সুনামগঞ্জে মেলার নামে হচ্ছে কি?

প্রকাশিত: ৭:২০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯

সুনামগঞ্জে মেলার নামে হচ্ছে কি?

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জ শহরে শিল্প ও পণ্যমেলার নামে সার্কাস পার্টির আয়োজন করার অভিযোগ উঠেছে। দেশী পণ্য প্রসারের নামে মেলা আয়োজন করা হলেও বাংলাদেশ বেনারসি মসলিন এন্ড জামদানি সোসাইটি নামের সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সার্কাস, পুতুল নাচ, গাড়ি রেস, ওয়াটার পার্ক স্থাপন ও লটারির আয়োজন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়েই মেলায় আয়োজন করা হয়েছে কাগজের লটারির। এতে পুরস্কার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে মোরটসাইকেল, ফ্রিজ, এলইডি টিভি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওভেনসহ লোভনীয় ১০১টি পুরস্কার। আর এসবের প্রলোভনে পড়ে সাধারণ মানুষ হাজার হাজার টাকার টিকেট ক্রয় করছেন। অন্যদিকে সার্কাস, পুতুল নাচ, গাড়ি রেসের উচ্চ শব্দে বিপাকে পড়েছেন মেলা প্রাঙ্গণের আশপাশে বসবাসকারী এসএসসি পরীক্ষার্থী ও রোগীরা। তারা দ্রæত মেলাটি বন্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, মেলায় সার্কাস, পুতুল নাচ, লটারির বিষয়টি প্রশাসনের জানা নেই। এ ব্যাপারে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। শহরের ষোলঘর খেলার মাঠে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয় সুনামগঞ্জ শিল্প ও পণ্যমেলা। ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হলেও মেলাকে ঘিরে ব্যবস্থাপকদের ছিল অন্য চিন্তা। মেলার শুরুর দিন থেকেই ব্যবস্থাপকরা শহর ও আশপাশের গ্রামাঞ্চলে সার্কাস, পুতুল, গাড়ি রেস, ওয়াটার পার্ক ও লটারির কথা মাইকিং করে প্রচার শুরু করেন। মেলা প্রাঙ্গণ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সম্মুখভাগে নাম মাত্র কয়েকটি স্টল রয়েছে, যেগুলোতে বিক্রি হচ্ছে শাড়ি, ক্রোকারিজ, খাবারসহ বেশকিছু জিনিসপত্র। পুরো চত্বরজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে বাচ্চাদের খেলাধুলার রেলগাড়িসহ নানা সরঞ্জাম। মেলার অর্ধেক স্টল খালি পড়ে থাকলেও সেখানে ভালো পণ্যের দোকান বসানোর কোন উদ্যোগ নেই ব্যবস্থাপকদের। মেলার স্টলের চেয়ে সাধারণ মানুষের ভিড় বেশি সার্কাস, পুতুল নাচ, ওয়াটার পার্ক, গাড়ি রেসে। ফলে স্টল দেয়া দোকানিরা পড়েছেন বিপাকে।

দোকানে কেনাকাটা না করে মেলায় আসা দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন ‘নাচ গানের আসর’ সার্কাস ও পুতুল নাচে। সার্কাসে শিশুদের নিয়ে প্রবেশ করে অভিভাবকদের পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর অবস্থায়। পারফর্মারদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির কারণে পরিবারসহ সার্কাস দেখতে গিয়ে তারা বিপাকে পড়ছেন। অপরদিকে, প্রতিদিন শত শত মানুষ মেলায় না ঘুরেই লটারির আশায় টিকেট কাটছেন। এদের মধ্যে কিশোর ও তরুণরাই বেশি। অন্যদিকে মেলার পণ্যের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বেশির ভাগ স্টলে বিদেশি বলে বিক্রি করা হচ্ছে চোরাই পথে আসা বিভিন্ন পণ্য। যা থেকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। পারফিউমসহ অনেক পণ্যের গায়ে লেখা নেই মেয়াদের তারিখ। মেলায় কথা হয় সুগন্ধি বিক্রেতা ইলিয়াসের সাথে। তিনি বলেন, মেলায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামি দামি পারফিউম রয়েছে। আমাদের কাছে ৫শ টাকা থেকে শুরু করে ৭ হাজার টাকা দামের পারফিউম রয়েছে। মেয়াদ ৩ বছর। বিদেশি অনেক পারফিউম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হুগেবস।

এই পারফিউম কিভাবে আসে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিক্রেতা বলেন, ভাই বুঝেন না ব্ল্যাকে (চোরাই পথে) আসে। আমার মালিক আনছে। উনি এখন বাইরে আছে, উনার নাম ইব্রাহিম। জানা গেছে, সার্কাস ও লটারির আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসনের পৃথকভাবে অনুমতি নিতে হয়। পণ্য প্রসারের জন্য আয়োজন করা মেলায় সার্কাস পার্টির আয়োজনের নিয়ম নেই। সেক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গ করেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সার্কাস, বিপজ্জনক গাড়ি রেস, পুতুল নাচ ও লটারির আয়োজন করা হয়েছে। শহরের ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা কুদরত পাশা বলেন, প্রতিদিন বিকেল থেকেই মেলায় মাইক বাজানো শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। উচ্চস্বরে মাইক বাজানোর কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না।

শুধু পরীক্ষার্থীরা না আবাসিক এলাকার ভেতরে মেলার কারণে বাসিন্দারাও শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছেন। মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক অভিভাবক বলেন, মেলায় একটি স্টলে বডি স্প্রে’র মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ বলা হয়েছে ৩ বছর। কিন্তু বিশ্বের কোন দেশে এতো দিনের মেয়াদী কোনও বডি স্প্রে পাওয়া যায় কিনা আমার জানা নেই। এটি নিছক প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। সুনামগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিব আহমদ বলেন, পণ্যমেলার নামে আয়োজন করা হলেও এটি প্রতারণা মেলা বলা যায়। পণ্যমেলার কিছুই নেই এতে। বাজারের পণ্যই বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বেআইনিভাবে লটারি, সার্কাসের আয়োজন করে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
মেলার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক সাংবাদিকদের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে বলেন, মেলায় যা কিছু হচ্ছে অনুমতি নিয়েই হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, মেলায় সার্কাস, লটারির আয়োজন করা হয়েছে আমার জানা ছিল না। আমি এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2019
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
232425262728  

সর্বশেষ খবর

………………………..