সিলেট ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:০৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৫
মো. আবুল হোসেন :: সিলেটের গোলাপগঞ্জের গোলাপ ডা. নূরুল হুদা নাঈম। যার মানবিক ব্যবহারের মধ্যে সত্যিকারের ভালোবাসা ও সততায় মুগ্ধ হতে হয়। তিনি উদার মানবদরদি সামাজিক মানুষ প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. নূরুল হুদা নাঈম। তার মনের দরজাটা যেমন উদার, খোলামেলা, তেমনি অন্দর-সদর দরজাও উন্মুক্ত সবার আনাগোনায়। তিনি যেন পূর্ণিমার পূর্ণ জোছনার আলোর মতো চিকিৎসাসেবায় আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। একজন চিকিৎসক মানুষকে সেবা করার যত বেশি সুযোগ পান, অন্য পেশাজীবীরা তা পান না। তাই চিকিৎসককে আগে ভালো মানুষ হতে হয়, তাহলেই তিনি হতে পারেন আদর্শিক, মানবিক একজন চিকিৎসক।
একজন চিকিৎসকের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রোগীকে সম্মান করা। কোনোরূপ তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করা। বন্ধুসুলভ আচরণ করা। একজন চিকিৎসককে স্বভাবতই সৎ, নিঃস্বার্থ, অঙ্গীকারবদ্ধ, দেশপ্রেমিক, দায়িত্বশীল ও দয়ালু হতে হয়। রোগীকে মানবিক মন নিয়ে সেবা করে তার দুঃখ-বেদনা অনুভব করতে পারেন। এমনই একজন সদালাপী, মানবিক চিকিৎসক ডা. নূরুল হুদা নাঈম তার আন্তরিকতা আর আলাপনেই রোগী অনেকটা নির্ভরতা খুঁজে পান। সুস্থ হয়ে ওঠার মনোবল ফিরে পান। তিনি রোগীকে আপন করে নিতে পারেন। শুধু রোগী নয়, মানুষকে আপন করে নেওয়ার এক অমোঘ শক্তি রয়েছে তার, যা সবাইকে মুগ্ধ করে।
ডা. নূরুল হুদা নাঈম একজন সক্রিয় চিন্তার মানুষ, শিক্ষাজীবনে তিনি একটি মেডিকেল কোচিং সেন্টারের পরিচালক থাকার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতেও বেশ সক্রিয় ছিলেন। সে সময়ে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় তাঁর অনেক লেখা, গল্প ও নিবন্ধ প্রকাশ পায়। এখনও তিনি সমাজসচেতনতামূলক লিখনি অব্যাহত রেখেছেন। এই সক্রিয় চিন্তার মানুষ তার আবেগকে রাখেন বুদ্ধির শাসনে, ইতিহাস ও সময়কে দেখেন বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিতে, সংকটে-সন্তাপে থাকেন স্থিরচিত্ত। এই মানুষের কাছে মানবিকতা আর সামাজিক অংশগ্রহণ গুরুত্ব পায়। এককালে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শিক্ষিত জনপদ সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর। সেই ভাদেশ্বরের খমিয়াপাতন গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ডা. নূরুল হুদা নাঈমের জন্ম। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক ও শিক্ষিকার ঘরে জন্ম নেয়া ডা. নাঈমের লেখাপড়ার হাতেখড়ি মায়ের কাছে। অল্প বয়সেই গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেই পাড়ি জমান উপজেলার মীরগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে। ১৯৮৮ সালে ওই উচ্চবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন সিলেট এমসি কলেজে। ১৯৯০ সালে এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে এমবিবিএস ও ইন্টার্নী করে ঢাকায় বাংলাদেশ কলেজ ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জন থেকে এম.সি.পি.এস ও এফ.সি.পি.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ভারত ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ‘লেজার সার্জারী ও হেডনেক ক্যান্সার সার্জারী’ বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করেন। সেসব দেশে একজন অনন্য ও মেধাবী প্রশিক্ষণার্থীর পরিচয় দেন তিনি।
