ঋণের লক্ষ্য ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ৬:৫০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩

ঋণের লক্ষ্য ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা

Manual7 Ad Code

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রতিকূল বিশ্ব পরিস্থিতির মুখে ২০২৩-২৪ অর্থবছর ব্যাংকিং খাত ও দাতাদের কাছ থেকে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। এরমধ্যে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং দাতাদের কাছ থেকে নেওয়া হবে ৮৩ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা ধরে করে আগামী বাজেটের কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। এর আওতায় সরকারের ৫৯টি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সঙ্গে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ধারাবাহিক আলোচনা শুরু হবে। প্রত্যেক বছরের এই সময়েই পরবর্তী বাজেটের প্রস্তুতি শুরু হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষ হবে ৪ মার্চ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

 

বৈঠকে বৈশ্বিক সংকট, দেশের অর্থনীতিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব, মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্স ঘাটতি, ভর্তুকির চাপ ও রাজস্ব আয় নিয়ে আলোচনা হবে। চলমান সংকটের মধ্যে রাজস্ব আয় এবং রেমিট্যান্স বাড়াতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর বেশি জোর দেওয়া হবে।

 

Manual6 Ad Code

এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের সঙ্গে বৃহস্পতিবার যুগান্তরের কথা হয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ’র মানদণ্ড অনুযায়ী ঋণ নেওয়ার মাত্রা এখনো ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে সরকার ঋণ গ্রহণ করতে পারে। তবে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে বেশি ঋণ নেওয়া হলে সুদ পরিশোধের ব্যয় বাড়বে। যেহেতু বাজেটে ঘাটতি থাকবে তাই এ খাতে বেশি ব্যয় হলে অন্য খাতে কম হবে। এটি খেয়াল রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে।

Manual7 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

সূত্রমতে, ২০২৩-২৪, ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ, রাজস্ব আয় ও সরকারের ব্যয়ের আকার, মূল্যস্ফীতির হার, প্রবৃদ্ধির হারের প্রাথমিক প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ। ওই হিসাব অনুযায়ী আগামী তিন অর্থবছরে ৬ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এরমধ্যে বৈদেশিক ঋণ পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা এবং ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে পৌনে চার লাখ কোটি টাকা। সেখানে ধারাবাহিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে এমনটি ধরে নিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮ শতাংশ এবং পরবর্তী অর্থবছরে ৮ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হয়। আর মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক ধরে এই সময় ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি থাকবে এমনটি প্রত্যাশা করছে অর্থ বিভাগ। অর্থ বিভাগ মনে করছে, দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন পরিস্থিতি ভালো হবে। এছাড়া বাড়ছে রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও রাজস্ব খাতের আয়ও। সরকারি ব্যয়ের পরিমাণও বাড়বে। এসব সূচক আগামীতে ডিজিপির প্রবৃদ্ধি অর্জনে নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে।

 

যদিও আইএমএফ’র সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়, বাংলাদেশের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি উঠে যাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হবে। অর্থাৎ আগামী পাঁচ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে ওঠার সম্ভাবনা দেখছে না সংস্থাটি।

 

মূল্যস্ফীতির প্রসঙ্গে সংস্থাটি বলেছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং তার পরের বছর ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। এছাড়া অর্থবছরের এখনো প্রায় পাঁচ মাস বাকি। এই সময় মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের ঘরেই থাকবে। চলতি অর্থবছরের শেষ প্রান্তে তা ৮ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে।

 

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, জুনের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। এটি হতে পারে তৃতীয় মেয়াদের শেষ এবং অর্ধেক বাজেট। কারণ সরকার বাজেট ঘোষণার পর আগামী জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফলে বর্তমান সরকার বাজেট বাস্তবায়নের সময় পাবে ৬ মাস। এসব দিক মাথায় রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকার বাজেট প্রক্ষেপণ করছে অর্থ বিভাগ। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। উন্নয়ন খাতের প্রকল্পে প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার। অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বাজেটের ঘাটতি হবে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২৬ সালে বেসরকারি বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হবে ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছর ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে বেসরকারি বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধির হার কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটির হিসাবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ দাঁড়াবে জিডিপির ২২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে দাঁড়াবে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ আগামী পাঁচ বছরেও বেসরকারি বিনিয়োগের হার প্রাক-মহামারি পর্যায়ে ফেরত যাবে না। এতে কর্মসংস্থানের হার কমে যাবে।

 

এসব বিষয় চূড়ান্ত করতে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৈঠক করা হবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং শেষ আলোচনা হবে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সঙ্গে।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2023
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728  

সর্বশেষ খবর

………………………..