কানাইঘাটে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, নুরুল আমীনের বিরুদ্ধে মাঠে দুদক

প্রকাশিত: ৩:০২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২১, ২০১৯

কানাইঘাটে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, নুরুল আমীনের বিরুদ্ধে মাঠে দুদক

Manual4 Ad Code

জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে কানাইঘাটের বাণীগ্রাম ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নুরুল আমীনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার ঢাকা ও সিলেট অফিস থেকে ৮/৯ জন কর্মকর্তা কানাইঘাটের বানীগ্রাম ইউনিয়নের গাছবাড়িবাজারে উপস্থিত হলে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। দলেদলে সাধারণ মানুষ ইউনিয়ন অফিসের সামনে ভীড় জমান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,  দুপুর ১২টা থেকে শুরু করে দুদক কর্মকর্তারা বিকেল ৩টা পর্যন্ত ঐ এলাকায় অবস্থান করেন এবং প্রতারিত-নির্যাতিত সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেন। তারা নুরুল আমীনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। বিশ^স্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দুর্নীতিবাজ হিসাবে খ্যাত এই ভূমি কর্মকর্তার কথায় বারবার অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। এমনকি, কর্মকর্তারা ভলিউম বইও দেখেছেন, ছবিও তুলে নিয়েছেন। অনেক ডকুমেন্ট তাৎক্ষনিকভাবে নুরুলম আমীন দেখাতে না পারায় দুদক কর্তারা রোববার সন্ধ্যার মধ্যে তা সিলেট অফিসে পাঠানোর কথা জানিয়ে এসেছেন। তবে এ সময়ের মধ্যে নুরুল আমীন তা পাঠিয়েছেন কি না, তা জানা যায়নি। নুরুল আমীনের বাড়ি সুনামগঞ্জের হালওয়াগাঁওয়ে। তার পিতার নাম মুনফর আলী। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে নুরুল আমীন ভূমি অফিসে খাজনা আদায়, নামজারিসহ বিভিন্ন কাজে নানাভাবে দুর্নীতি করছেন।

Manual7 Ad Code

এ কাজে আছে তার নিজস্ব দালাল বাহিনী। তাদের দিয়ে তিনি অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত দরিদ্র মানুষকে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে খাজনার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতেন। এলাকার কয়েকজন সচেতন মানুষ জানিয়েছেন, মাত্র ১৯/২০ হাজার টাকা বেতন পেলেও শহরে বিশাল বাড়িতে প্রায় ২২ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন নুরুল আমীন। সিলেট শহর থেকেই তিনি কানাইঘাটে অফিস করতে যান। এলাকাবাসীর ধারণা, দরিদ্র মানুষকে ঠকিয়ে টাকার পাহাড় বানিয়েছেন তিনি। দুদক নিরপেক্ষভাবে অনুসন্ধান করলে তার অবৈধ সম্পদের হদিস মিলতে পারে।

Manual4 Ad Code

প্রভাবশালী এই ভূমি কর্মকর্তা ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে  প্রতারণার শিকার কানাইঘাটের চলিতাবাড়ি রাজাপুরের তফজ্জ্বল আলীর ছেলে নিরীহ আম্বিয়া এ বছরের ২৯ আগস্ট সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নম্বর আমলী আদালতে  মামলা (নম্বর ২৬০/১৯) দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে ৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি কানাইঘাট থানায় এজহারভূক্ত করা হয় (নম্বর ৮, ০৪/০৯/১৯)।  তার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আম্বিয়ার গাছবাড়ি বাজারস্থ ৫২৪ নম্বর দাগের ১৫৪২ নম্বর খতিয়ানের প্রায় দুই ডেসিমিল জায়গা দীর্ঘদিন ধরে তার চাচাত ভাই জালাল উদ্দিনের দখলে। লাখ টাকা দিলে এই জমিটি উদ্ধার করা সম্ভব বলে আম্বিয়াকে কয়েক বছর আগে জানান নুরুল আমীনের ঘনিষ্ঠ সহচর, ভূমি অফিসের দালাল ঐ এলাকার শৈতেন চন্দের ছেলে চন্দন চন্দ। জায়গা উদ্ধারের কথা বলে বিভিন্ন সময়ে তিনি আম্বিয়ার কাছ থেকে লাখ টাকার বেশি আদায় করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, কিছুদিন আগে চন্দন তাকে কিছু কাগজপত্র দিয়ে জমিটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায়। যথারীতি এই দলিলের বিপরীতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুরুল আমীন খাজনাও আদায় করেন। পরে ভলিউমে জমিটির মালিকানা দেখতে গিয়ে জাল দলিলের বিষয়টি ধরা পড়ে।

এরপর আদালতে মামলাদায়েরসহ বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হয়। আম্বিয়া দুদক’ ঢাকা অফিসে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে নুরুল আমীনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং রোববার রাতেই রিপোর্ট জমা হওয়ার কথা। এদিকে কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (ইউপি মেম্বার) শওকত আলী জানিয়েছেন, এলাকার মানুষ প্রাণ খুলে দুদক কর্মকর্তাদের কাছে তাদের দুঃখের কাহিনী শুনিয়েছেন। নুরুল আমীন ও তার ঘনিষ্ঠ দালালরা তাদের সঙ্গে নানাভাবে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করেছেন বলে তরা জানিয়েছেন।

Manual7 Ad Code

ভুক্তভোগী ও অভিযোগকারী আম্বিয়াকেও তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তিনিও তার লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনাটি বিস্তারিত জানিয়েছেন। তদন্তে অংশ নেয়া একজন দুদক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আমরা প্রায় ৩/ ৪ ঘন্টা সেখানে কাজ করেছি। রোববার রাতেই রিপোর্ট ঢাকায় পাঠানো হবে।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..