সিলেট ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৩ই মহর্রম, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৩৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: কখনো তিনি নিজেকে পরিচয় দেন আইনজীবী হিসেবে। কখনোবা সাংবাদিক অথবা শিক্ষক। এমনকি মানবাধিকার কর্মী হিসেবেও পরিচয় দেন নিজেকে। এই সব পরিচয় ব্যবহার করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকেন শংকু রানী সরকার লিলি নামের এই নারী।
প্রতারণার অভিযোগে বুধবার বিকেলে সিলেটের আদালতপাড়ায় তাকে আটক করে জনতা। পরে তাকে আইনজীবী সমিতির কাছে তুলে দেওয়া হয়। পরে মুছলেকা দিয়ে ছাড়া পান শঙ্কু।
প্রতারণার মাধ্যমে এক গৃহকর্মীর কাছ থেকে তার ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন শঙ্কু। এই ঘটনায় বুধবার বিকেলে সিলেট আদালতপাড়ার বার হল নং-২ এর সামনে তাকে আটক করা হয়।
শংকু রানী সরকার লিলি সিলেটের মেজরটিলায় এন আর টাওয়ারে ৩৫/২ নং বাসায় ভাড়াটে থাকেন।
জানা গেছে, এক মাস আগে সিলেটের মিরাবাজারের একটি বাসায় ভাড়াটে থাকা গৃহকর্মী শিল্পী বেগমের অটোরিকশা চালক ছেলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। ছেলেকে ছাড়াতে শংকু রানী সরকার লিলির কাছে আসেন গৃহকর্মী শিল্পী বেগমের। লিলি নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দেন এবং শিল্পী বেগমের ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার জন্য ৪৫ হাজার টাকার চুক্তি করেন। পরে এক মাসে শিল্পী বেগম মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে টাকা জমিয়ে ৩-৪ কিস্তিতে লিলিকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে দেন। কিন্তু লিলি মামলার শুনানির তারিখগুলো নানা টালবাহানায় পার করতে থাকেন।
বুধবার (২১ এপ্রিল) ছিলো শিল্পী বেগমের ছেলের মামলার আরেকটি শুনানির তারিখ। বুধবার তার ছেলেকে জামিন পাইয়ে দেয়ার কথা চূড়ান্ত করেন লিলি। কিন্তু বুধবারও ছেলের জামিন না হওয়ায় সিলেট বার হল নং-২ এর সামনে লিলির কাছে ৪৫ হাজার টাকা ফেরত চান শিল্পী বেগম। এতে লিলি ক্ষিপ্ত হয়ে শিল্পী বেগমকে মারধর শুরু করেন। এসময় ঘটনাস্থলে আইনজীবী ও লোকজন জড়ো হলে শিল্পী বেগম বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন। তখন আইনজীবী ও জনতা প্রতারক লিলিকে আটক করেন।
এদিকে, আটকের পর প্রতারক লিলি উত্তেজিত হয়ে নিজেকে একাধারে আয়কর আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিশ্বনাথ কলেজের অধ্যাপিকা পরিচয় দেন। এসময় তার গলায় ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউমেন রাইটস’ মানবাধিকার সংস্থার একটি পরিচয়পত্র ঝুলতে দেখা যায়। এটি সবাইকে দেখিয়ে লিলি নিজেকে ওই সংস্থা সম্পাদিত পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দেন।
এসময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদের উপরও ক্ষেপে যান তিনি। ক্ষুব্দ হয়ে লিলি বলেন, তবে কোন পরিচয়ে যখন কাজ হচ্ছিলো না তখন শংকু রানী ক্ষেপে যান সাংবাদিকদের উপর। বলেন, ‘বাঁশ দিবো। আমি ক্রাইম রিপোর্টার। সব সাংবাদিকদের বাঁশ দিবো।’
পরে তাকে পুলিশের ভয় দেখালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের ভুল শিকার করেন এবং ওই ভুক্তভোগী গৃহকর্মীর টাকা ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে মুক্তি পান।
সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজর রহমান বলেন, ‘শংকু রানী নিজেকে আয়কর আইনজীবী পরিচয় দেন। এবং সিলেট কোর্টের তারই সহকর্মী একজন আইনজীবী দিয়ে একজন নারীর কারাগারে থাকা ছেলেকে জামিন করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে নগদে ৪৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু ভুক্তভোগী নারীকে বার বার ঘুরালেও নারীর ছেলেকে জামিন করাতে পারেননি। আজ আবার ভুক্তভোগী নারীকে আদালতে নিয়ে এসে ছেলের জামিন করাতে না পারায় ওই নারী কারণ জানতে চাইলে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা। যা আইনজীবীদের নজরে এলে তাকে আটক করা হয়।’
তবে নগদ ৩০ হাজার টাকা আদায় করে ভবিষ্যতে এমন কাজ সে আর করবে না মর্মে মুচলেকা রেখে শংকু রানীকে ছেড়ে দেওয়ার হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ।
তিনি বলেন, আমরা ওই প্রতারক মহিলাকে পুলিশের হাতেই সোপর্দ করতাম। কিন্তু তার কান্নাকাটি আর মাফ চাওয়া দেখে এবং টাকা ফিরিয়ে দেয়ার শর্তে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেই।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd