সিলেট ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০১৭
প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহ আরেফিন টিলায় বন্ধ হয়নি অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন। দিনরাত সমান তালেই চলছে পরিবেশ ধ্বংস করে পাথর উত্তোলন। ১০ মাস আগে ঝুঁকিপূর্ণ পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ৫ শ্রমিক নিহত হওয়ার পর দু’জন গডফাদার আর ৪৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। কিন্তু ওই সুপারিশেই দায়িত্ব শেষ!
দুই গডফাদার সম্পর্কে সহোদর। তারা সরকারদলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল বাছিরের ছেলে শামীম আহমেদ ও বিল্লাল আহমেদ। তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ৪৭ জন পাথরখেকোর যে তালিকা করেছিল তদন্ত কমিটি, তারা এখনও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করেই যাচ্ছে। ফলে মৃত্যুর মিছিল থামেনি। ১০ মাসে শুধু শাহ আরেফিন টিলাতেই মারা গেছেন ১১ শ্রমিক। সবশেষ ১৬ অক্টোবর প্রশাসনের তালিকায় শীর্ষে থাকা পাথরখেকো আঞ্জু মিয়ার গর্তে পাথর তুলতে গিয়ে মারা যান শ্রমিক সুরুজ আলী। আর বৃহস্পতিবার গডফাদার বিল্লালের গর্তে মাটি ধসের ঘটনায় আহত হন ২ শ্রমিক। প্রশাসনের হিসাবে, ২৩ জানুয়ারি শাহ আরেফিন টিলায় মারা যান ৫, ফেব্রুয়ারিতে ২, মার্চে ২ জন, ২০ জুলাই ১ এবং সবশেষ ১৬ অক্টোবর ১ জন শ্রমিক।
জানুয়ারিতে একসঙ্গে ৫ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পুলিশ প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসন দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি বায়েছ আলমকে। তদন্ত প্রতিবেদনে এসব মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অবৈধ পাথর উত্তোলনকারী হিসেবে স্থানীয় ৪৭ জন প্রভাবশালীকে চিহ্নিতও করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী ৪৭ পাথরখেকো হচ্ছে- কোম্পানীগঞ্জের চিকাডহর গ্রামের আইয়ুব আলী, আঞ্জু মিয়া, সেরাব আলী, কুদ্দুস মিয়া, ফয়জুর রহমান, গরিব উল্লাহ, আতিউর রহমান, মুহিবুর রহমান, আবদুল করিম, নূর উদ্দীন, হেলাল উদ্দীন, শাহ আরেফিন টিলা জালিয়ারপাড় গ্রামের শুক্কুর আলী, বশর মিয়া, ফারুক মিয়া, মাসুক মিয়া, সোনা মিয়া, সাদ্দাম মিয়া, আশিক মিয়া, মো. মানিক মিয়া, সাজ্জাদ মিয়া, নূর মিয়া, বকুল মিয়া, রমজান মিয়া, হরমত উল্লাহ, নাসির মিয়া, আবদুল খালিক, আবদুল কাদির ও ইসমাইল আলী; পাডুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের আতাউর রহমান; নারাইনপুর গ্রামের আবদুল হান্নান, আবদুর রহমান, আনাই মিয়া, আনফর আলী; পুরান জালিয়ারপাড় গ্রামের সমশের আলী কালা, আশিকুর রহমান, সমাদ মিয়া, লায়েক মিয়া, আবদুল কালিক, নূর ইসলাম; পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামের রহিম; ভোলাগঞ্জ গ্রামের সোহেল মিয়া, শাহাব উদ্দীন; নতুন জালিয়ারপাড় গ্রামের ছায়ফুল ইসলাম; বাহাদুরপুর গ্রামের লীলু মিয়া এবং পাড়ুয়া লামাপাড়া গ্রামের একবার মিয়া, এনাম হোসেন ও ইসনাত আলী। পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহেদা আক্তার যুগান্তরকে জানান, অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত
কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। ব্যবস্থা না নেয়ায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিনিয়ত শাহ আরেফিন টিলা এলাকায় অবৈধভাবে পাথর তুলছে তারা। এদিকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসনকে উল্টো হুমকি দেয়া হচ্ছে। রোববার স্থানীয় পাড়–য়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক প্রতিবাদ সমাবেশে সেই শামীম আহমেদ এ হুমকি দেন। তার বক্তব্যের ভিডিও এখন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, সোমবারের মধ্যে উপজেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা না তুললে কোম্পানীগঞ্জ অচল করে দেয়া হবে। এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এসব হুমকিতে কিছু যায় আসে না। এখানে অবৈধ কোনো কর্মকাণ্ড চলতে দেয়া হবে না। শাহ আরফিন টিলায় অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে দু-একদিনের মধ্যেই আরেফিন টিলা থেকে পাথর বহনের জন্য ব্যবহৃত ৩টি রাস্তায় স্থায়ী প্রতিবন্ধক নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
কোম্পানীগঞ্জ থানায় সদ্য যোগদানকারী ওসি শফিকুর রহমান খান যুগান্তরকে জানান, শাহ আরেফিন টিলায় শ্রমিক মৃত্যুতে ৬টি হত্যা মামলা হয়েছে। একটির তদন্ত শেষ হয়েছে। এসব ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে জেলা প্রশাসক মো. রাহাত আনোয়ার জানান, তদন্ত কমিটি যাদের চিহ্নিত করেছে শুধু তাদের বিরুদ্ধে নয়, অবৈধ পাথর উত্তোলনে আরও যারা জড়িত, সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। পূর্ণাঙ্গ একটি তালিকা করা হচ্ছে। কেউই বাদ যাবে না।সূূূূত্র – যুগান্তর
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd