সিলেটের দক্ষিণ সুরমা হোটেল আল তকদিরে কপাল পুড়লো বহু তরুণীর

প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০১৮

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা হোটেল আল তকদিরে কপাল পুড়লো বহু তরুণীর

Manual8 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : হঠাৎ হঠাৎ মেয়েদের কান্নার শব্দ আসতো ভেতর থেকে। বাইরের মানুষ এটি জানতেন। ভেতরে নির্যাতত হচ্ছে কোনো তরুণী কিংবা অসহায় নারী। সেটি অনুধাবন করতে পারতেন অনেকেই। প্রতিবাদ করতে পারতেন না। পুলিশের সোর্সরা প্রায় সময় আড্ডা দিতো হোটেলের বাইরে।

হোটেল তকদিরে কত রমণীর তকদির ভেঙেছে সেই পরিসংখ্যান জানা নেই কারও। তবে ওই হোটেল সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সম্ভ্রম হারিয়ে সুপথ হারিয়েছেন অনেক নারী। চিরদিনের মতো ভিন্ন পথে হারিয়ে গেছেন তারা। সিলেট নগরীর ক্বিন ব্রিজ নেমে বাম দিকে মোড় নিলেই চোখে পড়বে হোটেল তকদির। চাঁদনীঘাট এলাকায় এই হোটেলের অবস্থান। প্রাচীন হোটেল। স্বাধীনতা উত্তর সময় থেকে এই হোটেল ব্যবসা করছে। এ কারণে পুরাতন হোটেল হিসেবে সেটি পরিচিত। তিনতলা বিশিষ্ট ওই হোটেলের দিকে বাঁকা চোখ এলাকাবাসীর।

Manual7 Ad Code

সম্প্রতি সময়ে ওই হোটেলে এক তরুণীকে ১১ দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই তরুণীর প্রেমিকই নয়, খদ্দেরকে মনোরঞ্জনে ছুড়ে দেয়া হয়েছে বিছানায়। বিষয়টি এতই মর্মান্তিক যে- ওই তরুণীর ওপর নির্মম নির্যাতনের ঘটনা যারাই শুনেছেন তারাই আঁৎকে উঠেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি পুলিশের জন্য। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ ওই হোটেলের মালিককে গ্রেপ্তার করেছে। হোটেলের কক্ষে তরুণীকে আটক রেখে গণধর্ষণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা প্রতিবাদের ঝড় বইছে দক্ষিণ সুরমায়। হোটেল আল তকদিরের মালিক এবং কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। তাদের দাবি, ওই হোটেলে প্রায়ই মেয়েদের কান্নার আওয়াজ শোনা যেত। তাছাড়া প্রায়ই আল তকদির হোটেলের মূল গেইট বন্ধ থাকতো। হোটেলের মালিক বা কর্মচারীদের পরিচিতজন না হলে গেট খোলা হতো না। দীর্ঘদিন থেকে এ নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন ছিল। হোটেলের বর্তমান পরিচালক ধর্ষণের অভিযোগে আটক সৈয়দ নিয়াজ উদ্দিন দক্ষিণ সুরমার মোগলা বাজার থানার কুচাই মাঝপাড়ার বাসিন্দা। হোটেল ব্যবসার আগে সে এলাকায় মোরগ বিক্রি করতো। তার চাচার মৃত্যুর পর নিয়াজ হোটেলের দখল নেয়।

Manual5 Ad Code

এরপর থেকেই  হোটেলটি অসামাজিক কার্যকলাপের নিরাপদ আস্তানা হয়ে ওঠে। সে নিজেও এর সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। হোটেল আল তকদিরে গ্রাম থেকে শহরে এনে তরুণীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগের পর থেকে বেরিয়ে আসছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। এক তরুণীকে ১১ দিন আটক রেখে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে গত বৃহস্পতিবার। এ নিয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ সুরমার হোটেল আল-তকদির থেকে কথিত প্রেমিক জসিম ও হোটেল মালিক নিয়াজ-সহ দুই জনকে আটক করে পুলিশ। এ বিষয়ে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ২০শে এপ্রিল থেকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত দক্ষিণ সুরমার হোটেল আল তকদিরে রেখে পাশবিক নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। হোটেল আল তকদিরের মালিক ও স্টাফসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। আসামিরা হচ্ছে, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের জসিম উদ্দিন, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চাঁদনীঘাটস্থ হোটেল আল তকদিরের  মালিক সৈয়দ নিয়াজ আহমদ, একই হোটেলের স্টাফ জাকির ও নূর মিয়া। পুলিশ জানায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তরুণীর (১৯) সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রেম হয় জসিম উদ্দিনের। জসিম প্রেম প্রতারণা ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ২০শে এপ্রিল ওই তরুণীকে হোটেল আল তকদিরে ওঠায়।

এখানে তাকে দীর্ঘ ১১ দিন বন্দী রেখে  জসিম ও তার সহযোগীরা তাকে গণধর্ষণ করে। এমনকি ভাড়া দিয়ে খদ্দেরকে দিয়ে ধর্ষণ করায়। পাশাপাশি ওই তরুণীর  জন্ম সনদ, পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। গত ৩০শে এপ্রিল কৌশলে হোটেল থেকে বের হয়ে ওই তরুণী তার পরিচিত এক বান্ধবীর আশ্রয়ে গিয়ে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শুক্রবার দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ ধর্ষকদের সিলেট মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করে। আদালতের বিচারক তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল জানান, গণধর্ষণ মামলায় আটক দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া ধর্ষিত তরুণী এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামলার অপর আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।

Manual7 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

May 2018
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..