‘সোনা ভাই, দশ টাকা দে’

প্রকাশিত: ৬:১৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭


Manual6 Ad Code

বেদে কন্যার এমন কথা শুনে রেদওয়ান নামের একজন বলে ওঠেন, ‘আমারই বিয়ে হচ্ছে না টাকার অভাবে। আমি কীভাবে তোর ননদের বিয়ের টাকা দেব। পকেটে টাকা নেই। পকেট শূন্য।’

এমন কথা শুনে বেদে কন্যা বলেন, ‘স্যুট-প্যাট পরে আছিস, আবার বলছিস টাকা নেই। তোদের টাকা না থাকলে কার টাকা আছে। তুই আসলে ফকির। টাকা থাকলেও তোর মন ফকির।’

Manual5 Ad Code

বেদে কন্যার এমন মন্তব্যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন রেদওয়ান। লোকলজ্জার ভয়ে পকেট থেকে ১০ টাকা বের করে বেদে কন্যাকে দিতে যান। কিন্তু বেদে কন্যা চেয়ে বসেন ১০০ টাকা। এক পর্যায়ে ২০ টাকা দিয়ে রেহাই পান রেদওয়ান।

বেদে কন্যাদের এমন দৃশ্য নতুন নয়, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা এমন ঘটনা ঘটে। রেদওয়ানের সঙ্গে কথা বললে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘ভাই, এটা নতুন কিছু না। শাহবাগ, টিএসসি, শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হরহামেশাই এমন ঘটনা ঘটে। তবে বেদেদের উৎপাত আজ (শনিবার) অন্যদিনের তুলনায় বেশি।’

ওই বেদে কন্যা নিজেকে সাথী পরিচয় দিয়ে বলে, ‘পেটের দায়ে এ পেশা বেছে নিয়েছি। আমরা বেদে। আমাদের স্থায়ী কোনো থাকার জায়গা নেই। বেদের ঘরে জন্ম নেয়ার কারণে কেউ কোনো কাজ দেয় না। এভাবে মানুষের কাজ থেকে চেয়ে যে টাকা পাই -তা দিয়েই জীবন চলে।’

Manual1 Ad Code

তিনি জানান, মেঘনা ব্রিজের পাশে একটি অস্থায়ী আবাসস্থলে বসবাস করেন তারা। সেখান থেকে প্রতিদিন সকালে রাজধানীতে আসেন। রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে যা আয় হয়, তাতে প্রত্যেকের ভাগে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে থাকে।

Manual2 Ad Code

আজ কত আয় হয়েছে জানতে চাইলে সাথী বলেন, ‘আজ অনেক সকালে এসেছি। সকাল থেকে শহীদ মিনার থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশেই ঘোরাঘুরি করেছি। আয় অন্য দিনের তুলনায় বেশি হয়েছে। আশা করি দিন শেষে প্রত্যেকের ভাগে ৫০০ টাকার মতো থাকবে।’

শহীদ মিনার ছাড়াও দোয়েল চত্বর, টিএসসি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও বেদে কন্যাদের বেশ কয়েকটি দল দলবেঁধে ঘুরতে দেখা যায়। তারা মাঝে মধ্যে পথচারীদের ঘিরে ধরে হাতের কৌটা বাড়িয়ে টাকা চাচ্ছেন। কেউ দিচ্ছেন, আবার কেউ ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

Manual1 Ad Code

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আরও একজনকে ঘিরে ধরে টাকা চাচ্ছিলেন বেদে কন্যা নদী ও তার দল। পাশে দাঁড়িয়ে তাদের কথপোকথন শোনেন জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকরা।

নদী দর্শণার্থীকে বলেন, ‘আমার বিয়ের খরচের জন্য টাকা দে, তাহলে তুই সুখী হবি, ভালো মেয়ে পাবি। আর টাকা না দিলে তোর কপালে কোনো ভালো মেয়ে জুটবে না।’

হঠাৎ বেদে কন্যার এমন কথা শুনে আরিফ নামের ওই দর্শনার্থী বলেন, ‘আমার তো বিয়ে হয়ে গেছে। একটা ছেলেও আছে। আবার বিয়ে করব? এবার বিয়ে করলে তো বউ ঘর থেকে বের করে দেবে।’

কথায় আটকে গিয়েও নদী বলেন, ‘ও, তোরা তো বিয়ে করে সুখেই আছিস। আমাদের তো বিয়ে হয় না। ১০টা টাকা দে ভাই। তোর ছেলে, সংসারের ভালো হবে।’ এরপর আর কথা না বাড়িয়ে বেদে কন্যাকে ১০ টাকা দিয়ে বিদায় করেন আরিফ।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত যাতায়াত করেন মধ্য বয়সী মো. জামাল উদ্দিন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘সাপের বাক্স হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো বেদেদের কাছে প্রায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি হতে হয়। আজকের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। এ অঞ্চল ঘুরে দেখেন, কমপক্ষে একশ বেদে আছে। দলবেঁধে এরা মানুষকে ঘিরে ধরে টাকা চাচ্ছে। টাকা না দিলে জামা ধরে, প্যান্ট ধরে টানাটানি শুরু করে দেয়।’

টিএসসিতে কথা হয় শিক্ষার্থী রোমেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে ৪ বার বেদেরা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সাপের বাক্স হাতে নিয়ে ওরা এমনভাবে ঘিরে ধরে টাকা না দিয়ে উপায় নেই। টাকা না দিলে আপত্তিকর কথাও বলে।সূত্র-জাগো নিউজ

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2017
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..