সিলেট ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
সজল ছত্রী ও নুরুল হক শিপু : সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আধিপত্যের দ্বন্দ্ব বাড়ছেই। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) এক নারী কাউন্সিলরের সঙ্গে প্রধান প্রকৌশলীর অপ্রীতিকর ঘটনার পর বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। দুবছরেরও বেশি সময় নগরভবন নির্বাচিত মেয়রহীন থাকার কারণে সিসিকে আধিপত্যের এই দ্বন্দ্ব শুরু হয় বলে মত সংশ্লিষ্টদের। মঙ্গলবারের ঘটনার আগেও সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর একাধিকবার চড়াও হন কাউন্সিলররা। তারা তার কক্ষে তালাও ঝোলান। সে সময় তারা অভিযোগ করেন, কর্মকর্তারা কাউন্সিলরদের এড়িয়ে গিয়ে ইচ্ছেমতো নগরভবন চালানোর চেষ্টা করছেন। তবে মঙ্গলবারের ঘটনায় তারা নারী কাউন্সিলরের বদলে পক্ষ নিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলীর। এতে করে আরও বেকায়দায় পড়েছেন সিসিকের নারী কাউন্সিলর শামীমা স্বাধীন। বুধবার তার বরখাস্তের সুপারিশ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে মেয়রের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এদিকে শামীমা স্বাধীন দাবি করেছেন, কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ঘটনার দিনও তাকে অশালীন ইঙ্গিত করেন প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজ। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে নূর আজিজ বলেন, ‘আমি মর্মাহত, যা ঘটেছে সবার সামনেই ঘটেছে।
২০১৩ সালের নির্বাচনে মেয়রের পালাবদলের পর থেকেই সিসিকে শুরু হয় কর্মকর্তা-কাউন্সিলরদের বিরোধ। নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারান্তরীণ হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র হওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও কাউন্সিলর সালেহ আহমদ চৌধুরীর মধ্যে। আদালত পর্যন্ত গড়ানোর বিরোধের কারণে কেউই পাননি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ার। তার বদলে এ চেয়ারে বসেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবিব। সেখান থেকেই শুরু মতবিরোধ ও দূরত্ব। গত বছরের শেষের দিকে সিসিকের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার অফিস কক্ষে তালা দেন আওয়ামী লীগপন্থি কাউন্সিলররা। নেপথ্যে করপোরেশনের আওতাধীন হকার্স মার্কেট ভাঙার কাজের ওয়ার্ক অর্ডার না পাওয়া ছিল বলে সিসিক সূত্র জানায়। ক্ষুব্ধ আওয়ামীপন্থি কাউন্সিলররা ওইদিন প্রধান নির্বাহী এনামুল হাবিব, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজ এবং প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আ.ন.ম. মনছুফের অফিস রুম তালাবদ্ধ করেন। ওই ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন সিসিকের কাউন্সিলর আমজাদ হোসেন আবজাদ, মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান কামরান, ইলিয়াসুর রহমান ইলিয়াস, শান্তনু দত্ত সনতু, সিকান্দর আলী, আফতাব হোসেন খান, তৌফিক বক্স লিপন, রেজওয়ান আহমদ, রকিবুল ইসলাম ঝলকসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগপন্থি কাউন্সিলর। সর্বশেষ মঙ্গলবার প্রধান প্রকৌশলীকে নারী কাউন্সিলরের ঘুষি মারার মতো ঘটনা ঘটল। নূর আজিজুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় শামীমা স্বাধীনকে বরখাস্তের জন্য মন্ত্রণালয়ে বুধবার সকালেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফ। মঙ্গলবার কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে এ চিঠি প্রেরণ করা হয় বলেও জানান তিনি। প্রধান প্রকৌশলী কাউন্সিলরকে ইঙ্গিত করে অশালীন মন্তব্য করেছেন এমন দাবি প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, তিনি আমাদের কাছে এ রকম কোনো অভিযোগ করেননি। করলে খতিয়ে দেখতাম। তা ছাড়া তার সঙ্গে বাজে আচরণ করলেও আমার কাছে অভিযোগ না করে একজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করা উচিত হয়নি। এ ব্যাপারে শামীমা স্বাধীন আমাদের সময়কে বলেন, আমি প্রকৌশলীকে ঘুষি মারিনি। উল্টো তিনি আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন। সিসিকের কর্মকর্তারা কাউন্সিলরদের পাত্তা দেন না দাবি করে শামীমা স্বাধীন বলেন, বারবার এক কাজের জন্য গেলেও তারা আমাদের বসিয়ে রেখে খোশগল্পে মত্ত থাকেন। মঙ্গলবারও আমি আমার এলাকার একটি ছড়ার গার্ড ওয়াল ও খনন কাজের ব্যাপারে জানতে গিয়েছিলাম। বারবার তাগিদ দেওয়ার পর তিনি আমাকে বলেন, তিনি আমাকে পছন্দ করেন, কিন্তু তাকে খুশি করিনি, এজন্য কাজ হচ্ছে না। তিনি প্রায়ই আমাকে এ ধরনের কথা বলেন। এতে আমি উত্তেজিত হয়ে কথাবার্তা বললে তিনি আমাকে লাঞ্ছিত করে আমার নামে মারামারির অভিযোগ তোলেন। ‘এরপর বহিরাগতদের নিয়ে কর্মচারীরা জোট বাঁধেন’ অভিযোগ করে শামীমা বলেন, প্রায় ৫শ লোক জড়ো হলো। এত লোক কি সিটি করপোরেশনের কর্মচারী? এ ব্যাপারে সিসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজ বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত এবং আঘাতপ্রাপ্ত। আমি কিছু অতিথির সঙ্গে কথা বলছিলাম। তাই কাউন্সিলর স্বাধীনের কাছ থেকে একটু সময় চেয়ে নিয়েছিলাম। তিনি এতে ক্ষুব্ধ হয়ে যান। এক প্রশ্নের জবাবে নূর আজিজ বলেন, কর্মচারীরা ওই নারী কাউন্সিলরকে বরখাস্তের দাবি করেছেন। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষও আমাকে ন্যায় বিচার পাব বলে আশ্বস্ত করেছে। তাই আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। ন্যায় বিচার না পেলে অবশ্যই আইনি সহায়তা নেব। এ ব্যাপারে সিসিকের ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, কর্মকর্তাদের কক্ষে তালা লাগানোর ঘটনা ছিল ভিন্ন; কিন্তু মঙ্গলবারের ঘটনাটি ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় কাউন্সিলরের শাস্তি হওয়া উচিত। একজন কর্মকর্তার ওপর এভাবে হামলা মেনে নেওয়া যায় না। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন বলেন, বর্তমানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাউন্সিলরদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। নারী কাউন্সিলরের কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি তা জানাতে পারতেন। তিনি যেটি করেছেন তাতে কাউন্সিলরদের সম্মানহানি হয়েছে। এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সবার মাঝে আন্তরিকতা থাকতে হবে। নগরভবনে একটি সমস্যা হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সেবাগ্রহীতারা। তিনি বলেন, অপরাধ করলে শাস্তি হওয়া জরুরি। ওই নারী কাউন্সিলরের ব্যাপারে আইন অনুযায়ী বরখাস্তের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা চাই এ ঘটনার প্রকৃত বিচার হোক।সূত্র – www.bijoynewsbd.com
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd