সিলেট ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০১৯
শেরপুরের নকলায় ডলি খানম (২২) নামে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় এবার মামলা নিয়েছে থানা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে হত্যার উদ্দেশ্যে অবৈধ আটক, মারপিটে জখম, গর্ভপাত, শ্লীলতাহানি ও চুরির অভিযোগে নির্যাতিতা গৃহবধূকে বাদি করে নকলা থানায় ওই মামলা রেকর্ড হয়েছে। মামলায় নির্যাতিতা গৃহবধূর ভাসুর আবু সালেহ (৫২), নেছার উদ্দিন (৪৮) ও সলিমুল্লাহ (৪৪), জা লাখী আক্তার (৩৪), জা’র বড়বোন নাসিমা আক্তার (৩৯), পৌর কাউন্সিলর রূপালী বেগম (৩৫), তার স্বামী আমিরুল ইসলাম (৪৫), প্রতিবেশি তাফাজ্জল হোসেন (৪৪) তার ছেলে ইসমাইল হোসেন (২০) সহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ১২ জুন বুধবার সকালে এজাহারভুক্ত আসামি নাসিমা আক্তারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তিনি নকলা উপজেলার ভুরদি গ্রামের আব্দুল মোতালেবের মেয়ে এবং ভিকটিম ডলি খানমের জা অন্যতম প্রধান আসামি লাখী আক্তারের বড়বোন। মামলার অন্য আসামীরা ঘরবাড়ী ছেড়ে পালিয়েছে।
এদিকে, গৃহবধূ নির্যাতনের ভিডিওটি ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে যাওয়া নকলা থানার এসআই ওমর ফারুকের হস্তগত হলেও পরে সেটি তিনি গায়েব করে দেন বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতা ডলি খানম।
এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে নকলা থানায় উপস্থিত সাংবাদিকদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল হোসেন জানান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামকে প্রধান করে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সার্বিকভাবে বিষয়টি তদন্ত করবেন।
এদিকে, অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিও ঢাকায় অবস্থানরত পুলিশ সুপার (এসপি) আশরাফুল আজীমের নজরে এলে তিনি মঙ্গলবার রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুল ইসলামকে নকলায় পাঠান। বুধবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আমিনুল ইসলাম ও নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নির্যাতিত পরিবারের সাথে কথা বলেন। এসময় তারা আইনানুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেন।
জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে নকলা পৌর শহরের কায়দা গ্রামে দরিদ্র কৃষক শফিউল্লাহর স্ত্রী ও স্থানীয় চন্দ্রকোনা কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের ছাত্রী ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ডলি খানমকে গত ১০ মে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। সেইসাথে ওই নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করে গৃহবধূর ভাসুরের স্ত্রী লাকী আক্তার। নির্যাতনে ডলি খানমের অকাল গর্ভপাত হয়। এ ঘটনায় ৩ জুন ডলি খানমের স্বামী শফিউল্লাহ বাদি হয়ে আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করেন। মামলাটি জামালপুরের পিবিআইয়ে তদন্তাধীন থাকাবস্থায় সোমবার রাতে গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ফাঁস হয়ে পড়লে এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুর রহমান বলেন, আগে বিষয়টি জানতাম না। আজ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানলাম নির্যাতিত ডলি খানম একজন নারী উদ্যোক্তা। আমরা তাকে আশ্বস্ত করেছি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনগতভাবে যতটুকা সহায়তা করা যায় তাকে সে বিষয়ে সহায়তা করা হবে। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। থানা পুলিশ এবং পিবিআই তদন্ত করছে। আশাকরি তদন্তে সব বের হয়ে আসবে এবং ভিকটিম ন্যায়বিচার পারে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, গাছে বেঁধে গৃহবধূকে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র দেখে তাৎক্ষণিকভাবে ৯ জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। নাসিমা আক্তার নামে এক আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তাারে চেষ্টা চলছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd