সিলেট ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০
সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশা :: সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গুলোর হাজার হাজার পাথর, বালু ব্যবসায়ী ও হাজার হাজার শ্রমিকদের রক্ষা করুন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি একজন গণতন্ত্রের মানস কন্যা, মাদার অফ হিউম্যানিটি সফল রাষ্ট্রনায়ক। আপনার নেতৃত্বে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে যাচ্ছে।
চলমান করোনাভাইরাসে আপনার প্রশংসনীয় উদ্যোগে এদেশের মানুষ স্বস্তিতে আছে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ আমরা সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলার পাথর বালু ও শ্রমিকরা স্বস্তিতে নেই, ভালো নেই। বড় অসহায় হয়ে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনি জানেন সিলেট অঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকে যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর, বালু, কয়লা, চুনাপাথর ও গ্যাস আহরিত হচ্ছে। এ অঞ্চলের পাথর ও বালু বুয়েটের পরীক্ষায় মানসম্মত। সিলেটের চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে তা সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ব্যবসার সাথে জড়িত ২০-৩০হাজার ব্যবসায়ী ও আট দশ লাখ শ্রমিক। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় গত কয়েক বছর ধরে নানান অজুহাতে সিলেটের অধিকাংশ বালু পাথর কোয়ারী বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংসের অজুহাতে প্রাকৃতিক সম্পদকে বন্দি রাখা হয়েছে।
ফলে আগের মতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখন আর সিলেটে আসছে না। আমরা বার বার যন্ত্র ছাড়া পরিবেশ রক্ষা করে পাথর বালু আহরণের দাবি করে আসলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন আমলা নিচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জেনে আশ্চর্য হবেন যে সিলেটের একমাত্র সচল ও বৈধ কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে হাজারো ব্যবসায়ী পাথর ষ্টক করে রাখছেন। সরকারের রাজস্ব দিয়ে করোনা ভাইরাস শুরুর আগে কয়েক কোটি ঘনফুট পাথর স্টক করা হয়েছে। করোণায় সরকারি নির্দেশনার মধ্যে আমরা পাথর বিক্রয় বন্ধ করে দেই।
কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ করে আমরা এখন পথে বসেছি। করোনার কারণে দুঃখজনক হলেও সত্য মহামারীতে পরিবেশ ধ্বংসের অজুহাতে গত ১০ থেকে ১৭ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক প্রায় এক কোটি ঘনফুট পাথর জব্দ করে, এমনকি তাড়াহুড়া করে গত ২১ জুলাই দুই দফা নিলাম ডেকে বিক্রয় করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের অতি উৎসাহিত ভূমিকায় সিলেটের সাধারণ মানুষ ক্ষুদ্ধ। আমরা এ নিয়ে আইনি মোকাবেলা করে ফল পাচ্ছিনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের মানুষ আপনার ভক্ত ও অনুরাগী। অতীতের নির্বাচনগুলো যার প্রমাণ। ভবিষ্যতে আপনার নেতৃত্ব চায়এ জনপদের মানুষ। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আপনার হস্তক্ষেপে সিলেটের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা পাবে, পাশাপাশি আমরা পাথর, বালু ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা করোনাকালে মানবেতর জীবন যাপন থেকে রক্ষা পাবো। কারণ গত রমজান মাস থেকে পাথর ও বালু ব্যবসা সাথে জড়িত লাখ লাখ ব্যবসায়ী ও শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছে। গত ঈদে ও এই অবস্থার মধ্যে আমাদের অতিবাহিত করতে হয়েছে। এই অবস্থায় আপনি মানবতার দিশারী মাদার অফ হিউম্যানিটি জাতির জনকের কন্যা হিসাবে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন এমন প্রত্যাশা করছি। কারন আমরা আপনার কাছে সরাসরি দেখা করার কোন সুযোগ নেই, তাই গণমাধ্যম দ্বারা আপনার সহযোগিতা চাই। আপনার মঙ্গল কামনা করি ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন এই মহামারী কালে।
এছাড়াও গত ৩০ শে আগস্ট নিজেদের মজুদকৃত পাথর উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও অপসারণ করতে না দেয়ায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মোহাম্মদ কামাল হোসেনের নালিশ করেছেন পাথর ব্যবসায়ীরা। পরে সচিবের কাছে কাছে স্মারকলিপি দেন পরিষদের নেতৃবৃন্দ। স্মারকলিপিতে তারা জানান, বৃহত্তর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ছাতকসহ এ অঞ্চলের প্রায় ১০ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর বসবাস।
ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দি, লোভা, উৎমা, শ্রীপুরসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাথর কোয়ারিতে লাখো শ্রমজীবি মানুষ পাথর আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এখান থেকে সরকারের রয়েলিটি বাবদ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। এছাড়াও আহরিত এ পাথর বিপননের সাথে হাজারো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্টোন ক্রাশার মিল মালিক, পাথর ব্যবসায়ী, ট্রাক-ট্রাক্টর শ্রমিক, বার্জ, কার্গো, নৌকা মালিক-শ্রমিক সবাই পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।
তারা জনান, প্রতিবছর উজান থেকে লক্ষ লক্ষ টন পাথর নেমে এসে কোয়ারি অঞ্চল পরিপূর্ণ হয় এবং এ পাথর শ্রমিকরা উত্তোলন করে দেশের নির্মাণ শিল্পে যোগান দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় কয়েক বছর ধরে পাথর কোয়ারি সমূহে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়া এ অঞ্চলের লাখো মানুষ পরিজন নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। হাজারো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করে আজ দেউলিয়া। নিজ দেশে উন্নতমানের পাথর রেখে। বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় করে পাথর আমদানির মাধ্যমে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে দেশের অর্থনীতির। সিলেটে পাথরের বিশাল ভাণ্ডার রেখে দেশের রেল লাইনে আজ ব্যবহার হচ্ছে ইটের খোয়া, যার ফলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দুর্ঘটনার।
এমতাবস্থায় সিলেটের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে রক্ষা এবং এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার স্বার্থে, দেশের নির্মাণশিল্প ও অর্থনীতির স্বার্থে এখানকার পাথর কোয়ারিসমূহে পরিবেশসম্মতভাবে পাথর আহরণের সুযোগ প্রদানে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের দাবি জানিয়েছেন মালিক-শ্রমিকসহ অন্যান্যরা। সিলেট সফররত সমন্বয় ও সংষ্কার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেন কানাইঘাটের লােভছড়া পাথর কােয়ারি পরিদর্শনে গেলে সেখানে হাজারও ব্যবসায়ী ও পাথর শ্রমিক তাকে বহণকারী নৌকা ঘেরাও করে তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। সচিব আশ্বস্ত করেন তাদের এ সমস্যা সামাধানের।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd