সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রমজান, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০১৭
ক্রাইম ডেস্ক : অভাবের সঙ্গে নিত্য সংগ্রাম তার। ছোট থেকেই খেয়ে না খেয়ে বড় হয়েছে। ভিক্ষুক বাবার সঙ্গে নেমেছে রাজপথে। এখন প্যাডেলে বন্দি তার জীবন। অভাবী হলেও স্বপ্ন দেখতে তো মানা নেই। তাই সেও স্বপ্ন দেখতো সংসার হবে। সন্তান হবে। সেই সংসারের রানী হবেন। একদিন সংসারও হয়েছিল। কিন্তু সংসারের রানী হওয়া হলো না তার। সুখী হওয়া তো দূরের কথা। কোল জুড়ে সন্তান এলেও ধরে রাখতে পারেননি স্বামীকে। প্রেম-ভালোবাসা সব ছেড়ে স্বামী অন্য নারীকে নিয়ে ঘর বাঁধে। ফের ঠাঁই হয় তার পিতার সংসারে। কিন্তু কি করবে সে। চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয় রিকশা চালাবে।
একদিন রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামে। এটি তিন বছর আগের কথা। এখনও রিকশাই তার আপন। রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে। সংগ্রামী এ নারী সুমি বেগম। নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলে। সুমি জানান, প্রথম প্রথম রিকশা চালাতে দেখে অনেকে হাসতো আবার অনেকে উপহাস করতো। তবে কোনো কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। বলেন, আল্লাহর রহমতে কামাই রোজগারও ভালো। প্রতিদিন রিকশা জমার তিন শ’ টাকা দেয়ার পরও আমার চার থেকে পাঁচ শ’ টাকা থাকে।
এত কাজ থাকতে রিকশা চালানো কেন? সুমি জানান, ছেলেরা যে সব কাজ করতে পারে মেয়েরা কেন তা পারবে না? শৈশব কেটেছে বাবার সঙ্গে সায়েন্স ল্যাবে বসে ভিক্ষা করেই। কৈশোরে এসে ভিক্ষা করতে আর ভালো লাগতো না তার। ভিক্ষা ছেড়ে পানি বিক্রি শুরু। তখন নিউমার্কেটের এক দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে চলে মন দেয়া-নেয়া। চৌদ্দ বছর বয়সে প্রিয় মানুষটিকে বিয়ে করে সুমি। বিয়ের দশ মাস পরই সুমির কোল জুড়ে আসে কন্যা সন্তান। কিন্তু সুখ আর বেশিদিন সইলো না তার। দেড় বছরের মাথায় সুমির স্বামী অন্য এক নারীকে বিয়ে করে।
সুমি স্বামীর সংসার ছেড়ে কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রামে তার বাবার বস্তিঘরে গিয়ে উঠে। সেই থেকে সুমি এই বস্তিতেই আছে। সুমি বলেন- তিন বছর আগে বাবা মারা গেছে। মা, মেয়ে আর প্রতিবন্ধী এক ভাইকে নিয়ে আমার সংসার। যেদিন রিকশা চালাই সেদিন কামাই করি। আর যেদিন শরীর খারাপ থাকে সেদিন বসে খাই। কিন্তু জমার টাকা ঠিকই দিতে হয়।
আমার যদি একটা নিজের রিকশা থাকতো তাহলে কষ্টটা আরো কম হইতো। একটা রিকশা কিনতে ৪৫ হাজার টাকা লাগে। এত টাকা আমি কই পামু। রাজধানীর আরেক নারী রিকশাচালক লায়লা। চার মাস ধরে রিকশা চালায়। সুমিকে দেখে রিকশা চালাতে অনুপ্রাণিত হয় বলে জানায়। লায়লা বলেন, ‘একদিন কামরাঙ্গীরচরের রাস্তায় দেখি সুমি আপা রিকশা চালায় যাইতেছে। তখন তারে দেইখ্যা মনে হইছে আমিও তো রিকশা চালাইতে পারি। আমি আট বছর বয়সে সাইকেল চালানো শিখেছিলাম। এই কারণে রিকশা চালাইতে আমার কষ্ট হয় না।
আল্লাহ্র রহমতে রিকশা চালাই। ভালো কামাই হয়। শাহবাগ, চানখাঁরপুল, গুলিস্তান এই সব এলাকায় রিকশা চালাই। একদিন বৃষ্টির মধ্যে আমি রেইন কোর্ট পইরাছিলাম। সেই সময় এক হুজুর আমার রিকশায় আইসা বইছে। কিছুদূর যাওয়ার পর হজুররে জিগাইসি কোনদিকে যামু হুজুর। আমার কণ্ঠ শুইনা কয় তুমি মেয়ে মানুষ। আমি তো চিনতে পারি নাই। তোমার রিকশায় উঠা কি আমার ঠিক হইছে। আমি হুজুররে কইলাম ঠিক- বেঠিক বুঝি না। কাম কইরা খাই। চুরি তো করি না। আগে গার্মেন্টসে কাজ করতাম। তিন হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিয়া তখন চলতে খুব কষ্ট হইতো। মা, এক পোলা আর এক মাইয়া নিয়া আমার সংসার। ছয় বছর আগে স্বামী আরেকটা বিয়া কইরা চইলা গেছে। তখন থেইকা কষ্ট কইরাই চলি। আল্লাহ যতদিন সুস্থ রাখবো ততদিন রিকশা চালামু। এখন শুধু একটাই স্বপ্ন পোলা মাইয়াকে মানুষ করা।
সূত্র: মানবজমিন
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd