সিলেট ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০১৯
যেন হাত দিয়ে আকাশ ছুঁয়েছেন নাসিমা। ছোট বাচ্চাদের মতো কাঁদছিলেন। এভাবে স্বপ্নের চাকরি হবে এটি ভাবতেই পারেননি তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, চাকরি তো হলো এখন ডাক্তারী পরীক্ষার ৬ হাজার টাকা কার কাছ থেকে পাবো জানি না। বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ লাইন্সে কনস্টেবল পদে নিয়োগের খবর জেনে আনন্দে-আবেগে কাঁদছিলেন নাসিমা রহমান।
নাসিমার বাড়ি দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামে। বৃদ্ধ বাবা লাল মিয়া বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং মা গৃহিনী আম্বিয়া খাতুন। তাদের তিন ছেলে এবং পাঁচ মেয়ের মধ্যে নাসিমা সবার ছোট। বাড়ি’র ভিটে ছাড়া তাদের আর কোন সম্পদ নেই। বড় দুই ভাই বিয়ে করে পৃথক সংসার করছে। ছোট ভাই ছাফুর উদ্দিন মা-ভাই বোনদের নিয়ে বর্গা চাষ করে কোনভাবে সংসার চালায়।
নাসিমা বললো, তার বড় বোনেরও স্বপ্ন ছিলো পুলিশ বাহিনীতে চাকুরি করার। কিন্তু স্থানীয় অনেকে জানালেন, ৫ লাখ টাকা ঘুষ লাগে, সে জন্য স্বপ্ন ভেঙে যায় তার স্বপ্ন।
এবার সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান ১০০ টাকায় চাকুরি হবে ঘোষণা দেওয়ায় বড় ভাই শাহীদ মিয়ার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে আবেদন করে সাহস করে লাইনে দাঁড়ান তিনি। ফলাফল ঘোষণা’র পর প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি তার, পরে নিজের চোখে রোল নম্বর দেখে কাঁদতে থাকেন তিনি।
চরম দারিদ্রতার মধ্যেও লেখাপড়া করছেন নাসিমা। এবার লিয়াতকগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় এ- কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী তিনি।
নাসিমা জানালেন, তার চাকরি পাওয়া পুরো পরিবারটির কাছেই একটি স্বপ্ন পূরণ হওয়া।
শাহীন আহমদ
এর আগেও পুলিশে চাকরি হয়েছিল। ভ্যারিফিকেশনের সময় ভূমিহীন থাকায় তাকে চাকরি দেওয়া হয়নি ।
সংসারের হাল ধরতে ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নেন শাহীন আহমদ। মাস শেষে বেতন পেতেন ৭ হাজার টাকা। ৪ মাস করেন চাকরি। অভাব-অনটনের সংসার। তবুও সিলেট এমসি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে এবার ভর্তি হয়েছেন শাহীন।
স্বপ্ন থেমে থাকেনি তার। উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মধুয়ারচরে বাবা মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই করায় এবার আবার আবেদন করেন তিনি। পিতা দিনমজুর নওসাদ আলী এবং মা গৃহিনী মিনা বেগম’এর ইচ্ছা ছেলেটি পুলিশের চাকরি করবে।
চলতি বছরে পুলিশের চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে আবারোও আবেদন করেন শাহীন।
নিয়োগ পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর শত শত পরীক্ষার্থীর উপস্থিতিতেই কাঁদতে থাকেন শাহীন।
শাহীন জানালেন, তার এবং তার বাবা-মা’র স্বপ্ন পূরণ হবার পথ তৈরি হয়েছে। গত নিয়োগে পুলিশে চাকুরি হওয়ার পর ভূমিহীন হওয়ার কারণে চাকুরি হয়নি তার। এবার বাবা মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন, এজন্য চাকরি হয়তো হবে তার।
শাহীন বললো, চাকরিটি আমার কাছে অনেক বড়, যারা পরীক্ষা নিয়েছেন, তাঁরাসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। আমি যতদিন চাকরি করবো, ভূমিহীন কাউকে পেলে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
স্বপন রবি দাস
স্বপন রবি দাস কখনো নৌকায় দিনমজুরের কাজ আবার কখনো জুতা সেলাইয়ের কাজ করেছেন। একই সঙ্গে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সুরমা স্কুল এন্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছিলেন তিনি।
ছোটকাল থেকেই পুলিশের চাকুরি ছিল স্বপ্ন। বৃহস্পতিবার পুলিশের নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল বেরোনোর পর আনন্দে কেঁদে ফেলেন তিনি।
স্বপন রবি দাসের বাড়ি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গণিগঞ্জ গ্রামে। পিতা বাশি রাম রবি দাস ও মা ময়নামতি রাণী রবি দাস।
বাশি রাম রবি দাস গণিগঞ্জ বাজরে ফুটফাতে বসে মুচির কাজ করেন। তাদের তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে চতুর্থ স্বপন।
স্বপন বললো,‘মুরির সন্তানরা সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। অনেকে অবহেলার চোখে দেখে। অনেক সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয় তারা।
চাকরি পাওয়ার নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন হয়েছে জানিয়ে স্বপন বললো, এই চাকরি কেবল তার নয়, তার পুরো পরিবারের সামাজিক অবস্থান বদলে যাবে।
স্বপন কৃতজ্ঞতা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান’র প্রতিও কৃতজ্ঞ তিনি।
প্রসঙ্গত. সুনামগঞ্জে বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে ২৫৫ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ হয়েছে। এরমধ্যে সাধারণ কোটায় পুরুষ ১২৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুরুষ ৭২ জন, নারী সাধারণ কোটায় ৪৫ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নারী ৭ জন, পুলিশ পোষ্য ৩ জন, উপজাতি ২ জন, আনসার ৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd