মোগলাবাজারে আছিয়া হত্যা : আদালতে তিন জনের স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ১০:০৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮

মোগলাবাজারে আছিয়া হত্যা : আদালতে তিন জনের স্বীকারোক্তি

Manual8 Ad Code

সুলতান সুমন :: সুদের বিশ হাজার টাকা ফেরত না দিতে খুন করা হয় আছিয়াকে। এমনইসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজারে আমেরিকা প্রবাসির বাড়ির কেয়ার টেকার (তত্বাবধায়ক) আছিয়া বেগম হত্যা ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক তিনজন। রবিবার বিকালে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম তিনজনের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন। স্বীকারোক্তি শেষে সন্ধ্যায় তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আজবাহার শেখ।

Manual5 Ad Code

তিনি জানান, তার নেতৃত্বে ও মোগলাবাজার থানার ওসি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সহ থানার পুলিশদের নিয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রবিবার ভোরে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক পুলিশি অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়, মোগলাবাজার থানার রাঘবপুর গ্রামের নুনু মিয়ার ছেলে আব্দুল বাছিত (২০) , একই থানার তুরখকলা গ্রামের মাওলানা আকবর আলীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহাদি (১৮), বিন্নাকান্দি গ্রামের মৃত ইনসান আলীর ছেলে কামিল আহমদ তাজমুলকে আটক করা হয়। আটকের পরই তিনজনই ডাকাতি করে মালামাল লুট করে আছিয়া বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তাছাড়া আটকের সময় আব্দুল বাছিতের কাছ থেকে প্রবাসির বাড়ির লুন্ঠিত ১২ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আজবাহার শেখ আরো জানান, মোগলাবাজার থানার হরগৌরি গ্রামের আমেরিকা প্রবাসি আবু বক্কর এর বাড়ির তত্বাবধায়ক ছিলেন জৈন্তাপুর থানার চিকনাগুল পানিছড়া গ্রামের মাখন মিয়ার স্ত্রী আছিয়া বেগম (৪০)। তার পূর্ব পরিচিত ছিল হরগৌরি গ্রামের সুমন। সেই সুমন পেশায় একজন লেগুনা চালক ছিলো। আর নেতৃত্বেই প্রবাসির বাড়িতে ডাকাতি করে খুন করা হয় আছিয়া বেগমকে।

Manual4 Ad Code

তিনি আরো জানান আদালতে তিন আসামী তাদের স্বীকারোক্তিতে বলেছে, তারা তিনজনই ছিলেন লেগুনা চালক সুমনের বন্ধু। আছিয়া বেগম সুদের ব্যবসা করতেন। সুমন মাঝে মধ্যে তার কাছ থেকে সুদে টাকা নিত। কিন্তু সুমন যে লেগুনা গাড়ি চালায় তার সেই গাড়ির সকল কাগজ আছিয়া বেগমের কাছে জমা রেখে সুমন বিশহাজার টাকা সুদ নেয়। সুদ নেয়ার পর থেকে সুমন আর সুদের লাভের টাকা বা মূল টাকা ফেরত দেয়নি আছিয়া বেগমকে। এ নিয়ে আছিয়া বেগম সুমনকে বার বার টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু সুমন টাকা দেয়নি। গত ২২ সেপ্টম্বর সুমনের সাথে আছিয়ার দেখাও হয় এবং গাড়ির কাগজ ফেরত দিতে বলে। সে দিন তার সাথে আরো দুই বন্ধু ছিলো। পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর সুমন ও আটককৃত তিনজন সহ মোট পাচজনকে নিয়ে আমেরিকা প্রবাসির বাড়িতে যায় মূল অপরাধি সুমন। সেখানে গিয়ে তার চার বন্ধুকে ঘরে প্রবেশ করায় এবং আটককৃত তিনজনসহ মোট ৪ জন আছিয়াকে হাত-পা ও মুখ বেধে ফেলে। পরবর্তীতে সুমন ঘরে প্রবেশ করে তার গাড়ির কাজ ছিনিয়ে আনে ও আছিয়া বেগমকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে। হত্যার পর সবাই মিলে আমেরিকা প্রবাসির ঘর থেকে প্রায় বিশ হাজার দুইশত টাকার মালামাল লুট করে আছিয়া বেগমের মৃতদেহ ঘরে রেখে পালিয়ে যায়।

Manual5 Ad Code

এর পূর্বে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রোববার সন্ধ্যার দিকে মোগলাবাজর ইউনিয়নের হরগৌরী গ্রামে আমেরিকা প্রবাসির বাড়িতে মহিলা খুন হন। নিহত মহিলার নাম আছিয়া বেগম (৩৭)। তিনি দুই সন্তান নিয়ে গত তিনবছর থেকে কেয়ারটেকার হিসেবে এ বাড়িতে বসবাস করে আসছেন।

সে সময় পুলিশ ও গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের আবু বকর ও হেলাল আহমদ দুই ভাই পরিবার নিয়ে আমেরিকা থাকেন। বাড়িটি গ্রামের একপাশে হওয়ায় অন্যান্য বাড়ি থেকে এ বাড়ির দূরত্ব রয়েছে। নির্জন এ বাড়িতে আছিয়া বেগম তার দুই সন্তান সুমন আহমদ(১২) ও ইমন আহমদ(১৫) নিয়ে কেয়ারটেকার হিসেবে বসবাস করে আসছেন। এর মধ্যে ইমন আহমদ(১৫) সিলেট নগরীতে একটি দোকানে কাজ করে। নিহতের ছেলে সুমন আহমদ(১২) জানায়- তার ভাই নগরীতে থাকায় সে (সুমন) এবং তার মা বাড়িতে ছিলেন। রবিবার সন্ধার পর ৪/৫ জন লোক তাদের ঘরে প্রবেশ করে। তারা প্রবেশ করেই ঘরের এক কক্ষে নিয়ে সুমনের হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে। এবং অপর কক্ষে তার মাকে বেঁেধ ফেলে। তারা তার মাকে বিভিন্নভাবে গালিগালাজ করতে সে শুনেছে। এসময় তার মার শব্দও শুনেছে। অনেকক্ষণ পর কোনো সাড়া শব্দ না পেলে সুমন হাত ও পায়ের বাঁধ ছুটিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে কোনো ভাবে বের হতে সক্ষম হয়। এরপর আশপাশের মানুষদের কাছে গিয়ে কান্না করে ঘটনা বলতে থাকে। পরে প্রতিবেশিরা এসে দেখেন ঘরের একটি কক্ষে খাটের উপরে আছিয়া বেগমের নিথর দেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্ররণ করেন। এ ঘটনায় মোগলাবাজার থানায় একটি মামলা দায়ের কার হয় । যাহার নং ০৮(০৯)১৮ ইং। ধারা ৩৯৪ ও ৩০২ দন্ড বিধি।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..