সিলেট ২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২০শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৫৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০১৮
এছাড়াও বহু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীদের চলাফেরা এই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের ভয়ে এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা তাদের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ ঘটনা।
সম্প্রতি যুব উন্নয়নের সিনিয়র স্টাফের স্ত্রী দিন-দুপুরে এই রাস্তা দিয়ে স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি। এসময় তার সাথে থাকা বেনেটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
প্রশিক্ষণ করতে আসা সুমাইয়া বেগম নামের আরেকজন শিকার হন ছিনতাইকারীদের। ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার হাতে থাকা দামি মোবাইল সেট ও ব্যাগ নিয়ে যায় ওই ছিনতাইকারী চক্রটি।
তারা বলেন, দিনে-দুপুরে এই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে ভয় হয়। ছিনতাইকারীরা ওৎ পেতে থাকে বসে থাকে এখানে। পরিবেশটা নির্জন হওয়ায় এই চক্রটি এই জায়গাটাই বেছে নিয়েছে বলেও ধারনা তাদের।
তারা আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল যদি নিয়মিত থাকতো তাহলে এখানে ছিনতাইকারীরা এমন কা- ঘটাতে সাহস পেতো না। খবর পেয়ে পুলিশ মহড়া দিলেও বাস্তবে এসব ব্যবস্থার কার্যকারিতা দৃশ্যমান নয়। পুলিশের সহায়তা পেতে ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বলেও কেউ কেউ পুলিশের আশ্রয় নিতে চাননা।
এ রকম অসংখ্য ঘটনার কথা বলা যায়। অহরহ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে প্রাকৃতির টানে আশা অনেকেই।
বিচিত্র সব ছিনতাইয়ের ঘটনা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ ও র্যাব। কার্যকর টহল ব্যবস্থা না থাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমসি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধানের অভাবে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে মনে করেন ভূক্তভোগীরা।
জানা যায়, ছিনতাইকারী এই চক্রটির ভয়ে গত বেশ কয়েকদিন ধরে এই পার্কটিতে আগের মতো আর ভিড় জমে না। জেনে শুনে পরিবার নিয়ে দিনের বেলাও কেউ আসতে সাহস পায়না। আর যারা না জেনে আসছেন তাদের মধ্যে প্রায় লোককেই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে হারাতে হচ্ছে স্বর্ণের চেইন, নগদ অর্থসহ দামি মোবাইল সেট। ফলে এই রাস্তা দিয়ে সংঘবদ্ধভাবে চলাফেরা না করলে বিপদ অনিভার্য।
ইকো-পার্কটি নির্জন পরিবেশ হওয়ায় কিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যেতে পার্কটিতে ছুটে আসেন মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পাড়ি দিয়ে বন, পাহাড়, টিলাঘেরা ১১২ একর বন নিয়ে টিলাগড় এলাকায় দেশের তৃতীয় ‘টিলাগড় ইকো-পার্ক’-এ। কিন্তু একটু শান্তির জন্য ছুটে আসা প্রকৃতি প্রেমিদের নেই কোনো নিরাপত্তা। ফলে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে সিলেটের এই ‘টিলাগড় ইকো-পার্ক।’
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে যুব উন্নয়নে প্রশিক্ষণ করতে আসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, ইকো-পার্কটি নির্জন পরিবেশ হওয়ায় অনেকেই এখানে আসেন ঘুরতে। আমারাও যারা এখানে এসেছি প্রশিক্ষন দিতে বা লেখাপড়া করতে প্রাকৃতিক সৌন্দের্যে ভরপুর পার্কটিতে অবসর সময়টায় কাটাতে প্রায় মাঝে মধ্যে ঘুরতে আসতাম এখানে। সম্প্রতি এখানে বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর ভয়ে আর পার্কটিতে যাওয়া হয়না। এখানে যারাই আসেন তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগেন বলেও তারা জানান।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশপাশ স্থানীয় এলাকার টোকাই থেকে ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট বিকেল থেকে এমসি কলেজসহ আশপাশে মোটরসাইকেল নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। ওঁৎ পেতে থাকে কখন কাকে ফাঁদে ফেলা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট প্রাণীজ সম্পদ’র এক কর্মচারী অভিযোগ জানান, তারা (ছিনতাইকারী) রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বা খোলা স্থানে বসেই বিভিন্ন ধরনের নেশা করে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননা। তার ধারনা এরা নেশার টাকা যোগাড় করতেই দিন-দুপুরে একা কাউকে পেলেই সুযোগ বুঝে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সাসহ সঙ্গে থাকা সবকিছু ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
আলাপকালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমন আহমেদ জানান, একা একা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে ভয় হয়। কখন যেন টোকাই ছিনকাইকারীদের কবলে পড়ে সবকিছু হারাতে হয়। সেই ভয়ে এই রাস্তা দিয়ে আসতে হলে বন্ধুদের সাহায্য ছাড়া আসিনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, এই রাস্তা দিয়ে একা বাড়ি ফিরতে সাহস পাইনা। টোকাই ছিনতাইকারীদের ভয়ে আমাদের চলাচল বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, এই রাস্তায় বেশি চকুরিজীবী এবং ছাত্র-ছাত্রীরা চলাচল করে। চাকুরিজীবী ও শিক্ষার্থী হওয়ায় তাদের কাছে সব সময় টাকা-পয়সা এবং দামি মোবাইল সেট থাকে। তাই এই রাস্তাটি ছিনতাইকারীরা বেছে নিয়েছে। তিনি জানান, এই রাস্তায় পুলিশী নিরাপত্তা না বাড়ালে চোরির উপদ্রব আরো বাড়বে।
এ ব্যাপারে জানতে র্যাব-৯ এর মুটো ফোনে কয়েকবার বার যোগাযোগ করা হলে ফোনটি রিসিভ হয়নি।
এ ব্যাপারে শাহপরাণ (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেনের সাথে বুধবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সুরমা মেইলকে জানান, এ ধরনের ঘটনার কোনো অভিযোগ এর আগে আমরা পাইনি। তবে, অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইকো-পার্ক এলাকায় এর আগে কোনো টহল হয়েছিলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে এই এলাকায় আমরা টহল দেইনি। আপনার কাছ থেকে খবর পেয়েছি, এবার নিয়মিত টহল দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd