যেভাবে ভারতীয় সীমান্ত থেকে জেলা পুলিশের খাঁচায় বন্দি হলো আকবর

প্রকাশিত: ২:৫৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২০

যেভাবে ভারতীয় সীমান্ত থেকে জেলা পুলিশের খাঁচায় বন্দি হলো আকবর

মুমিন রশিদ, কানাইঘাট :: সিলেটের আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামী সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেনকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দনা বস্তির পাইলট খাসিয়ারা আটক করে বাংলাদেশীদের কাছে হস্তান্তরের খবর পাওয়া গেছে। গত রবিবার রাতে ভারতের দনা বস্তির খাসিয়ারা ভারতের অভ্যন্তরীণ এলাকা থেকে এস.আই আকবরকে আটক করেন।

পরে সোমবার দুপুর ১টার দিকে কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী দনা এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশীদের কাছে খাসিয়ারা তাকে তুলে দেয়। দ্রুত এসআই আকবর আটকের খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে সিলেটের জেলা পুলিশ ও কানাইঘাট থানা পুলিশ সীমান্ত এলাকায় ছুটে গিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে আকবরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসছেন বলে থানার এস.আই স্বপন চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন।

এদিকে সীমান্তবর্তী কানাইঘাট দনা বিজিবি ক্যাম্পের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা জানতে পেরেছেন এসআই আকবরকে ভারতের মেঘালয়ের সেখানকার দনা বস্তি থেকে আটক করেছেন খাসিয়ারা। থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরের আখালিয়ার নেহারিপাড়ার বিডিআরের হাবিলদার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে চাকরি করতেন।

এ ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।

১৪ অক্টোবর মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরি মরদেহ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।

নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

এ ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর দুপুরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় ওই ফাঁড়ির কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ও ২৩ অক্টোবর কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে গ্রেফতারের পর পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। রোববার (২৫ অক্টোবর) কনস্টেবল টিটুকে ফের তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।

ঘটনার দিন বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।

এছাড়া গত ২১ অক্টোবর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি হতে পালাতে সহায়তা করা ও তথ্য গোপনের অপরাধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2020
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..