডিবি সহ জেলার একাদিক টিম কাজ শুরু করে। এ ঘটনায় মৃতের বাবা আবুল কাশেম বাদী হয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর গোয়াইনঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।এক পর্যায়ে গোয়াইনঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আহাদ এর নেতৃত্বে পুলিশ খুনের ঘটনায় জড়িত মূল হোতা বশর কে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামী বশর খুনের ঘটনার বর্ননা দেয়। টমটমের ব্যাটারি চুরি করার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিত ভাবে কিশোর শাহিন কে আসামী বশর সহ তার সহযোগীরা খুন করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩০ আগস্ট সন্ধার পরে আসামী বশর সহ তার সহযোগীরা গোয়াইনঘাট থানাধীন গরুকচি বাজার থেকে বঙ্গবীর যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিকটিম শাহিনের টমটমে ভাড়ায় উঠে। পরে কিছুদূর যাওয়ার পর নির্জন স্থানে পস্রাবের কথা বলে আসামীরা টমটম থামাতে বলে এবংনাইলনের রশি দিয়ে গলায় পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে টমটম চালক কিশোর শাহীন কে হত্যা করে লাশ পার্শ্ববর্তী ডুবায় ফেলে দেয়। পরে টমটম থেকে চারটি ব্যাটারি খুলে নিয়ে যায়।রবিবার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ম আদালতের বিচারক নওরীন করিমের নিকট আসামী বশর কে উপস্থাপন করলে সে ফৌ:কা:বি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমুলক জবাব দেয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd