সিলেট ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭
জানা গেছে, পূর্বাচল উপশহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভোলানাথপুরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০০ ফুট সড়ক দিয়ে খোলামেলা ঘুরে বেড়াতেও ভালো লাগে। সড়কের আশপাশের এলাকাগুলো অতি নির্জন। এজন্য বিভিন্ন স্থান থেকেই মানুষ এখানে ঘুরতে আসে। তাদের টার্গেট করেই নীলা মার্কেট ও আশপাশ এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে মাদকের আস্তানা। বসানো হয়েছে হরেকরকম জুয়ার আসর। নারীকেন্দ্রিক নানারকম অপরাধ আখড়াও জমে উঠেছে সেখানে। র্যাব, পুলিশসহ প্রশাসনের চোখের সামনে জবরদখলসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে রাজউকের বিরুদ্ধেও। তারা স্টেডিয়াম হিসেবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে জায়গাটি বরাদ্দ দিলেও তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। ফলে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা জায়গাজুড়ে পাকা-আধাপাকা দোকানপাট বানিয়ে নির্বিঘ্নে জবরদখল পাকাপোক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তবে রাজউক সূত্র বলেছে, এর আগেও অবৈধভাবে গড়ে তোলা নীলা মার্কেটটি উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আবারও সেখানে দোকানপাট নির্মিত হয়েছে। এর পরও একাধিকবার উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়ে পুলিশের সহায়তার অভাবে সফল করা যায়নি। রাজউক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘খুব শিগগির আবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করে জায়গাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, মোটা অঙ্কের টাকায় পজিশন কিনে পাকা-আধাপাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, মাসিক ভাড়ার ভিত্তিতে চালানো হচ্ছে দোকানপাট। তাদের নোটিস দিয়ে, মাইকিং করে কিংবা বুলডোজার দিয়ে সহজে উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে না। সেখানে ক্ষতিপূরণের দাবি-দাওয়া নিয়ে নতুন জটিলতা বাধানোর ধান্ধাবাজিও চলছে। ফলে নির্ধারিত স্থানটিতে স্টেডিয়াম গড়ে তোলার কাজটি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। অবৈধভাবে স্থাপিত ‘নীলা মার্কেট’ উচ্ছেদ না করে এর অনুমোদন চেয়ে রাজউক বরাবর একটি আবেদনপত্র দিয়েছেন স্থানীয় এমপি। কিন্তু রাজউক এর কোনো অনুমোদন দেয়নি। এর মধ্যেই জায়গাটিতে অবৈধ মার্কেট গড়ে তোলাসহ দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার বাণিজ্য করে প্রভাবশালী চক্রটি মাসে ১০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, নীলা মার্কেটে পাকা-আধাপাকা কয়েক শতাধিক দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকানঘর থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন বিদ্যুৎ, পানি ও পরিচ্ছন্নতার দোহাই দিয়ে প্রতি দোকান থেকে আকারভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে চাঁদাবাজ চক্র। মার্কেট ঘিরে ভোলানাথপুরসহ আশপাশ এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের আস্তানা। এসব আস্তানায় অতি সহজেই পাওয়া যাচ্ছে মরণনেশা বিভিন্ন প্রকার মাদক। শুধু তাই নয়, নীলা মার্কেটের আশপাশ নির্জন জায়গা হওয়ায় সেখানে প্রতিদিন অসংখ্য যুবক-যুবতী ঘুরতে এসে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। নীলা মার্কেটের সামনেই রয়েছে একটি কবরস্থান। এর ভিতরেও মাদকের মজুদ গড়ে তুলে খুচরা কেনাবেচা চলছে। অভিযোগ রয়েছে, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজউকের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই রাজউকের জমিতে জবরদখল করে নীলা মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি দোকানঘরের পজিশন বিক্রি করা হয়েছে। একেকটি পজিশনের মূল্য ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এসব টাকা আদায় করেন ফটিক মিয়া। প্রতিদিন রাজধানীসহ আশপাশ এলাকার লোকজন এ মার্কেটে ভিড় জমাচ্ছে। এ উপলক্ষে গড়ে তোলা বিশেষ ধরনের কয়েকটি রেস্টুরেন্টে যুবক-যুবতীদের আলাদাভাবে অবস্থানের জন্য রুম ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। ঘণ্টায় ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে রুম। এ ছাড়া নীলা মার্কেটের আশপাশে জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে। এসব আসরে প্রতি রাতেই লাখ লাখ টাকার খেলা হচ্ছে। জুয়া খেলতে বেশির ভাগ লোকই আসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও নরসিংদী, রূপগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে। এ ছাড়া স্থানীয় লোকজনও জুয়া খেলায় অংশ নেয়। মাদক ও জুয়ার স্পট থেকেও আদায় হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও রাজউক কর্মকর্তাদের মাসহারা দিয়েই দিন দিন বেপরোয়াভাবে চালানো হচ্ছে নীলা মার্কেটের নামে নানা অবৈধ কর্মকাণ্ড।
পূর্বাচল ১ নম্বর সেক্টর থেকে দক্ষিণে বালু নদের তীর পর্যন্ত সারি সারি খুপরি ঘর তুলে চাইনিজ রেস্টুরেন্টের নামে চলে মাদক সেবন, পতিতাবৃত্তিসহ নানারকম বেলেল্লাপনা। এ ছাড়া মাদকের খোলা হাট হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি পাওয়া নীলা মার্কেটে সব ধরনের মাদকের রমরমা বাণিজ্য পরিচালনা করেন জনৈক আনোয়ার হোসেন। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসী আলম নীলার দেবর। আনোয়ারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সালাউদ্দিন, বাকির, রাসেল, নুরুজ্জামান, রাকিব, মোমেন, বাসিত, আবুসহ ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ মাদক বিক্রি ছাড়াও খদ্দেরদের তা নিরাপদে সেবনের জায়গা ও ব্যবস্থা করে দেয়। এসব ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রূপগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌসি আলম নীলা বলেন, এমপি সাহেবের নির্দেশে পূর্বাচলের প্রস্তাবিত স্টেডিয়ামের জায়গায় এই অস্থায়ী বাজারটি বসানো হয়েছে। এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন নিজেদের উৎপাদিত ফল-ফসল এ বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। সেই বাজার ঘিরে কোনোরকম চাঁদাবাজি সংঘটিত হওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন। রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন, ‘জায়গা জবরদখলের বিষয়টি সম্পূর্ণ রাজউক দেখবে। রাজউক যদি উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমরা সহযোগিতা করব।’
বার বার অক্ষত ‘নীলা ক্লাব’! রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বার বার উচ্চেদ অভিযান চালানো হলেও প্রতিবারই সেখানে আওয়ামী লীগ ক্লাবের নামের নীলা ক্লাবটি অক্ষত থেকে যায়। ফলে উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ ক্লাবের উদ্যোগে আবার জমে ওঠে অবৈধ বাজারটি। স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা জানান, অবৈধ বাজারটি উচ্ছেদে রাজউক কর্মকর্তারা মোটেও আন্তরিক নন। তারা অস্থায়ী দোকানপাট উচ্ছেদ করলেও সেখানে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থায়ী স্থাপনাগুলো অক্ষত রেখে দেন। দখলবাজরা এসব স্থাপনা ঘিরেই আবার অবৈধ দোকানপাটের হাটবাজার গড়ে তোলার সুযোগ পায়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd