সিলেট ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:০৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০১৭
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেট নগরীর রিকাবিবাজার পয়েন্ট থেকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক, ডায়গনাস্টিক সেন্টার। রয়েছে অনেক চিকিৎসকের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের চেম্বারও। এসব ক্লিনিক, ডায়গনাস্টিক সেন্টারের অধিকাংশেরই নেই পার্কিং ব্যবস্থা। যাদের আছে সেগুলোও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে পুরো সড়কজুড়ে দিনভর লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট অসহনীয়পর্যায়ে পৌঁছ।
এছাড়া এই সড়কের উপর যত্রতত্র অটোরিকশা পার্কি করে রাখার কারণেও সৃষ্টি হয় যানজটের। ক্লিনিক আর বিকাল হলে যানজটের পরিমাণ তীব্র আকার ধারণ করে। এসময় প্রাইভের কিলনিক আর ডায়গনাস্টেক সেন্টারগুলোতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন চিকিৎসকরা। ফলে বাড়ে রোগী আর গাড়ির সংখ্যা। বাড়ে যানজট। এতে ওসমানী মেডিকেলে আগত বেশির ভাগ রোগীকে পড়তে হয় দীর্ঘ যানজটের কবলে।
রিকাবিবাজার থেকে ওসমানী মেডিকেল এর ইমার্জেন্সি গেট পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ইবনে সিনা ডায়গনাস্টিক সেন্টার অ্যান্ড কনসাল্টেশন সেন্টার, ট্রাস্ট মেডিকেল সার্ভিস, আরোগ্য পলি ক্লিনিক, দি সিলেট এক্স-রে অ্যান্ড ডায়গনাস্টিক সেন্টার, লাইফকেয়ার সার্জিক্যাল, পপুলার মেডিকেল সেন্টার, ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড ওউনটিলিং সেন্টার, মেডি এইড ডায়গনাস্টিক সেন্টার, জালালাবাদ ক্লিনিক, আল-রাইয়ান হাসপাতাল, এন.জে.এল ইএনটি সেন্টার, ক্রিসেন্ট মেডিকেল সার্ভিস, ল্যাব এইড লি: ডায়গনাস্টিক সেন্টার, কমফোর্ট মেডিকেল সার্ভিস, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিস, পদ্মা কম্পিউটারাইজড ডায়গনাস্টিক সেন্টার, দেশ এক্সে অ্যান্ড ডায়গনাস্টিক সেন্টার, হেলথ কেয়ার হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতাল ও স্কয়ার হাসপাতাল কনসালটেন্ট অ্যান্ড ডায়গনাস্টিক সেন্টারসহ মোট ২০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়গনাস্টিক সেন্টার (রোগনিরুপণ কেন্দ্র) রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কমফোর্ট, মেডেনোভা, মেডিএইড, ল্যাব এইড, পপুলার, ট্রাস্ট ছাড়া আর কারোই নেই নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা। তবে যে পাঁচটিতে পার্র্কিং ব্যবস্থা আছে তাও চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
বিশেষ করে পপুলার মেডিকেল সেন্টার, ল্যাব এইড, মেডিনোভা সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সামনে সবচেয়ে বেশি যানজট তৈরি হচ্ছে বলে দেখা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পার্কিং ব্যবস্থা থাকলেও তা আগত গাড়ির সংখ্যার অপরিসর। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে আগত বেশিরভাগ রোগী রাস্তার উপরেই গাড়ি পার্কিং করছেন। এতে তৈরি হচ্ছে যানজট।
এছাড়াও মেডিকেলের ইমার্জেন্সি গেট, ১নং গেট ও ২নং গেটের সামনে সড়কের উপরেই রয়েছে অটোরিকশা স্ট্যান্ড। অটোরিকশা স্ট্যান্ডের কারণেও সৃষ্টি হচ্ছে যানহট।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রকিবুল ইসলাম ঝলক বলেন, ‘এই সড়কে অগণন প্রাইভেট হাসপাতাল হওয়ায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। বিশেষ করে পপুলার মেডিকেল সেন্টার এবং ল্যাব এইড এই দুইটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িই বেশি যানজট তৈরি করে। এতে এলাকাবাসী যেমন পড়েন দুর্ভোগে তেমনই মুমূর্ষু রোগীদের আরো বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। এমনকি যানজটের কবলে পড়ে একজন গর্ভবতী মহিলা রাস্তায়ই সন্তান প্রসব করেছেন। তাই ল্যাব এইড এবং পপুলার মেডিকেল সেন্টার এই দুইটি প্রতিষ্ঠান এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে এলাকাবাসী সহ হাসপাতালে আগত রোগীদের জন্য মঙ্গল হবে।’
মেডিকেল এলাকার বাসিন্দা অজগর আলী বলেন, সব সময়ই এই সড়কে কিছুটা যানজট থাকে। তবে বিকাল হলে যানজট অনেক বেশি হয়। কোন কোন সময় যানজটের পরিমাণ এতো বেশি হয় যে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে যায়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৩নং ওয়ার্ড এর কাউন্সিলর আবদাল হোসেন আমজাদ বলেন, এই সড়কে যানজটের কারণে এলাকাবাসীসহ সকলকেই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। হাসপাতালের কারণে যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমনই রাস্তার উপরে থাকা যত্রতত্র অটোরিকশা স্ট্যান্ড এর কারণেও সমস্যা হচ্ছে। রাস্তা প্রশস্তকরণের মাধ্যমেই এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সড়কে বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। এতে হাসপাতালে আগত রোগীদেরকেও পড়তে হয় যানজটের কবলে। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে এর একটি সুরাহা করা উচিৎ। যেসব প্রতিষ্ঠানের পার্কিং নেই সেসব প্রতিষ্ঠানকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে সিটি কর্পোরেশন থেকে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এমনকি যেসব প্রতিষ্ঠানের পার্কিং আছে কিন্তু পর্যাপ্ত নয় এসব প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত পার্কিং নিশ্চিত করাতেও সিটি কর্পোরেশন একটি পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই সড়ক প্রশস্তকরণের পরিকল্পনা চলছে। মিরবক্সটুলা সড়কের কাজ শেষ হলেই মেডিকেল সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে পপুলার মেডিকেল সেন্টার, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে। রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজের জন্য কাজলশাহ মসজিদ ও ইস্কন মন্দির জায়গা ছাড়বে বলে জানান তিনি। এছাড়াও যানজট নিরসনে সকল হাসপাতালকে নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা করার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হবে। অন্যথায় ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানান তিনি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd