সিলেট ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৫ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৬, ২০১৭
কলাম::
ණ☛ আজকের লেখার প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। লেখাটি পড়ে হয়তো অনেকেই আমাকে ভুল বুঝবে, কেউ বা বলবে এগুলো নিয়ে ইন্টারেষ্ট না দেখানোই ভাল, কেউ বা টিপ্পনি মারবেন, কেউ বলবেন আমার মত মানুষ এসব বিষয় নিয়ে এভাবে না লিখাই ভাল। এটাই স্বাভাবিক তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আমি মোটেই অবাক নই বিচলিত নই । কারন আমাকে লিখতেই হবে।
ණ☛ এই নগরীতে এখন সকল ব্যবসার সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে বেশ্যাগিরি। রাস্তা ঘাট মার্কেট পার্ক হোটেল রিসোর্ট রেষ্টুরেন্ট সব জায়গাতেই এখন দেহ পসারীনিদের পদচারনা। এখানে শুধু টাকার বিনিময়ে বেড পার্টনার হওয়া মেয়েদের আমি বেশ্যাগিরি বলে বুঝাতে চাইছি না। বেশ্যাগিরি আজ কাল ভিন্নরুপে ভিন্ন আকারে গড়ে উঠেছে আমাদের চোখের সামনেই।
ණ☛ এই তো সেদিন সন্ধ্যায় জিন্দাবাজার মুক্তিযুদ্ধা গলিতে জরুরী কাজ শেষে পয়েন্টে দাড়িয়ে ছিলাম এক সহকর্মীর সাথে। এমন সময় এক মেয়ে আমাদের সামনে দিয়ে হাটছিল। এত পাতলা জামা পরা যে তার শরীরের আন্ডার গার্মেন্টস স্পষ্টই মানুষের চোখ এড়াতে পারেনি। পারার কথাও নয়। একজন মহিলা লন্ডন ম্যানশন থেকে বের হওয়ার পরই পাশ থেকে আরকজন মন্তব্য করে বসল ”দারুন মাল” বলে। শব্দটি শুনে মহিলা পিঠের শাড়ি ফেলে দিলেন, মনে হল খুশীই হয়েছেন।
ණ☛ তুমি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুনী অথবা বিবাহিত মহিলা। তুমি এমন জামা কাপড় পরে রাস্তায় বের হচ্ছ তোমার ব্রেষ্ট এর সাইজ ৩৮ থেকে ৪২, টাইট জামা গেঞ্জি পরে তোমার পেটের ভাজ কোমরের মাপটা তা তুমি রাস্তার মানুষকে সহজেই দেখাচ্ছ, বুঝিয়ে দিচ্ছ, সাথে ভেসে আসা কমেন্টস গুলো শুনে মজা নিচ্ছ। তুমি স্কিন টাইট চুইস পায়জামা পরে তোমার থাইয়ের মাপটা দেখিয়ে রাস্তার যুবকদের লালসা বাড়িয়ে দিচ্ছ।
ණ☛ রাস্তায় বাবা তার মেয়েকে নিয়ে বের হচ্ছে, শপিং করছে কিন্তু বুঝার উপায় নেই সে তার বাবার সাথে বের হয়েছে নাকি বয় ফ্রেন্ড এর সাথে বের হয়েছে। মেয়ের ড্রেসআপ দেখে বুঝার উপায় নেই বাবা তার মেয়েকে নিয়ে বের হয়েছে নাকি স্ত্রীকে নিয়ে শপিংয়ে গিয়েছে। মা মেয়ে এক সাথে বের হচ্ছে রিকশা করে। বুঝার উপায় নেই মা-মেয়ে না বান্ধবী? ভাই তার বোনকে েেমাটর সাইকেলে করে কলেজে নিয়ে যাচ্ছে। বোন তার ভাইকে মোটর সাইকেলে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে মোটর সাইকেলে বসছে রাস্তার মানুষ দেখে বুঝছে যেন প্রেমিক প্রেমীকা। তদুপরী রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যামে পড়ে যখন ভাই মোটর সাইকেল ব্রেক করছে তখন মোটর সাইকেলের পিছনে বসা বোনের বুক ভাইয়ের পিঠের সাথে বার বার ঘষা লাগছে!
ණ☛ এই তো সেদিন পত্রিকার পাতায় দেখলাম ঢাকায় কলজ পড়ুয়া মেয়ে প্র্যাগনেন্ট। গর্ভপাত করাতে মা যখন উদ্যোগী হলো তখন মায়ের কাছে মেয়ে স্বীকার করলো তার ভাই প্রায় সময় মদ খেয়ে তাকে. . . . । আপনি মা সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন সাথে আপনি সাজগোজ করে যাচ্ছেন কেন? যে ছেলে আপনার মেয়ের দিকে যে ছেলেটি চোখ দিচ্ছে সেই ছেলে আপনার দিকেও নজর দিচ্ছে। মেয়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখছে পাশাপাশি আপনার সাথেও যোগাযোগ রাখছে। এক সময় অজান্তেই আপনিও ছেলেটির দিকে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। আজকের পত্রিকা স্বাক্ষী সিলেটের জৈন্তাপুরে মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে মায়ের সাথেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ধর্ষন করেছে ছেলেটি।
ණ☛ আপনি বাবা আপনার মেয়ে রাত ২টা পর্যন্ত বন্ধুর বার্থ ডে পার্টিতে হোটেলে থাকে কি করে? আর এখন যখন বলা হচ্ছে অস্ত্রের মুখে সাদমান ধর্ষন করেছে? রাত ২ টার সময় একটা তরুন আরেকটা তরুনীকে একা রুমে নির্জন পেলে তার যৌন কামনা জেগে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। আর অস্ত্রের মুখে ধর্ষন করবে কেন ধর্ষন করার অস্ত্র তো সাদমানদের সাথে সব সময়ই থাকে। এই সিলেট নগরীতে এমন কম হোটেল মোটেলই আছে যেখানে তরুন তরুনীরা রুম ডেট করছেনা। যখন কেউ রুম ডেট করছে তখন সেটাকে এনজয় বলে মেনে নিচ্ছেন । আর যখন টাকা পয়সা নিয়ে অথবা মতপার্থক্যের গোলমাল দেখা দিচ্ছে তখনই ধর্ষনের খড়গ নেমে আসছে।
ණ☛ আপনি মা আপনি আপনার মেয়েকে বলে দিচ্ছেন, যাই করো না কেন বাবার সম্মানের দিকে খেয়াল রেখ। এ কথাটি বলে আপনি মেয়ের কাজকে নিরব সমর্থন দিয়ে দিলেন । আপনি মেয়েকে আল্লাহর ভয় না দেখিয়ে বাবার সম্মানের কথা বলে দিলেন। যে বাবার সম্মানের কথা বলে দিলেন, সেই বাবাকে যে আপনার মেয়ে ভাল করে চিনে ফেলেছে। তার আবার সম্মান কিসের। এই তো সেদিন মেয়ে বাবার মোবাইল ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে হঠাৎ বাবার মোবাইলে থ্রি এক্স এর ভিডিও ক্লিপ পেয়ে বসে। নিজেও দেখে এনজয় করে। এমনকি বাবাকেও কল্পনা করতে দ্বিধা করে না। তাহলে কার সম্মানের কথা মনে করিয়ে দিলেন।
ණ☛ প্লিজ ভুল বুঝবেন না। তুমি বোরকা পরোনা,তুমি নেকাবও পরো না। সমাজ তোমাকে বাধ্য করছে না। আজকাল তো আবার বোরকা নিয়ে তেলেসমাতি কম হচ্ছে না। ইদানী বোরকারও চল্লিশা হয়ে গেছে। ড্রেস বা শাড়ি পরলেও তোমার ”থাই বা পাছা” কত বড় রাস্তার মানুষগুলি বুঝছে না কিন্তু তুমি বোরকাকে এমন টাইট করে তৈরী করেছ তোমার থাই এর ভাজটা দেখে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা উচ্ছৃংখল ছেলেটা জিহবার পানি ফেলছে ার বলছে ” ইস যদি পাইতাম” ।
