বড়লেখায় নারী আইনজীবী আবিদা হত্যার দায় স্বীকার তানভীরের

প্রকাশিত: ৫:১১ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০১৯

বড়লেখায় নারী আইনজীবী আবিদা হত্যার দায় স্বীকার তানভীরের

Manual3 Ad Code

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় চাঞ্চল্যকর নারী আইনজীবী আবিদা সুলতানার (৩৫) খুন রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। আবিদা হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা মসজিদের ইমাম তানভীর আলম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।

রিমান্ডে তানভীরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বড়লেখা থানার পুলিশ শ্রীমঙ্গল থেকে আবিদার ব্যবহৃত মুঠোফোন দুটি উদ্ধার করে। ঘটনার পর তিনি মুঠোফোনগুলো নিয়ে পালিয়েছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার অন্তত চার মাস আগে আবিদার প্রয়াত বাবার তৈরি করা মসজিদে ইমাম হিসেবে আসে তানভীর আলম। আবিদাই তানভীরকে এখানে এনেছিলেন। নিজেদের বাসায় দুটি কক্ষ ভাড়ায় দেন তানভীরকে। ওই বাসায় তানভীর তার স্ত্রী, মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে বসবাস করত। ঘটনার মাস দেড়েক আগে থেকে বিভিন্ন কারণে ভাড়াটে মসজিদের ইমাম তানভীরের সাথে ঝগড়া হয় আবিদার। আবিদার ছোট বোনের সঙ্গেও ঝগড়া হয়। ঝগড়ার পর থেকে তানভীরকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন আবিদা।

মসজিদের দায়িত্ব ও বাসা ছেড়ে দেওয়ার চাপে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন তানভীর আলম। নিচ্ছিলেন বাসা ছাড়ার প্রস্তুতিও। ঘটনার দিন চাল নেওয়ার জন্য আবিদা বাসায় গিয়েছিলেন। এই সময় তানভীরের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি আবিদার মাথায় আঘাত করেন। এরপরে আবিদার মুখ ও গলা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে হত্যা করেন।

তবে রিমান্ডে বলা তানভীরের কথাগুলো সঠিক কি না তা যাচাই করে দেখছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার নেপথ্যে অন্য কেউ যুক্ত রয়েছে কিনা, কিংবা অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

Manual3 Ad Code

ঘটনার দিন থেকে দ্রুত হত্যার রহস্য উদঘাটনে বড়লেখা থানা পুলিশের বিভিন্ন গ্রুপ মাঠে কাজ করছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এমনটি জানিয়েছেন, বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক।

Manual4 Ad Code

২৬ মে রোববার মধ্যরাতে বড়লেখায় ঘরের ভেতর থেকে আবিদা সুলতানার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সোমবার রাতে বড়লেখা থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন আবিদার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন- আবিদা সুলতানার বাবার বাসার ভাড়াটিয়া তানভীর আলম (৩৪), তানভীরের ছোট ভাই আফছার আলম (২২), স্ত্রী হালিমা সাদিয়া (২৮) এবং মা নেহার বেগম (৫৫)। তাদের স্থায়ী ঠিকানা সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ছিল্লারকান্দি।

Manual7 Ad Code

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে আসামীদের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। প্রধান আসামী তানভীর আলমের ১০ দিন এবং তাঁর স্ত্রী সাদিয়া ও মা নেহার বেগমের আটদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘মামলার প্রধান আসামি তানভীরসহ তিনজন রিমান্ডে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার মোটিভ সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই করা হচ্ছে। রিমান্ডে তানভীরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের দুটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তানভীর জড়িত থাকার বিষয়টি সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত।’

তদন্ত কর্মকর্তার ঘটনাস্থল পরিদর্শন:
আবিদা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম বুধবার দুপুরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রধান আসামি তানভীর যে মসজিদে ইমামতি করতেন সে মসজিদ এবং নিহতের বাবার পুরাতন বাড়ি ঘুরে দেখেন। ঘটনা নিয়ে আশপাশের বাড়ির বাসিন্দাদের সাথে কথা বলেন।

কে এই তানভীর:
সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ছিল্লারকান্দি গ্রামের ময়নুল ইসলামের ছেলে তানভীর আলম। স্থায়ী ঠিকানা সিলেটের জকিগঞ্জ হলেও কয়েক বছর ধরে বড়লেখা উপজেলার চরকোনা গ্রামে বসবাস করত। নিজের এলাকায় বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত ছিলেন এই তানভীর। খোঁজ নিয়ে এমনটি জানা গেছে। মাত্র ৪ মাস আগে নিহত আবিদা সুলতানার পিতার তৈরি করা পারিবারিক মসজিদের ইমাম হিসেবে তিনি চাকরি নেন।

এর আগে বড়লেখার বরইতলি নামক এলাকায় একটি মসজিদে ইমামতি করলেও মসজিদ কমিটি সেখান থেকে বের করে দেয়। নতুন কর্মস্থল মসজিদে যোগদানের পর স্ত্রী, মা ও ছোটভাইকে নিয়ে নিহত আবিদা সুলতানার বাবার বাসায় নামমাত্র ভাড়ায় বসবাস করতেন।

পুলিশ, নিহতের পরিবার, মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের প্রয়াত আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়ে। তার স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি দ্বিতীয় মেয়ের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে থাকেন। মেয়েদের মধ্যে আবিদা সুলতানা (৩৫) সবার বড়। তিনি মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। আবিদার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে মৌলভীবাজার শহরে বসবাস করতেন। ছুটির দিনে বাবার বাড়ি দেখাশোনা করতে সেখানে যেতেন।

রোববার (২৬ মে) আবিদা সুলতানা বোনের বাড়ি বিয়ানীবাজার ছিলেন। ওই দিন (রোববার) সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টায় জরুরি প্রয়োজনে তিনি বাবার বাড়িতে আসেন। বাবার বাড়ি আসার পর বিকেল পাঁচটার দিক থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর আবিদা সুলতানার স্বামী ও বোনরা তাকে খুঁজতে বাবার বাড়ি মাধবগুল গ্রামে আসেন। বাড়িতে এসে তারা ঘরের কক্ষ বন্ধ দেখতে পান। চার কক্ষবিশিষ্ট বাসার দুই কক্ষে আবিদা সুলতানা ও তার বোনেরা বেড়াতে আসলে থাকেন। বাকি দুটোতে ভাড়া থাকতেন তানভীর আলমের পরিবার। তিনি তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম। এ সময় তানভীর আলমের পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তারা ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের এক আত্মীয় বাড়িতে ছিলেন। পরে ভাড়াটেদের কাছ থেকে চাবি এনে ওই দিন (গত রোববার) রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘরের দরজা খুলে দেখে আবিদা সুলতানার মৃতদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে।

Manual2 Ad Code

পুলিশ ওই দিনই তানভীর আলমের স্ত্রী ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তানভীর আলমকে সোমবার (২৭ মে) দুপুরে শ্রীমঙ্গলের বরুণা এলাকা থেকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় আবিদা সুলতানার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া আটক তিনজনসহ চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে বড়লেখা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আটককৃতদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..