এশিয়ায় প্রথম ফস্টারিং এওয়ার্ড পেলেন সিলেটের আফিয়া

প্রকাশিত: ৭:২৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০১৮

এশিয়ায় প্রথম ফস্টারিং এওয়ার্ড পেলেন সিলেটের আফিয়া

Manual1 Ad Code

সিলেট :: টাওয়ার হ্যামলেটসের একজন ফস্টার কেয়ারার, যিনি গত ১৩ বছরে প্রায় ৩০ জন শিশুকে নিজ ঘরে মাতৃস্নেহে প্রতিপালন করার পাশাপাশি শত শত ফস্টার কেয়ারারকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন, তিনি পেয়েছেন অত্যন্ত মর্যাদাকর ফস্টারিং নেটওয়ার্ক’স প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড। ফস্টারিং বা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখায় আফিয়া চৌধুরীকে অত্যন্ত মর্যাদাকর এই সম্মানে ভ‚ষিত করা হয়। ২৪ অক্টোবর বুধবার লন্ডনের ড্রাপারস হলে ইউকে’র শীর্ষস্থানীয় ফস্টারিং চ্যারিটি দ্যা ফস্টারিং নেটওয়ার্ক এর উদ্যোগ্যে আয়োজিত ফস্টারিং এওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানে আফিয়া চৌধুরীর হাতে এই এওয়ার্ড তুলে দেন শিশু বিষয়ক মন্ত্রী নাদিম যাহাউই। আফিয়া চৌধুরী পূর্বে এশিয়ার কেই মর্যাদাকর ফস্টারিং নেটওয়ার্ক’স প্রেসিডেন্টস এওয়ার্ড পাননি। আফিয়া চৌধুরীর জš§স্থান দক্ষিন সুনামগঞ্জের দরগা পাশা গ্রামে।

আফিয়া চৌধুরীর স্বামী কামরুজ এবং ৪ ছেলেকে সাথে নিয়ে আফিয়া চৌধুরী গত ৭ বছর ধরে ৩ ভাইবোনকে এক সাথে প্রতিপালন করছেন। শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যাতে পারিবারিক পরিবেশে বসবাস করতে পারে, সেজন্য তারা তাদের ঘরকে বর্ধিত করেছেন। আফিয়া চৌধুরী শুধু যে মাতৃস্নেহে এই তিন বাচ্চাকে প্রতিপালন করছেন, তা নয়, অসংখ্য শিশুর জীবনে তিনি মায়ের স্নেহ মমতা দিয়েছেন এবং টাওয়ার হ্যামলেটস’ ফস্টার কেয়াররাস এসোসিয়েশনের চেয়ার হিসেবে অন্যান্য ফস্টার ফ্যামিলি বা শিশু প্রতিপালনকারী পরিবারগুলোকেও সহকর্মী হিসেবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য পরিচর্যাকারীদের কাছ থেকে তিনি গত এক বছরে ৪৬০টিরও বেশি ফোন কল পেয়েছেন। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ফস্টার এম্বাসেডর হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে নতুন ফস্টার কেয়ারার নিয়োগে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

Manual4 Ad Code

এওয়ার্ড লাভের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আফিয়া চৌধুরী বলেন, ‘দ্যা ফস্টারিং নেটওয়ার্ক এর কাছ থেকে এমন সম্মানজনক পুরস্কার পাওয়ায় আমি ভীষণ খুশি এবং সম্মানিত বোধ করছি। আমি টাওয়ার হ্যামলেটসকে ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা বছরের পর বছর ধরে আমার কথা শুনে, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সহযোগিতা দিয়েছে এবং অসাধারণ কিছু বাচ্চচাকে প্রতিপালন করার সুযোগ দিয়ে আমাকে ভাগ্যবান হওয়ার সুযোগ দিয়েছে এবং এই এওয়ার্ডের জন্য আমার নাম মনোনীত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বাচ্চচাদের জীবনে পরিবর্তন আনতে আমি ফস্টারিংয়ে এসেছিলাম, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারাই আমার জীবনে পরিবর্তন এনেছে। যারা ফস্টার কেয়ারার হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন, আমি তাদেরকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি। নানা কারণে অসহায় হয়ে পড়া বাচ্চাদের প্রতিপালন জীবন বদলে দেয়ার অভিজ্ঞতা, যা আমি আর কোন কিছুর বিনিময়ে পরিবর্তন করবো না।’

Manual8 Ad Code

দ্যা ফস্টারিং নেটওয়ার্ক এর প্রেসিডেন্ট লিবিধ্ব থ্রনহিল বলেন, ‘শুধু এই বছরেই সারা দেশে নতুন ৮ হাজার ফস্টার পরিবার দরকার। বিশেষ করে ভাইবোনকে একসাথে লালন পালনে আগ্রহী ফস্টার পরিবারের প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। মুসলিম কমিউনিটি থেকে আরো অধিক সংখ্যক মানুষ ফস্টার কেয়ারিংয়ে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের আরো অনেক কিছু করতে হবে। ফস্টার কেয়ারার হিসেবেই শুধু নয়, এই কাজে সম্পৃক্ত হতে অন্যদের উ্সাহিত ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রেও আফিয়া চৌধুরী একজন অনুকরণীয় মডেল। প্রেসিডেন্টের এওয়ার্ড দিয়ে তাকে সম্মানিত করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’
আফিয়া চৌধুরীকে মনোনয়নকারী টাওয়ার হ্যামলেটসের ফস্টারিং টিম ম্যানেজার, ইশারা তেওয়ারি বলেন, ‘এটা বলা হয়ে থাকে যে, শিশুদের লালন পালনের বিষয়টি আফিয়ার রক্তের সাথে মিশে আছে। তিনি সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ একজন ফস্টার কেয়ারার। তিনটি শিশুকে তিনি সযতেœ লালন পালন করায় তারা যেমন আনন্দের সাথে বড় হচ্ছে, তেমনি তাঁর এই কাজের প্রতি আবেগ, আত্মোসার্গ ও ইতিবাচকতায় ভীষণভাবে উপকৃত হচ্ছে বাচ্চাদের দেখভাল করার পুরো জগৎটি। টাওয়ার হ্যামলেটসের জন্য এবং সার্বিক অর্থে ফস্টারিংযের ক্ষেত্রে তিনি হচ্ছেন এক অমূল্য সম্পদ।‘
আফিয়া চৌধুরীর এই সাফল্যে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে নির্বাহী মেয়র জন বিগস বলেন, ‘টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রতিটি বাসিন্দার জন্য আফিয়া হচ্ছেন অনুপ্রেরণাদায়ক। বিগত বছরগুলোতে তিনি তাঁর ঘরকে ৩০ জনের মতো শিশুর জন্য ভালোবাসার আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলেছেন এবং আমাদের এই বারাকে উন্নত জনপদে পরিণত করতে ভ‚মিকা রেখে চলেছেন। তিনি অত্যন্ত মর্যাদাকর এই এওয়ার্ড লাভ করায় আমি খুবই আনন্দিত। টাওয়ার হ্যামলেটসে আফিয়া ও তাঁর স্বামী কামরুজের মতো মানুষদের পেয়ে আমরা সত্যিকার অর্থেই ভাগ্যবান। আমি আশা করছি, তাদের এই কাহিনী ফস্টার কেয়ারার হতে অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে। আমাদের অনেক শিশু আছে যাদের ফস্টার হোম দরকার।‘
২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানে আফিয়া চৌধুরী সহ ২১ জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে সম্মাননা জানানো হয়।

Manual7 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..