ණ☛ তুমি নেকাব তো পর্দা সংক্ষেনের জন্য পরনি তুমি যে হোটেলে বা পার্কে ডেটিংয়ে গিয়েছ সেখানে যাতে তোমাকে কেউ চিনতে পারেনা সেজন্য তুমি নিজেকে বাচানোর জন্য নেকাব পরেছ। তুমি তো চুলের সৌন্দর্য পরপুরুষের চোখে না পড়ার জন্য হিজাব পরনি। তুমি চুলের টিলা তৈরী করে তোমার বডি আর বোরকার সেটআপ ”সেক্সি” লাগার জন্য হিজাব পরেছ। বোরকা না পরলেও পর্দ করা যায়। বোরকা পরা অদৌ বাধ্যতামুলক কি না জানি না। তবে ঢিলে ঢালা পোষাক পরলে অন্তত রাস্তার মানুষগুলির যৌবনের কামনা জেগে উঠবে না তোমাকে দেখে।
ණ☛ তুমি রাস্তায় চুল নাচিয়ে হাটছ, বুক উচু করে পাছা দুলিয়ে হাটছ তুমি ঐ কোর্ট পয়েন্ট সুরমা পয়েন্টের হেটে চলা নেকাব পরিহিতা ভাসমান বেশ্যাদের থেকে একটুও ব্যাতিক্রম নও। বেশ্যা গিরির শিক্ষা তোমাকে তোমার পরিবার দিয়েছে। বান্ধবীর বাসাকে, পার্লারকে, পার্ককে, রেষ্টুরেন্টকে তুমি বেশ্যা খানায় পরিনত করেছে। লেখাটি পড়ে কেউ কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন। এটা আমি নিশ্চত। এই তো কয়েক বছর আগে সিলেট রেজিষ্ট্রি মাঠে মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর তাফসির মাহফিলে বসে আছি।
ණ☛ প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে সামনে দাড়িয়ে ছিলাম। আয়োজকদের একজন দেখে সামনে নিয়ে চেয়ারে বসার ব্যবস্থা করলেন। তখন ”ইভটিজিং” এর বাজার বড় গরম। মাওলানা আনসারী বলছিলেন, একটি মেয়ে যদি একটি পুরুষের সামনে দিয়ে হেটে যায় আর তাহলে একজন পুরুষ তার দিকে তাকাবেই। আর যদি একবারও না তাকায় তাহলে বুঝতে হবে ঐ পুরুষের রোগ আছে। এটা পীরাকির বিষয় নয় এটা আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টিগত স্বভাব তৈরী করে দিয়েছেন। তবে নিজের নফসকে সর্বোচ্চ হেফাজত করে রাখাই তাকওয়ার শিক্ষা। এই কথা বলার পর হাজার হাজার মানুষের মাঝখান থেকে একটি তরুন ছেলে ওয়াজের মাঝে হাত তালি শুরু করে দিল। এরপর হাসির রোল পড়ে গেল পুরো মাঠ জুড়ে।
আপনি বাবা হিসেবে ব্যার্থ, আপনি মা হিসেবে কলংকিত, আপনি ভাই হিসেবে দুর্ভাগা। আর তুমি যা আগেই বলেছি।
প্লিজ সচেতন হোন। মুখ খুলে কথা বলুন। ভয়াবহ ধর্ষন আর মহামারী থেকে সমাজকে বাচাতে এগিয়ে আসুন। ”কিছ” শব্দ ব্যবহারের জন্য দুঃখিত।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিষ্ট।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd