দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বে টালমাটাল জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০১৯

দেবর-ভাবির দ্বন্দ্বে টালমাটাল জাতীয় পার্টি

Manual1 Ad Code

সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই তার চেয়ার নিয়ে হঠাৎ আলোচনার ঝড় উঠেছে। দেবর জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না বিরোধীদলীয় উপনেতা, এরশাদের স্ত্রী ও পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। তার এ নারাজির পক্ষে মত দিয়েছেন পার্টির ৯ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য।

গত সোমবার বিরোধীদলীয় উপনেতার প্যাডে হাতে লেখা এ সংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। তাতে বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদের স্বাক্ষরসহ অন্য ৯ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর আলোচনা শুরু হয়। হাতে লেখা প্রেস বিজ্ঞপ্তির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়।

এমন আলোচনা বিতর্কের মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার জাপা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জিএম কাদের দাবি করেন, বিবৃতিটি কাঁচা হাতের লেখা। এটা বিশ্বাসযোগ্য কিংবা গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরো বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমাদের পরিবারে পিতৃতুল্য আর বেগম রওশন এরশাদ মায়ের মতো। কোনো সমস্যা থাকলে আমরা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করব।

Manual6 Ad Code

তবে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য গতকাল বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, গঠনতন্ত্রের ধারা অনুসরণ না করেই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়েছে। যা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৈধ নয়। প্রয়াত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় জিএম কাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি চেয়ারম্যান হননি এখনো।

গণমাধ্যমে পাঠানো রওশন এরশাদের স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপিতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের মারফত জানতে পেরেছি, জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা আদৌ কোনো যথাযথ ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব পালনকালে পার্টির গঠনতন্ত্র ধারা ২০ (২) এর খ-এ দেয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। যথা- ‘মনোনীত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়ামের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবেন। চেয়ারম্যানের অবর্তমানে ধারা ২০ (২) এর ‘ক’ উপেক্ষা করা যাবে না।

Manual5 Ad Code

বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী চেয়ারম্যান না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।

জানতে চাইলে বিজ্ঞপ্তিতে নাম উল্লেখ থাকা প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চেয়ারম্যানের মৃত্যুর শোক না কাটতেই চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে কেন। আর এটা তো গঠনতন্ত্রবিরোধী। গঠনতন্ত্র মেনে প্রেসিডিয়াম ফোরামে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ ফোন ধরেননি।

তবে জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে মানার আকস্মিক এমন আপত্তির কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না পার্টির বেশিরভাগ নেতাকর্মী। কেননা, ঘটনার দুদিন আগেও গত ২০ জুলাই এরশাদের বড় ছেলে রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদসহ কয়েকজন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে জিএম কাদের তার ভাবি রওশন এরশাদের গুলশান-২ এর বাসায় যান। সেখানে তারা একসঙ্গে দুপুরের খাবারও খান। পার্টির বর্তমান পরিস্থিতি, আগামীর কর্মসূচি ও পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলাপ-আলোচনা করেন।
সন্তানতুল্য দেবর জিএম কাদেরকে আশীর্বাদও করেন রওশন এরশাদ। পার্টির দুই শীর্ষ নেতা ভাবি-দেবরের মধ্যে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে হঠাৎ ছেদ ঘটানোকে মানতে পারছেন না অনেক নেতা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই গত এপ্রিল মাসে জিএম কাদেরকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন এরশাদ। সে সময় এক সাংগঠনিক নির্দেশনায় এও বলেন, তার অবর্তমানে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন জিএম কাদের। তবে ওই সময় থেকেই রওশন এরশাদ অনুসারীরা কিছুটা পিছুটান দিয়েছিলেন। কোনো কর্মসূচিতে জিএম কাদেরের পাশে কাউকে দেখা যাচ্ছিল না।

Manual1 Ad Code

গত ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যু হয়। তার দাফন নিয়েও নানা ঘটনা ঘটে। শেষ অবধি রংপুরে দাফন করা হয় রওশন এরশাদের মতামতেই। এ ঘটনার চারদিন পর ১৮ জুলাই পার্টির বনানী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে পূর্ণাঙ্গ চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন মহাসচিব মসিউর রমহান রাঙ্গা। পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেতা এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের অনুপস্থিতিতে তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, মৃত্যুর আগে এরশাদই এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছেন বলে দাবি করেন।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..