জাফলংয়ে নারী শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা : পুলিশকে বখরা দিয়েই চলে ধংসযজ্ঞ!

প্রকাশিত: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০১৭


Manual8 Ad Code

গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে সোমবার মারা যান এক নারী শ্রমিক। এনিয়ে চলতি বছরেই গোয়াইনঘাটে পাথর তুলতে গিয়ে মারা গেছেন ১৫ জন।

Manual2 Ad Code

অভিযোগ আছে, পুলিশের প্রশ্রয়েই পাথর উত্তোলনের নামে জাফলংয়ে চলে ধংসযজ্ঞ। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে বাধা দেওয়ার বদলে সহযোগিতাই করে পুলিশ। দৈনিক একটি চাঁদার বিনিময়ে তারা চলতে দিচ্ছে এই ধংসযজ্ঞ। পাথর উত্তোলনে মৃত্যুর মতো ঘটনার পর দুয়েকদিন অভিযান চালানো হলেও পরে তা থেমে যায়। বাকি সময় চলে পাথরখেকোদের রাজত্ব।

এদিকে, সোমবার জাফলংয়ে মাটি চাপায় নারী শ্রমিক নিহতের ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই রাতেই রাতে নিহত শম্পা দাশ চম্পা’র মা রেখা দাশ বাদী হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামী করা হয় পাথর উত্তোলনের গর্তের মালিক খলিলুর রহমানকে। এছাড়াও মামলায় তার ব্যবসায়ী সহযোগী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা নানু মিয়াসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৫ জনকে আসামী করা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার নামীয় আসামী নানু মিয়াকে আটকের পর মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ।

Manual1 Ad Code

জানা যায়, পরিবেশ ধ্বংস ও শ্রমিকদের প্রাণহানির কথা মাথায় রেখে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাফলংকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। ইসিএ ঘোষণা হলেও স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে ভারি যন্ত্র দিয়ে বিশাল গর্ত খুঁড়ে যত্রতত্র অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। ঘটছে প্রাণহানির মত ঘটনাও।

অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে বদলে যাচ্ছে এ এলাকার প্রধান নদী পিয়াইনের গতিপথ। যত্রতত্র চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। বাদ যাচ্ছে না টিলা, সমতলভূমি, কৃষিজমি, নদীর তীরও। ভারি যন্ত্র আর বোমামেশিন দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনের কারণে ভাঙন-ঝুুঁকির মুখে পড়েছে চা বাগান, বসতভূমি ও স্থানীয় আধিবাসী সম্প্রদায়ের পান-সুপারী বাগান।

২০০৯ সালে পরিবেশ বিধ্বংসী যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ স্থানীয় প্রশাসনকে টাস্কর্ফোস অভিযানের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। ২০০৯ সাল থেকে চলিত বছরের প্রায় হাজার বার টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালনা করলেও বন্ধ হয়নি অবৈধ যন্ত্র ব্যবহার।

চলতি বছরের ১৬ জুলাই তারিখে জাফলংয়ে মন্দিরের জুম নামক এলাকায় টাস্কর্ফোস অভিযান পরিচালনা করে যন্ত্র ধ্বংসের পাশাপাশি অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলনের গর্ত ভরাটের জন্য গর্ত মালিকদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। একই সাথে উপজেলা ভূমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের বরারবরে সুপারিশ পত্র পাঠানো হয়। আল্টিমেটামের পর মন্দিরের জুম থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল কিছুদিন। তবে সুপারিশপত্র পাঠানোর চার মাস অতিবাহিত হলেও কোন কার্যকর পদেক্ষপ নিতে দেখা যায়নি পরিবেশ অধিদপ্তরকে। ফলে সেখানে আবারো শুরু হয় পাথরখেকোদের রাজত্ব।

Manual2 Ad Code

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক গর্তমালিক জানান, থানার ওসিকে জানিয়েই চলছে এসব। প্রতিটি গর্তে থেকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে থানাকে দিতে হয়।

তবে পুলিশ বলছে, রাতের আঁধারে এসব কাজ চলছে। শীতের মৌসুম হওয়ায় মাত্রই গর্ত খোঁড়া শুরু হয়েছে বলে দাবি তাদের।

গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোওয়ার হোসেন দাবি করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। পুলিশ এসব জায়গা থেকে কোনো চাঁদা নেয় না। বরং যেকোনো অভিযানে পুলিশ সহায়তা করে।

জানতে চাইলে এলাকায় টাক্সফোর্স পরিচালনার নেতৃত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার বলেন, এককভাবে পুলিশের ওপর দায় চাপানো যায় না। অসাধু লোকদের পুরো একটা সিন্ডিকেট হয়ে গেছে। যার কারণে বারবার অভিযান চালানোর পরও তাদের দমন করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এটার জন্য প্রধান দায়ি ভূমির মালিকরা। যাদের জমি খোঁড়া হচ্ছে তারা যদি বাধা দিত বা অভিযোগ তরতে তাহলে সহজেই এসব বন্ধ করা যেত। তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেন দাবি করে বলেন, অভিযানে পুলিশ-বিজিবি সবাই সহায়তা করে।

Manual8 Ad Code

গত জুলাই মাসের অভিযানের পর দেয়া সুপারিশ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আগস্টে এখানে এসেছি, পুরোটা বলতে পারব না। তবে নিয়মিত অভিযানের বাইরে কিছু হয়নি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2017
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..