সিলেট ১লা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:২১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক, গোয়াইনঘাট :: উত্তর সিলেটের সর্ববৃহৎ গোয়াইনঘাট উপজেলাটি দেশের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত হওয়ার কারণে এখানকার নো-ম্যান্সল্যান্ডটি প্রতিনিয়ত চোরাচালান সিন্ডিকেট’র দখলে থাকে। সীমান্তে বসবাসকারী শতকরা ৭০% লোক বালু-পাথর ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলো। কিন্তু চলমান সময়ে সরকার বাহাদুর কর্তৃক সকল ধরনের বালু-পাথর উত্তোলণ বন্ধ করে রাখার কারনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ। পরিবার-পরিজনের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে না পারায় ঐসকল লোকগুলো জড়িয়ে পড়ছে অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে। যার কারনে প্রতিনিয়ত সীমান্ত এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে দাবিত হচ্ছে। সেই সাথে ব্যাপকহারে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতার মাত্রা। এতে করে সীমান্তে চুরি,ডাকাতি,হত্যা ও অবৈধ পণ্য আনা-নেওয়াসহ বিভিন্ন অপকর্ম বেড়েই চলছে। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত অন্ধকার জগতের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে এসব অপকর্ম চলছে বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এসব অপরাধের সঙ্গে আগে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিল কিন্তু ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর আরোও ব্যাপকহারে চোরাচালানের রমরমা বাণিজ্য বেড়েই চলছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চোরাচালানের ভাগের টাকার হেরফের হলেই সীমান্তের এপার কিংবা ওপারে চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর এসব ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে।সিলেট’র গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন সীমান্তে চোরাচালানিরা কোন অবস্থায় কখনই থেমে নেই।
গত কয়েক মাস ধরে সীমান্ত অঞ্চলে র্যাব,গোয়েন্দা পুলিশ,বিজিবি সদস্যরা চোরাচালানী পণ্য উদ্ধার করলেও গরু, মহিষ ও বিভিন্ন ব্রান্ডের মাদক,কসমেটিক্সসহ নানাবিধ চোরাচালান পন্য কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা। সীমান্ত বেষ্ঠিত এ উপজেলার অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট দ্বারা প্রতিদিন কোন না কোন পথে প্রতিনিয়ত চোরাচালান পাচার অব্যাহত রয়েছে। চোরাকারবারীরা প্রতি মুহুর্তে রুট বদলাচ্ছে,যার কারণে নিরুপায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। অভিযানের পর অভিযানেও থামানো যাচ্ছে না চোরাচালানীদের কর্মকান্ড। চোরাকারবারীরা এখন ফুলেফেপে কোটিপতি। তাদের গোডাউনে রয়েছে লাখ লাখ টাকার ভারতীয় অবৈধ মালামাল। মাদকের কারণেই সীমান্ত উপজেলা গুলোতে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বএগর তুলনায় কযেকগুন বেশি। এতে করে সমাজের উঠতি বয়সি শিশু/যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন অপরাধমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত করছে নিজেকে। দিনদিন চারিদিকে খুন,রাহাজানি,চাঁদাবাজি,সংঘাত চরম আকার ধারন করেছে। যার ফলশ্রæতিতে উঠতি বয়সী যুব সমাজ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সরেজমিনে গোয়াইনঘাট উপজেলার, তামাবিল, সোনাটিলা, সংগ্রামপুঞ্জি, বিজিবিক্যাম্প, পান্তুমাই, সোনারহাটবি, ছনাকান্দি, বিজিবিক্যাম্প, দমদমা, কলুমছড়া, লক্কনছড়া, খাসিয়াপুঞ্জি, ৪৮বিজিবি শ্রীপুর ক্যাম্পসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতীয় চোরাকারবারীরা পণ্যসামগ্রী নিয়ে সীমান্ত এলাকায় জড়ো করে। