সেই ডিসি সুলতানা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে, আরডিসি নাজিম ও দুই সহকারী কমিশনার প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ১০:২৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২০

সেই ডিসি সুলতানা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে, আরডিসি নাজিম ও দুই সহকারী কমিশনার প্রত্যাহার

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনায় সমালোচিত কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। তার স্থলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব রেজাউল করিমকে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উনি-২ অধিশাখার উপসচিব এবিএম ইফরেখারুল ইসলাম খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীনকে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হলো। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

১৩ মার্চ মধ্যরাতে নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় জেলা প্রশাসন। তখন ঘরে কোনো তল্লাশি চালানো না হলেও পরে ডিসির কার্যালয়ে নেয়ার পর তারা দাবি করেন, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। এই ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে এই ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। রবিবার তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এরপরই তাকে বদলি করা হলো।

এদিকে, কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাড়িতে গভীর রাতে হানা দেওয়ার পাশাপাশি তাকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় আরডিসি (সিনিয়র সহকারী কমিশনার রাজস্ব) নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এস এম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কে এম আল-আমীনের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাদের প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তী পদায়নের জন্য তাদেরকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে প্রত্যাহার করে কুড়িগ্রামে নতুন ডিসি দিয়েছে সরকার। এছাড়া সুলতানা পারভীনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বিভাগীয় ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গত শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার সদস্যদের একটি টিম কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ায় সাংবাদিক আরিফুর রহমান রিগ্যানের বাড়িতে হানা দেয়। এরপর মারধর করতে করতে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তার পোশাক খুলে দুই চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিসি কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন। এরপর মাদকবিরোধী অভিযানে আটক ও পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতুর দাবি, মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে ঢুকে আরিফকে পেটানো, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।

কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কারের পর ডিসি নিজের নামানুসারে ওই পুকুরের নাম ‘সুলতানা সরোবর’ রাখতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দশ মাস আগে। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম প্রতিবেদনটি করেন। সেই ঘটনায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। অভিযোগ রয়েছে, ওই সংবাদের জেরেই আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..