চেয়েছিলেন সরকারি চাকরি, হয়ে গেলেন সরকার

প্রকাশিত: ১:৫১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৯, ২০২৪

চেয়েছিলেন সরকারি চাকরি, হয়ে গেলেন সরকার

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে জায়গা করে নিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের দুই নেতা মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া। উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারে জায়গা করে নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই দুই সমন্বয়ক। দুজনেই বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। দেশের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে রেকর্ড গড়লেন তারা।

Manual3 Ad Code

ইতিহাস বলছে, ৩০ বছর বয়সের কম কেউ কখনোই সরকারের উপদেষ্টা হতে পারেননি। সবসময় প্রবীণ এবং অভিজ্ঞদের জায়গা পেতে দেখা যায়। এবারই প্রথমবারের মতো দুই তরুণ তুর্কী জায়গা পান যাদের বয়স ৩০ বছরের কম। সার্টিফিকেট অনুযায়ী নাহিদ এবং আসিফ দুজনের বয়সেই ২৬ বছর। শুধু উপদেষ্টা নয় সংসদ সদস্যও এত কম বয়সে হওয়ার নজির নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিলের ছেলে নিজাম উদ্দিন জলিল জন ছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য। ওই সময় তার বয়স ছিল ২৭ বছর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাংসদ আজিজুল ইসলাম খন্দকার আজিজ। সেসময় তার বয়স ছিল ২৮ বছর। এছাড়া সদ্য সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ২৯ বছর বয়সে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়ে সারা দেশে আলোচনায় এসেছিলেন।

Manual8 Ad Code

আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া ও মো. নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা। জানা গেছে, আসিফ মাহমুদের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. বিল্লাল হোসেন ও মায়ের নাম রোকসানা বেগম। ২৬ বছর বয়সী এ উপদেষ্টা আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি কলেজের বিএনসিসি ক্লাবের প্লাটুন সার্জেন্ট ছিলেন। আদমজী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী।

এছাড়া আরেক উপদেষ্টা হলেন নাহিদ ইসলাম। তার বয়সও ২৬। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় নাহিদ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিবাহিত। তার বাবা একজন শিক্ষক এবং মা গৃহিনী। নাহিদের ডাকনাম ‘ফাহিম’। তার এক ছোট ভাই রয়েছে। তিনি ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে পড়াশুনা করছেন তিনি।

নাহিদ ও আসিফের ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, বরাবরই তারা মানুষের অধিকার নিয়ে সরব ছিলেন। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথেও যুক্ত ছিলেন এই দুই নেতা। পরবর্তীতে ডাকসু ভিপি নুরুল হল নুরের সাথে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেন তারা। ছিলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের দায়িত্বেও। পরবর্তীতে এই সংগঠন ভেঙে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতারের নেতৃত্বে গড়ে তুলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি নামে একটি ছাত্র সংগঠন। নাহিদ এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব এবং আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ক্যাম্পাসে নানান সময় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে তাদের দেখা যেত।

৪০ হাজারে বিক্রি হয়েছিল গণভবনের সেই বিড়াল৪০ হাজারে বিক্রি হয়েছিল গণভবনের সেই বিড়াল
আসিফ এবং নাহিদ আলোচনায় আসেন এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। নাহিদ এক নম্বর সমন্বয়ক এবং আসিফ চার নম্বর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্বপালনকালে নির্যাতনেরও শিকার হোন তারা। তাদের দুজনকেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। নাহিদের দাবি, ‘অপহরণকারীরা ছিলেন ‘রাষ্ট্রীয় বাহিনী’র সদস্য। যদিও তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা পরেছিলেন সাধারণ পোশাকে। নাহিদ দাবি করেছেন, তার হাত, চোখ বেঁধে অত্যাচার চালানো হয়েছিল। বার বার কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে। নাহিদের ‘অপহরণ’—এর খবর আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল আন্দোলনকারীদের মধ্যে। রাতারাতি তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। একই ঘটনা ঘটে আসিফের ক্ষেত্রেও। পরে তাদের ফেরত দেওয়া হলেও চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় আবারও তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ডিবিতে। পরবর্তীতে আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয় তাদের।

Manual1 Ad Code

তরুণরাও দেশের হাল ধরতে পারে তা প্রমাণ করব: আসিফ মাহমুদ তরুণরাও দেশের হাল ধরতে পারে তা প্রমাণ করব: আসিফ মাহমুদ
নির্যাতনের পরও দমে যাননি তারা। নাহিদ এবং আসিফসহ ৬ সমন্বয়ক ডিবি কার্যালয়ে ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর সুশীল সমাজের চাপে তাদের পরিবারের জিম্মায় ছাড়া হয়। বের হয়েই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে এক দফা ঘোষণা করেন নাহিদ ইসলাম। যার ফলশ্রুতিতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হোন শেখ হাসিনা। আর তাদের নেতৃত্বে তৈরি হয় ইতিহাস, নিজেরাও হলেন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

August 2024
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..