ঢাকা-সিলেট সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ, বিকল্প সড়কগুলো বেহাল

প্রকাশিত: ৯:৩৭ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০১৯

ঢাকা-সিলেট সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ, বিকল্প সড়কগুলো বেহাল

Manual4 Ad Code

দুই মহাসড়কের গাড়ি অর্থাৎ ঢাকা-সিলেট এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের যানবাহন চলাচল করছে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে। আর এতে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে এই সড়কটির। এক বছর ধরেই বেহাল এই সড়ক। রাস্তাজুড়ে হাজারো খানাখন্দ। বৃষ্টির পানি জমে সড়কের কোথাও কোথাও পুকুরের আকৃতি হয়েছে। মানুষ ঠেকায় পড়েই যেন চলছিল এতদিন। যানবাহনের চলাচলও কমে গিয়েছিল। জেলার বিজয়নগর উপজেলার প্রধান সড়ক এটি।

এই সড়কেই ঢল নেমেছে এখন হাজারো গাড়ির। ভোগান্তি উঠেছে চরমে। সাড়ে ৫ মিটার পাশের ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। বিকল্প আরো দুটি সড়ক সরাইল-নাসিরনগর হয়ে লাখাই এবং রতনপুর দিয়েও চলাচল করছে ঢাকা-সিলেট গন্তব্যের যানবাহন। নাসিরনগরের ফান্দাউক-রতনপুর সড়কে ভারী যানবাহনের চাপে কয়েক ঘণ্টাতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়কের অন্তত ৮-১০ জায়গায় মরণ ফাঁদ তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ব্রিজ ও রাস্তার পাশে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত।

Manual6 Ad Code

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুরে তিতাস নদীর ওপর সেতুটির চতুর্থ স্পেনের ফুটপাতসহ রেলিং ভেঙে পড়ে। এরপরই সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সব ধরনের ভারী ও মাঝারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর ওপর দিয়ে। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-সিলেট সরাসরি সড়ক যোগাযোগ। এরপরই বিকল্প পথ হিসেবে চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে ঢাকা-সিলেট, কুমিল্লা-সিলেট এবং চট্টগ্রামের বেশিরভাগ যানবাহন চলতে শুরু করে। আর এতে এই সড়কের বিভিন্নস্থানে প্রকট যানজট দেখা দিচ্ছে। বিকল্প আরো দুটি সড়ক থাকলেও চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক দিয়ে দুই মহাসড়কের যানবাহন চলাচল করায় এদিক দিয়ে ভোগান্তি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বিজয়নগর বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান দীপক চৌধুরী বাপ্পী জানান-বুধবার বিকলা ৫টার দিকে তিনি বিজয়নগরের সিংগারবিল থেকে চান্দুরা রওনা হন। ১৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ৫ ঘণ্টারও বেশি। রাত সাড়ে ৯টার পর চান্দুরা পৌঁছান তিনি। সিএনজি অটোরিকশা, রিকশা, সবশেষ পায়ে হেঁটে এই পথ পাড়ি দেন। সড়কের কালীরবাজার, মোল্লারটেক, নোয়াগাঁও, আড়িয়ল এসব এলাকায় যানজট বেশি বলে জানান বাপ্পী। মানবজমিনের বিজয়নগর প্রতিনিধি আমিরজাদা চৌধুরী সরজমিনে দেখে জানিয়েছেন- চম্পকনগর থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লেগেছে তার সাড়ে ৩ ঘণ্টা। সড়কটি দিয়ে পুরোদমে যাত্রীবাহী বাস ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে। মহাসড়কের যানবাহনের কারণে স্থানীয় যানবাহন বিশেষ করে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এলাকার মানুষকে চলতে হচ্ছে পায়ে হেঁটেই। এর বাইরে উপজেলার ভেতরের সড়ক ব্যবহার করে যতটুকু পারছেন সিএনজি করে চলছেন তারা। তাছাড়া যানজটের কারণে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী গাড়ির নারী-শিশু যাত্রীরাও অনেক কষ্ট সইছেন। দুর্ঘটনাও ঘটছে। চম্পকনগরের মোল্লারটেকে বুধবার রাতে পাথরবাহী ট্রাক উল্টে পড়ে।

Manual2 Ad Code

মোল্লারটেক এবং আড়িয়লে আরো মালবাহী দুটি গাড়ি উল্টে পড়ে রাস্তার পাশে। বিজয়নগর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে- চান্দুরা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ কিলোমিটারই বিজয়নগর উপজেলায়। ২০১৮ সালে সড়কটি মেরামত করা হয় ২৪ লাখ টাকায়। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরো ৬ লাখ টাকার কাজ করা হয়। কিন্তু এসব কোনো কাজই টিকেনি। লোক দেখানো কাজ করে টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। প্রথম দফায় হওয়া ২৪ লাখ টাকার কাজের তেমন অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে ঠিকাদারের বিল আটকে দেয়া হয়। পরে ঠিকাদারকে দিয়ে আরো ৫ লাখ টাকার কাজ করিয়ে ওই বছরের জুনে বিল পরিশোধ করা হয় বলে জানিয়েছেন এলজিইডি’র কর্মকর্তারা। চান্দুরা-আখাউড়া সড়ক বিজয়নগর উপজেলার প্রধান রাস্তা হলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চান্দুরা থেকে কুমিল্লা বা চট্টগ্রাম যাওয়ার বিকল্প সড়ক হিসেবেও ব্যবহার হয় এটি। জেলা সদরে না গিয়ে এই সড়ক দিয়ে আখাউড়া বাইপাস সড়কে এসে সুলতানপুর-আখাউড়া বা আখাউড়া-কসবা সড়ক দিয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যুক্ত হওয়া যায়।

Manual2 Ad Code

তাছাড়া এই সড়ক দিয়ে আখাউড়া স্থলবন্দরে যাওয়া -আসা করে পণ্যবাহী ট্রাক। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক বেহাল। চলাচলে নাভিশ্বাস উঠে এলাকার মানুষের। তাদের দৃষ্টিতে জেলায় এরচেয়ে খারাপ রাস্তা আর নেই। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা, গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এলাকার চালকরা আরো আগে থেকেই গাড়ি চলাচল কমিয়ে দেন এই সড়কে। সড়কটির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চান্দুরা থেকে কালীরবাজার পর্যন্ত। এখন শতশত গাড়ির যাঁতাকলে সড়কের অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় সড়ক টিকিয়ে রাখার পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি’র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন-‘সড়কতো ভাঙবেই’। তবে মাস খানেকের মধ্যে সড়কের কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন। তিনি জানান- বিজয়নগরের এই সড়ক এবং কসবার আরেকটি সড়কের কাজের জন্য একত্রে ৪৪ কোটি টাকার দরপত্র হয়েছে। দরপত্রের ইভ্যালুয়েশনও শেষ হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিদেশি প্রকল্পের অধীনে কাজটি হবে বলে এর দরপত্র প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে বলেও জানান তিনি। ৪৪ কোটি টাকার মধ্যে বিজয়নগরের এই সড়কের জন্য বরাদ্দ ২৪ কোটি টাকা।

উপজেলা প্রকৌশলী বলেন- মূল কাজ না হওয়া পর্যন্ত মানুষ স্বস্তি পাবে না। তারপরও আমরা যতটুকু পারি স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করছি। তাছাড়া সড়কের এই অবস্থার কারণে আমরা নিজেরাও ভোগান্তির শিকার। প্রতিনিয়তই আমাদেরকে এই সড়ক দিয়ে চলতে হয়। নাসিরনগর প্রতিনিধি জানান, নাসিরনগরের ফান্দাউক-রতনপুর আঞ্চলিক সড়কের প্রতিটি ব্রিজ ও রাস্তার পাশে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া রাস্তায় স্থানীয় ছোট ছোট যানবাহন যেমন সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারছে না মহাসড়কের গাড়ির চাপে। এমনকি মানুষ পায়ে হেঁটেও চলাচল করতে পারছে না। সরাইল থেকে নাসিরনগরের ফান্দাউক পর্যন্ত যানবাহনের তীব্র জটও রয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে নাসিরনগর আশুরাইলের সীমানায় মহাখালের ওপর নির্মিত একটি এবং শ্রীঘর মেন্দি আলীর বাড়ির কাছে নির্মিত আরেকটি ব্রিজ যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুটি ব্রিজই অনেক পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

মাধবপুরে গাড়ির দীর্ঘ লাইন, ঢাকা সিলেট মহাসড়কে সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ থাকায় শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা পর্যন্ত যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। সিলেট থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী কিছু বাস মাধবপুর উপজেলার রতনপুর থেকে ছাতিয়াইন-নাসিরনগর, সরাইল হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিশ্বরোড হয়ে ঢাকা যেতে হচ্ছে। এতে প্রচুর সময় ব্যয় হচ্ছে।

তাজ, মিতালীসহ বেশকিছু যাত্রীবাহী বাস মাধবপুর থেকে সিলেট যাত্রী নিয়ে যেতে দেখা গেছে। তবে অনেক যাত্রী ঢাকা থেকে শাহবাজপুর এলাকায় নেমে ব্রিজ পার হয়ে অটোরিকশা দিয়ে মাধবপুর এসে হবিগঞ্জের বাস দিয়ে সিলেট যেতে দেখা গেছে। মিতালী পরিবহনের সুপার ভাইজার দোলোয়ার হোসেন জানান, শাহবাজপুর ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার কারণে মাধবপুরে অনেক বাস, ট্রাক আটকা পড়েছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

মাধবপুর উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেপাল দাস জানান, শাহবাজপুর ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর বিভিন্ন স্থানে বাস, ট্রাক আটকা পড়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা কষ্ট করতে দেখা গেছে। রতনপুর-ছাতিয়াইন সড়কটি সরু। বড় গাড়ি চলাচল অনেক কষ্টকর। বিকল্প রাস্তা হিসেবে অনেক গাড়ি এই রাস্তাটি ব্যবহার করলেও ঢাকা যেতে অত্যধিক সময় ব্যয় করতে হবে। ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।
মাধবপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোসলে উদ্দিন জানান, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সড়কের শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখতে পুলিশ রাতদিন কাজ করছে।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..