ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেট বিভাগের ১৯টি সংসদীয় আসনের এমপিদের মধ্যে সবচেয়ে গরীব প্রার্থী সিলেট-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। ক্ষমতার পাঁচ বছরে সম্পদের ছিঁটেফোঁটোও বাড়েনি তাঁর। নিজের নামে নেই গাড়ি-বাড়ি। বাড়েনি আয়ও। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে কেবল নগদ ১লাখ, ব্যাংকে সঞ্চিত ৬৯ হাজার ২২৮ ও ২লাখ টাকার আসবাবপত্রই তাঁর শেষ সম্বল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতির দায়িত্বে থাকা মোকাব্বির খানের নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অথচ সিলেটের অন্য ১৮টি আসনের বর্তমান এমপিদের পাঁচ বছরে আয়, অর্থ-সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। এমপিদের স্ত্রীরাও হয়েছে সম্পদশালী, ক্রোড়পতি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে গণফোরামের প্রার্থী হয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোকাব্বির খান। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
গত ৩ ডিসেম্বর মনোনয়ন বাছাইয়ে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষর জটিলতায় তার মনোনয়ন বাতিল করেন রিটানিং কর্মকর্তা সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। ভোটের মাঠে ফিরতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন তিনি। অবশেষে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) আপিল শুনানির দ্বিতীয় দিনে প্রার্থীতা ফিরে পান মোকাব্বির খান।
হলফনামা ঘেটে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছর সংসদে থাকলেও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাড়েনি তাঁর। এবার নির্বাচনে হলফনামায় নিজের সম্পদ বিবরণীতে এই প্রার্থী নিজের এবং নির্ভরশীলদের কোনো আয় দেখাননি।
পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ মাত্র এক লাখ টাকা দেখিয়েছেন হলফনামায়।আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৬৯ হাজার ২২৮ টাকা, আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ২ লাখ টাকার। আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় প্রার্থীর অংশে ৪ বিঘা জমি এবং যৌথ মালিকানায় একটি বাড়ির মালিক তিনি। যা একাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামায়ও এই সম্পদ উল্লেখ করেছিলেন।
সে সময় পেশা বিদেশে ব্যবসা দেখালেও এবার পেশা দেখান রাজনীতি। সেই সময় অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন নিজ নামে নগদ ৫০ হাজার এবং ব্যাংকে ৫০ হাজার টাকা। আর আসবাবপত্র আগেও দুই লাখ টাকা দেখিয়েছিলেন, এবারো তা-ই আছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় বছরে আয়ের কোটা শূণ্য্ দেখিয়েছিলেন। এবারো বছরে আয় শূণ্যের কোটায় রয়ে গেছে তার।
শিক্ষায় স্বশিক্ষিত মোকাব্বির খানের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায়দেনাও নেই। কেবল একটি ছিল, সেটি বাদির সোলেনামার মাধ্যমে নিস্পত্তি দেখিয়েছেন।
যদিও হলফনামায় সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানি ভাতা উঠে আসেনি। অথচ বিগত দিনে এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্যদের রয়েছে সম্পদ ও অর্থকড়ি। যা এবারে তাদের হলফনামাও উঠে এসেছে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর বছরে আয় দেখান ৪ লাখ ৬১ হাজার ৯১৭ টাকা। অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন এক কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকার। এরমধ্যে স্বর্ণ ১০০ তোলা বিবাহকালীন অর্জনমূল্য দেখিয়েছিন ১ লাখ টাকা। আর স্থাবর সম্পদ দেখান ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৪৮ টাকার। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২২ দশমিক ৮২ একর চা বাগানের মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ২৯ হাজার ২৯২ টাকা।
এই আসন থেকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে ইয়াহইয়া চৌধুরী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের ব্যানারে প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হলেও মোকাব্বির খানের কাছে পরাজিত হন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী তিনি।
নির্বাচন কমিশনে প্রদত্ত হলফনামায় তার বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টের ৪টি মামলার তথ্য দেন। এর ২টিতে খালাস এবং ২টি চলমান রয়েছে। পেশা দেখিয়েছেন দেশ ফিসারিজ এননড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। মৎসখাতে বছরে আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা, শেয়ার আছে ৪ লাখ টাকার, ভাইবোনদের রেমিটেন্স আসে ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ২৬০ টাকা।
তার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকার। এরমধ্যে রয়েছে নগদ ৮ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, গাড়ির দাম দেখিয়েছেন ৫১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, স্বর্ণ, আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রি এক লাখ করে ৩ লাখ টাকার দেখিয়েছেন। তবে স্থাবর সম্পদের কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি তিনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ইয়াহইয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য ছিল না। বছরে দেখিয়েছিলেন ব্যবসা ও সম্মানি ভাতা বাবদ ১২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন ৮৪ লাখ ৬৮ হাজার ৪৪৪ টাকা। এরমধ্যে নগদ টাকা ছিল ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬৪ টাকা। ব্যাংকে ৪ হাজার ২৮২ টাকা, মোটরগাড়ির মূল্য দেখান ৬৩ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৮ টাকা, স্বর্ণ, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রি ও আসবাবপত্র এক লাখ করে ৩ লাখ টাকার।
এছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবসা থেকে বছরে আয় দেখিয়েছিলেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। ওই সময়ও কোনো স্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেননি এই প্রার্থী। দশম থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পাঁ বছরেই তার অস্থাবর সম্পদ বাড়ে ৮১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৪৪ টাকা।
এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলতা্ফুর রহমান সুহেলের হলফনামায় বছরে আয় ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ ৩০ হাজার টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ৫ লাখ টাকার, স্বর্ণ স্ত্রীর ৪ ভরি ৪ লাখ টাকা মূল্যের, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রি ও আসবাবপত্র ১ লাখ টাকার উল্লেখ করেন।
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. আব্দুল মান্নান খান পেশা ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বছরে আয় দেখান ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৫ লাখ টাকা, অন্যান্য ২ লাখ টাকা, অকৃষি ২ একর ১৫ লাখ টাকা মূল্য।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী সিলেট-২ মো. জহিরের ব্যবসা থেকে বছরে আয় ৬ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৪ টাকা, পেশা থেকে ২৫ হাজার ৩৩৩ টাকা, অন্যান্য জমি বিক্রির টাকা দেখান ১৬ লাখ ৫৪ হাজার। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ আছে ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯১৩ টাকা, স্বর্ণ ৬ লাখ টাকার, আসবাবপত্র ৪০ হাজার টাকার একং স্ত্রীর নামে ২ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৫ টাকার স্বর্ণ ও ২ লাখ টাকার আসবাবপত্র দেখান।
Sharing is caring!