রাত গভীর হলেই শুরু হয় অশ্লীলতা

প্রকাশিত: ৮:১৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০১৯

রাত গভীর হলেই শুরু হয় অশ্লীলতা

Manual5 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় গোপীনাথপুর মন্দিরের আয়োজনে চলছে দোল পূর্ণিমার মেলা। ২০ মার্চ দোল পূর্ণিমার দিন থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। ২০ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ দিনের জন্য এ মেলার অনুমতি দেয় প্রশাসন। কিন্তু পরে প্রশাসন ম্যানেজ করে মাসব্যাপী করা হয় মেলার আয়োজন। মাসব্যাপী এ মেলার নামে চলে অশ্লীল নাচ। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেলা কমিটি কোনো যাত্রা বা সার্কাসের অনুমতি না চাইলেও একটি যাত্রা ও একটি সার্কাসের অনুমতি নেয় স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এ যাত্রা ও সার্কাস থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছে প্রভাবশালীরা।

Manual5 Ad Code

মাসব্যাপী চলা যাত্রা ও সার্কাসে রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মাইকে হিন্দি গান। গানের তালে তালে চলে অশ্লীল নাচ। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এমন কর্মকাণ্ড।

এদিকে, যাত্রা ও সার্কাসের আড়ালে অশ্লীল নাচের আয়োজন হওয়ায় মেলার আশপাশের কয়েকটি গ্রামের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীসহ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে। মেলার অশ্লীল নাচ-গানের দিকে ঝুঁকছে হাজার হাজার কিশোর, যুবক ও শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

মেলা এলাকায় রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। মেলাকে কেন্দ্র করে এসব প্রতিষ্ঠানের মাঠ দখল করে অসংখ্য দোকান গড়ে ওঠায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম।

জানা যায়, প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে ১৪৯২ থেকে ১৫৩৫ খ্রিষ্টাব্দের শাসক নবাব আলাউদ্দিন হোসেন শাহ গোপীনাথপুরে বেড়াতে আসেন। তখন এখানে নন্দিনী প্রিয়া নামে এক সাধকের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে প্রায় ৬০৪ একর জমি দান করেন নবাব আলাউদ্দিন হোসেন শাহ। তখন থেকে প্রতি বছর দোল যাত্রা ও মেলা উৎসব চলে আসছে। কিন্তু একশ্রেণির প্রভাবশালী সেই ঐতিহ্য নষ্ট করে মেলার নামে অশ্লীল নাচের আসর বসিয়েছে।

প্রতি বছর মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। বিনোদনের জন্য ঘোড়া ও গরু-মহিষের বিরাট হাট বসে। সেই সঙ্গে শিশুদের খেলনা, পুতুলনাচ, মৃত্যুকূপ, মোটরযান খেলা, হরেক রকমের মিঠাই-মন্ডা আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দোকানি ও ব্যবসায়ীরা। এতে মেলায় মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকে। ফলে অবিলম্বে মেলায় অশ্লীল নাচ, সার্কাস ও পুতুলনাচ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা।

Manual6 Ad Code

একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, মেলায় অশ্লীল গান ও নাচের কারণে নারীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাগামী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে মেলায় আগত বখাটেরা। মেলাকে কেন্দ্র করে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে দিতে চায় না অনেক বাবা-মা। মেলায় যাত্রা, সার্কাস ও অশ্লীল নাচ-গানের শব্দে আমাদের পড়াশোনায় সমস্যা হয়। যত দ্রুত সম্ভব এই মেলা বন্ধের আহ্বান জানাই আমরা।

গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমীন বলেন, স্কুল চলাকালীন মেলার মাইকে গান বাজানো হয়। গানের শব্দে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। আমাদের স্কুল মাঠের প্রাচীর নেই। ফলে মেলায় আসা দোকানদাররা এবার আমাদের মাঠে দোকান বসিয়েছে। মাঠে চুলা তৈরি করে রান্নাবান্না ছাড়াও বিভিন্ন কাজ করছে। ফলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। মেলার কারণে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া নষ্ট হচ্ছে।

গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, স্কুলের গেটে ও মাঠে দোকান বসানো হয়েছে। স্কুল প্রাঙ্গণ দিয়েই মেলায় আসা লোকজন চলাচল করছে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া করতে সমস্যা হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে আসতে দিতে চান না বাবা-মা। গভীর রাতে মাইকে অশ্লীল গানের তালে তালে নাচ হয়। এই মেলা বন্ধ করা জরুরি।

গোপীনাথপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরজুমান্দ বানু বলেন, স্কুলের মাঠ ফাঁকা হওয়ায় এখানে ট্রাক, ভটভটিসহ অনেক গাড়ি রেখেছে মেলায় আসা লোকজন। মেলায় আসা লোকজনের ভিড়ের কারণে মেয়েদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।

মন্দিরের সেবায়েত ও মেলা মালিক রনেন্দ্র কৃষ্ণ প্রিয়া খোকন বলেন, ২০ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত মেলার অনুমতি ছিল। মেলা চলাকালীন যাত্রা ও সার্কাসের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। আমি কোনো যাত্রা বা সার্কাসের অনুমতি চাইনি। একটি যাত্রা ও একটি সার্কাস চালানোর অনুমতি স্থানীয় লোকজন ও সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা নিয়েছেন। থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মেলা ও সার্কাস চালাচ্ছেন তারা। এখন যেসব অশ্লীল পুতুল নাচ ও অন্যান্য যা চলছে তার কোনো অনুমতি নেই। আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত মেলা চালানোর অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এটি করেছেন।

এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশ নিয়ে আমি মেলায় গিয়ে অশ্লীল যাত্রাপালা, পুতুল নাচ ভেঙে দিয়েছি। এরপর যদি আবার গড়ে ওঠে তাহলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব।

Manual2 Ad Code

এ বিষয়ে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, গোপীনাথপুরের মেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী মেলা। প্রতি বছর এ মেলা হয়। মেলায় যদি অশ্লীল নাচ বা কোনো অনিয়মের অভিযোগ আসে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Manual1 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2019
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..