ছাতক প্রতিনিধি :: ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ছিলেন ছাতকের তিন তরুণ। স্থানীয় দালালরা ইউরোপে পৌছে দেয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে বাংলাদেশীদের ইরানে নিয়ে জড়ো করেন। সেখান থেকে জাহাজে করে ইউরোপে পৌঁছে দেওয়া হবে দালালদের এমন প্রলোভনে পা দিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন উপজেলার পাইগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান। সোমবার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তার পরিবারকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
একই উপজেলার জালালীচর গ্রামের ইরান প্রবাসী এক দালালের লোভনীয় প্রস্তাবের ফাঁদে পা দিয়ে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে শিক্ষক মিজানুর রহমান গত ১৪ ডিসেম্বর ভ্রমণ ভিসায় পাড়ি জমান ইরানে। সেখানে প্রায় ১২দিন অবস্থান করে তুরস্ক সীমান্তের একটি হ্রদে ট্রলারডুবিতে তার মৃত্যু হয়। এ হ্রদটি ইরান সীমান্তের কাছে অবস্থিত। সেখান থেকে অভিবাসীরা প্রায়ই ইউরোপে যাওয়ার জন্য তুরস্কে প্রবেশ করেন। ওই দুর্ঘটনার পর ৬৪ জনকে উদ্ধার করে কাছের হাসপাতাল ও আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৬ ডিসেম্বর গ্রিনিচ মান সময় রাত ১২টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। হ্রদটি পুরোপুরি তুরস্কের ভেতরে অবস্থিত। নৌকাটি হ্রদের উত্তর তীরে যাওয়ার সময় ডুবে যায়। এতে আরো পাঁচজন ঘটনাস্থলে এবং দুজন হাসপাতালে মারা যান।
একই ট্রলারে দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের চেচান গ্রামের মৃত হাজী জমসিদ আলী তালুকদারের ছেলে আলাল মিয়া তালুকদারের (৩৬) মৃত্যু হয়। আলাল মিয়ার বড় ভাই কিরন মিয়া তালুকদার জানান, আলাল মিয়া ১২ বছর ধরে ওমানে অবস্থান করছিলেন। ওমান থেকে ইরাক ও তুরস্ক হয়ে একই নৌকায় ইউরোপে যাওয়ার পথে ট্রলারডুবির ঘটনায় আলাল মিয়াও মারা যান।
এদিকে, গত ২২ ডিসেম্বর জাউয়া বাজার ইউনিয়নের মোঘলগাঁও গ্রামের মৃত আরশ আলীর ছেলে আব্দুল মালেক (৩২) মরক্কো থেকে স্পিডবোটে করে সাগর পথে স্পেন যাওয়ার সময় নিহত হয়েছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে মরক্কো থেকে স্পিডবোটে স্পেনে যাওয়ার কথা ছিল তার। গত ৮ মাস আগে আব্দুল মালেক ইউরোপ যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে বিমান যোগে আলজেরিয়া যান। পরে আলজেরিয়া থেকে সড়ক পথে মরক্কো গিয়ে অবস্থান নেন। মালেকের সহযাত্রী সিংচাপইড় ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের আবুল হাসনাত তার পরিবারকে মুঠোফোনে জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর সাগর পথে স্পেন পৌঁছানোর পূর্বে একই স্পিডবোটে মরক্কো থেকে স্পেনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। ভূমধ্যসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে একপর্যায়ে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে পানিতে পড়ে যান। এরপর থেকে আব্দুল মালেককে খোঁজে পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামালের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এই বিষয়ে নিয়ে কেউ কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি।
Sharing is caring!