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে পণ্যসামগ্রী গুলো ডিআই ট্রাক, প্রাইাভেটকার, পিকআপ ও নৌকা যোগে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে পুলিশ বলছে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং চোরাই পথে আসা ভারতীয় গরু,মহিষ,কসমেট্রিক্সসহ বিভিন্নপন্য ইতিমধ্যে আটকও করেছেন বলে দাবি তাদের।অনুসন্ধানে জানাগেছে, গোয়াইনাট উপজেলার স্থানীয় কিছু লোকের সঙ্গে ভারতীয় খাসিয়ারা আতাত করে চোরাকারবারের সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এত দুই পারের সিন্ডিকেট মিলে চোরাকারবারের পাশাপাশি অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে মানব পাচার ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেকে। বিনিময়ে ভারত থেকে আসে কাপড়, প্রসাধনী সামগ্রী, বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট,গরু ও মহিষসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য। বাংলাদেশ থেকে রসুন ও মাছসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে পাচার করে থাকে চোরাকারবারিরা। দুই-দেশের চোরাকারবারিদের মধ্যে লেনদেন নিয়ে বিরোধ দেখা দিলেই ভারতীয় খাসিয়ারা বাংলাদেশি চোরাকারবারিদের ডেকে নিয়ে খুন করে। স্থানীয় থানা পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে আতাত করে ভারত থেকে আনা হচ্ছে চিনি, গরু, মহিষ ও মাদক। এসব চোরাচালানের নিরাপদ জোন এখন গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট সীমাš এলাকা। চোরাচালানের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, চোরাচালানের পণ্যের মূল্য হুন্ডির মাধ্যমে চলে যায় ভারতের ব্যবসায়ীদের হাতে। চিনি, গরু ও মহিষের জন্য চোরাকারবারিরা ভারতে অগ্রিম টাকাও পাঠায়। গত ৫আগষ্টের পর আওয়ামীলীগ চলে গেলেও গডফাদারদের লেবাস পরিবর্তন হলেও থেমে নেই চোরাকারবারীদের দৌরাত্ব।
দেখা গেছে, ভারত থেকে অবৈধভাবে চোরাকারবারী একটি চক্রের মাধ্যেমে উপজেলার ১নং রুস্থমপুর ইউনিয়ন দিয়ে প্রতিদিন ভারতীয় গরু এনে স্থানীয় হাদারপাড় বাজার সংলগ্ন বিভিন্ন বাড়িতে রাখা হয়। সপ্তাহের প্রতি সোমবার এবং বৃহম্পতিবার বিক্রির জন্য হাদারপাড় বাজারে ড্রাম্পিং করে বৈধতার কাগজপত্র দিয়ে বিক্রি করা হয়। ঐ চক্রের মাধ্যেমে ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন দিয়ে ভারত থেকে বিভিন্ন মোটর যানের যন্ত্রাংশ এনে সিলেট শহর ছাড়াও বিভিন্ন খুচরা দোকানে বিক্রি করা হয়। ৩নং মধ্যে জাফলং ইউনিয়ন হয়ে ৫নং পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের কাকুনাখাই,নাইন্দার হাওর দিয়ে প্রতি রাতে হাজারো মহিষ ডিআই গাড়ি যোগে পাচার হয়ে থাকে। এতে থানা পুলিশ এর পাশাপাশী সামাজিক শেল্টার দিয়ে থাকে স্থানীয় আওয়ামী/বিএনপির কিছু নেতাকর্মীরা। আর এতে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে থানা পুলিশের বিট কর্মকর্তাদের যোগসাজেস তো রয়েছেই।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, আমি থানায় নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি ওয়াকিহাল নই, খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ ব্যাপারে বিজিবি সিলেট ৪৮ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাজমুল ইসলাম বলেন, চোরাকারবারিদের ধরতে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। অবৈধ মালামালসহ গ্রেফতারও হচ্ছে, তবুও বন্ধ হচ্ছে না চোরাচালান। আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে গোয়াইনঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছি এবং এটি চলমান রয়েছে। সড়কপথে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে থানা পুলিশ ও বিজিবি কাজ করছে।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd