ইমামকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ায় বড়লেখায় আইনজীবী আবিদাকে হত্যা

প্রকাশিত: ৫:৪৪ অপরাহ্ণ, জুন ১, ২০১৯

ইমামকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ায় বড়লেখায় আইনজীবী আবিদাকে হত্যা

Manual3 Ad Code
আইনজীবী আবিদা সুলতানের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ইমাম তানভির আলমের পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে আবিদা ইমামকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তানভিরের বাড়ি ছাড়ছিলেন না। এনিয়ে দ্বন্ধ তৈরী হয়। ঘটনার দিন তানভীরের সাথে আইনজীবীর কথাকাটাকাটি হয়। পরে তানভির ক্ষোভে আইজীবীকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে পানির ফিল্টারের পাথর দিয়ে আঘাত করায় আবিদার মৃত্যু হয়।

শনিবার মৌলভীবাজার মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল ইসলাম।

তিনি আরোও বলেন, ৩১শে মে বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতে তানভির বিষয়টি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এই হত্যার সাথে শুধু তানভীরই জড়িত। ঘটনার দিন ২৬ মে তানভির বাড়িতে একা ছিল। তার মা ও স্ত্রী বাহিরে ছিলেন। আর ধর্ষণেরও কোন আলামত পাওয়া যায় নি।

Manual5 Ad Code

তিনি বলেন, আবিদা তানভিরকে বলেছিলেন তার লুঙ্গি খুলে ফেলবেন। এই কথার ক্ষোভ থেকেই তানভির আবিদাকে আঘাত করার পর শরীর থেকে কাপড় খুলে ফেলে। তবে ধর্ষণের কোন আলামত তদন্ত ও মেডিকেল কিংবা তানভিরও স্বীকারোক্তি দেয়নি। এঘটনার সাথে পরিবারের অন্য কেউ জড়িত নয়। ঘটনার দিন সকাল ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে আবিদাকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের প্রয়াত আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়ে। তার স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি দ্বিতীয় মেয়ের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে থাকেন। মেয়েদের মধ্যে আবিদা সুলতানা (৩৫) সবার বড়। তিনি মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। আবিদার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে মৌলভীবাজার শহরে বসবাস করতেন। ছুটির দিনে প্রায়ই পৈতৃক বাড়ি দেখাশোনা করতে যেতেন আবিদা।

পৈতৃক বাড়িতে চার কক্ষবিশিষ্ট ঘরের দুই কক্ষে আবিদা সুলতানা ও তার বোনেরা বেড়াতে আসলে থাকেন। বাকি দুটোতে ভাড়া থাকতেন তানভীর আলমের পরিবার। তিনি তাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম। ঘটনার প্রায় চার মাস আগে তানভীরকে বাসা ভাড়া দেন আবিদ।

Manual6 Ad Code

২৬ মে সকালে আবিদা সুলতানা বিয়ানীবাজার থেকে ঘটনাস্থলের বাসায় পৌঁছান। সকাল অনুমান সাড়ে এগারোটার দিকে ফোন দিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন ইফতারের আগে মৌলভীবাজার শহরে পৌঁছাবেন বলেও জানান। এরপর বিকেল অনুমান ৫টার সময় তার স্বামীর মুঠোফোন হতে ফোন দিলে তার মুঠোফোনে বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর আবিদা সুলতানার স্বামী ও বোনরা তাকে খুঁজতে বাবার বাড়ি মাধবগুল গ্রামে আসেন। বাড়িতে এসে তারা ঘরের কক্ষ বন্ধ দেখতে পান।

এ সময় বাসার ভাড়াটিয়া তানভীর আলমের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের এক আত্মীয় বাড়িতে তানভীরের মা ও স্ত্রী ছিলেন। পরে তাদের কাছ থেকে চাবি এনে ওই দিন (২৬ মে) রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘরের দরজা খুলে দেখে আবিদা সুলতানার মৃতদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। পুলিশ ওই দিন রাতেই তানভীর আলমের স্ত্রী ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে।

Manual1 Ad Code

পরদিন ২৭ মে দুপুরে শ্রীমঙ্গলের বরুণা এলাকা থেকে ইমাম তানভীর আলমকে আটক করা হয়। ওইদিন দিবাগত রাতেই বড়লেখা থানায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন আবিদা সুলতানার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া।

মামলার আসামিরা হচ্ছেন- আবিদা সুলতানার বাবার বাসার ভাড়াটিয়া তানভির আলম (৩৪), তানভিরের ছোট ভাই আফছার আলম (২২), স্ত্রী হালিমা সাদিয়া (২৮) এবং মা নেহার বেগম (৫৫)। তাদের স্থায়ী ঠিকানা সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার ছিল্লারকান্দি।
মামলার পরই তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে বড়লেখার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমারের আদালতে হাজির করে ১০দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ।

Manual1 Ad Code

শুনানি শেষে আদালত তানভীর আলমের ১০ দিন এবং তাঁর স্ত্রী সাদিয়া ও মা নেহার বেগমের আটদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ঘটনার পর থেকে তানভীরের ছোট ভাই আফছার আলম পলাতক রয়েছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..