মা-বাবার সংসারে ৬ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে ৫ম ডা. নূরুল হুদা নাঈম বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ওসমানী হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগের হেডনেক সার্জন।
সিলেটের প্রথম ইএনটি লেজার সার্জারি ও এন্ডোসকোপিক সার্জারির পাওনিয়ার-এর প্রবর্তক ডা. নাঈম সাধারণ অর্থের কোন ডাক্তার বা চিকিৎসক নন, তিনি সর্বাধুনিক একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানীও। যেমন জ্ঞান তেমন মন নিয়ে মানব সেবার ব্রতী হয়েই তার জীবন চলা। ‘ডাক্তার নয় জীবন্ত কসাই’ দেশের চিকিৎসাঙ্গনে বহুল প্রচলিত এ অপবাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন তিনি। প্রমাণ করেছেন ডাক্তাররা মূলত কসাই নন এবং চিকিৎসাবিদ্যা আসলে কোন বাণিজ্যিক পেশা নয়। মূলত এটা মানব সেবা ও মানবপ্রেমে ব্রতী হওয়ার এক জ্বলন্ত শিক্ষা, এক জীবন্ত প্রশিক্ষণ।
সরকারি চাকুরি ও যথাযথ দায়িত্বপালনের পাশপাশি সম্প্রতি তিনি সিলেট নগরের কাজলশাহ এলাকায় চালু করেছেন একটি অত্যাধুনিক ইএনটি হাসপাতাল। গরীব দুঃখী রোগীদের অত্যন্ত ব্যবহুল গলার টিউমার, নাকের পলিপাস ও কানের পর্দা জোড়া লাগোনোর মাধ্যমে মানুষকে বেঁচে থাকার সাহস যোগিয়ে থাকেন তিনি। ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক, ফ্রি অপারেশন, ‘আসুন জন্মদিনে একটি ভাল কাজ করি’ এ শ্লোগান নিয়ে ফ্রি কানের পর্দা জোড়া লাগানোর অপারেশন করে থাকেন তিনি। বিশেষ দিবস উপলক্ষে ১০ থেকে ২০ জন রোগীর ফ্রি চিকিৎসা করেন। এছাড়া প্রতিবছর তিনি ৩০ থেকে ৪০ জন রোগীর ফ্রি কানের পর্দা জোড়া লাগনো সহ অন্যান্য সার্জারী গুলো চালিয়ে আসছেন। চিকিৎসা ও মানবসেবায় বিভিন্ন সময়ে একাধিক সংস্থা ও সংগঠন থেকে সম্মাননা পদকও লাভ করেন তিনি।
শুধু চিকিৎসা নয়, সামাজিক কর্মকাণ্ড ও আর্তমানবতার সেবায়ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. নূরুল হুদা নাঈম। প্রতি ঈদে গরীব-দুঃখী মানুষের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন দিবসে র্যালি সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম করে থাকেন।
ডা. নাঈমের স্বপ্ন একটি ‘চ্যারিটেবল ক্যান্সার হাসপাতাল’ স্থাপন। এটা করতে পারলে চিকিৎসা ও মানবসেবার জগতে আরো একধাপ এগিয়ে যাবেন তিনি।
ডা. নূরুল হুদা নাঈম সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। মানবিক গুণাবলি থেকে তিনি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান। শুধু ফ্রি চিকিৎসা দিয়েই নয়, সমাজের অসচ্ছল মানুষের জন্য তিনি নানা সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, বাড়াচ্ছেন। ডা. নূরুল হুদা নাঈম কখনো সংকীর্ণমনাকে প্রশ্রয় দেন না। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘আমরা সবাই মানুষ, মানুষ হয়ে মানুষের ধর্ম মানবতা আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত। যেখানে হিংসা, বিদ্বেষ ও হিংস্রতা থাকবে না। থাকবে না পরচর্চা, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা। থাকবে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ ও দায়িত্ববোধ। মার্জিত এই মানুষটি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংসারের দায়িত্ব থেকে নিজেকে দূরে রাখেননি। সংসারের ছোট্ট ভুবনেও দায়িত্বশীল তিনি। মূল্যবোধ শিখিয়েছেন সন্তানদের। মানবিক মানুষ হয়ে মানবসেবা করার লক্ষ্যেই তাদের গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd