সিলেট ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:০০ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পৃথিবী জুড়েই চিকিৎসা নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে চিকিৎসা এখন পণ্য। মিশনারিজদের হাতে উপমহাদেশে হাসপাতাল সংস্কৃতির গোড়াপত্তন হয়েছিল। তারা মশলার জাহাজে চড়ে, বগলে বাইবেল নিয়ে ইউরোপ থেকে এসেছিলেন। চিকিৎসার সাথে সাথে তাদের একটা হিডেন এজেন্ডাও ছিল। প্রভু যীশুর ব্র্যান্ডিং করা। উপরে যীশু নিচে ডাক্তারের নাম নিয়ে ওষুধ বড়ি খেয়ে, আর কাজ না হলে হাওয়া বদল করতে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এই ছিল চিকিৎসা।
সেই থেকে ধারণা হলো চিকিৎসা হচ্ছে একধরণের আধ্যাত্মিক ব্যাপার- নিঃস্বার্থ সেবা। ডাক্তার হলো দ্বিতীয় ভগবান।
কিন্তু সময় গড়িয়েছে। বিজ্ঞান এগিয়েছে। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাখাতে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। পুঁজি বাজারের বিকাশ হয়েছে। পুঁজি বাজার অর্থনীতিতে পুঁজিই হলো ঈশ্বর। চিকিৎসা কনজিউমার প্রোডাক্ট। দ্বিতীয় ভগবান ডাক্তাররা এখন আর মিশনারিজদের মত সাদা পোশাক পরে যীশু যীশু করেনা। তারা বিয়ে করে, সংসার হয়, বাচ্চা-কাচ্চা হয়। বাচ্চা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। দ্বিতীয় ঈশ্বর গাড়িতে চড়ে, ফ্ল্যাট বাড়ি কেনে, বিদেশে ভ্রমন করে।
বর্তমান পৃথিবীতে ‘কর্পোরেট হাসপাতাল’ বলে একটি শব্দই তৈরি হয়েছে। সেটা হয়েছে জনগণের চাহিদা মোতাবেকই। সমাজের একটা শ্রেণী, যাদের হাতে টাকা আছে তারা বিলাসিতা চায়, স্বস্তি আর আরাম চায়। যার নেই সেও কামনা করে। দেশীয় ডাক্তারদের উপর ভরসা নেই বলে যারা বিদেশ যায় তারাও মূলত বাণিজ্যিক হাসপাতালেই যায়। ভারতের ফর্টিজ, এপোলো, সিংগাপুরের জেনারেল হাসপাতাল, ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ বা পাতায়া হাসপাতালের কাছে আমাদের দেশীয় চিকিৎসা বাণিজ্য নেহাত শিশু। ওসব হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যায় আমাদের দেশের দশগুন। ওরা একে নাম দিয়েছে হেলথ ট্যুরিজম। কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য।
বাণিজ্য মাত্রেই খারাপ কিছু নয়। সমাজ দাঁড়ায় ব্যাবসা বানিজ্যের উপরই। সরকার সবকিছু দেবে না, আশাও করা ঠিক না। বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। সরকারি হাসপাতালে যেমন রোগী যায়, তেমন রোগী বেসরকারি হাসপাতালেও যায়। একারণে দেশে দিন দিন বেসরকারি হাসপাতাল বাড়ছে। সুযোগ সুবিধা বাড়ছে। ডায়াগনস্টিক ফ্যাসিলিটি বাড়ছে। আবার সরকারি হাসপাতাল সবগুলো রোগীশূন্য হয়ে যাচ্ছে এরকমও না।
দেশের চিকিৎসায় জনগণের আস্থা নেই এটাও ঠিক না। বিদেশি চেইন হাসপাতালগুলো এখন বাংলাদেশে হাসপাতাল করার জন্য উদগ্রীব। দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও হাসপাতাল খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছে। স্কয়ার, ইউনাইটেডের পর এখন আকিজ গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, বিআরবি গ্রুপও আধুনিক হাসপাতাল করেছে। মানুষের আস্থা আছে বলেই ব্যাবসায়ীরা বিনিয়োগ করছে, না থাকলে হতো না।
আজকে যদি দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে যায়, নিশ্চিত দেশে হাহাকার পড়ে যাবে। আর ব্যাবসা ছাড়া এগুলো টিকবেও না। সুতরাং বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবসা লাগবেই। মাউন্ট এলিজাবেথ যেটা করছে সেটাও ব্যাবসা। ব্যবসা মাত্রেই খারাপ কিছু না।
নিজ দেশের ডাক্তারদের প্রতি আস্থা রাখতে না পারাটা একধরণের কমন মাইন্ড সেটিং। এটা সারা দুনিয়াতেই কম বেশি আছে। যে ভারতীয় ডাক্তাররা আমাদের চোখে ভগবান তাদের নিয়েই নচিকেতা “ও ডাক্তার” গান লিখেন। কেরালার ডাক্তার ও নার্সরা জগত বিখ্যাত। কেরালারা জনগণ ডাক্তার পিটানোতেও উপরেই আছে। ইউটিউবে বেশ কিছু ভিডিও আছে। ডাক্তার নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অস্ট্রেলিয়া কঠোর আইন করেছে। তার মানে ওখানেও ডাক্তার আক্রান্ত হয়।
তাই বলে বলছি না আমাদের ডাক্তারদের সমস্যা নেই। সমস্যা জর্জরিত সমাজে সমস্যা থাকবে না এটা ভাবা তো বোকামি। কিন্তু সেটা এমন নয় যে এখানে কিচ্ছু হয়না। এমন নয় যে এদেশে কোন চিকিৎসা হয় না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd