সিলেটে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নায়েক সফির ছুটে চলা

প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২১

সিলেটে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে নায়েক সফির ছুটে চলা

Manual3 Ad Code

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট নগরীতে মোটরসাইকেলে যোগে গায়ে পুলিশের পোশাক। পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে ছুটছেন এক যুবক- এমন একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে।

Manual5 Ad Code

ঘটনাটি সোমবারের। ছবিটি সিলেট শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল এলাকা থেকে তোলা। পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বাঁধা সেই সফি আহমেদ সিলেট মহানগর পুলিশের নায়েক। গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই মানবিক সহায়তা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসেন সফি। সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া ও কমিউনিটি সার্ভিস বিভাগে কাজ করেন সফি।

সিলেটে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান সফির এ কার্যক্রম। এ কাজে আরও কিছু তরুণকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন মানবিক টিম নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে খাদ্য বিরতণ, প্লাজমা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ওষুধসহ চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছেন তারা।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি সম্পর্কে মানবিক টিমের প্রধান সমন্বয়ক সফি আহমদ মঙ্গলবার বলেন, ‘সোমবার দুপুরে আমি নগরের শেখঘাট এলাকার একটি টিকাদান কেন্দ্রে ডিউটিতে ছিলাম। এমন সময় অচেনা নম্বর থেকে দুইটি ফোন আসে। জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন। রোগী শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি।’

সফি বলেন, ‘একটু পরই আমার ডিউটি শেষ হয়। আমার মোটরসাইকেল তখন আরেকজন নিয়ে গেছেন। আমি আরেকজনের মোটরসাইকেল নিয়ে বাসায় রাখা অক্সিজেন সিলিন্ডার পিঠে বেঁধে হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে শুনি রোগীকে শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। স্বজনরা তাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। এরপর আমি দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ওসমানীতে পৌঁছে দেই।’

Manual1 Ad Code

শামসুদ্দিন হাসপাতালের আশপাশ থেকে কেউ ছবি তুলে ফেসবুকে আপ করেন বলে জানান শফি। অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়া দুই রোগীরই করোনার উপসর্গ রয়েছে। তবে তারা এখন অনেকটা সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি।

নিজের কার্যক্রম সম্পর্কে সফি বলেন, ‘গত বছর ২৬ মার্চ থেকে আমরা সহায়তা কর্মসূচি শুরু করি। লকডাউনে বিপাকে পড়া দরিদ্র মানুষদের সহায়তার জন্যই উদ্যোগ নিয়েছিলাম। প্রথমে খাদ্য সহায়তা করতাম। এখন সহায়তার পরিধি আরও বিস্তৃত হয়েছে। আরও অনেকে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।’দেশে ও প্রবাসের অনেকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন বলেও জানান সফি।

Manual6 Ad Code

এখন ২৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রয়েছে জানিয়ে সফি বলেন, ‘ফোন পেলেই মানবিক টিমের সদস্যরা অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেন। মাত্র ২৫টি সিলিন্ডার নিয়ে সেবা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। অক্সিজেনের জন্য আমাদের কাছে প্রতিদিন শ খানেক ফোন আসে।’

সফি বলেন, ‘অনেকে আমাদের টাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ অক্সিজেন সিলিন্ডার দান করেছেন। আমরা সেগুলো মানুষের প্রয়োজনে পৌঁছে দিচ্ছি।’

Manual8 Ad Code

অক্সিজেন সেবা ছাড়াও রোগীর প্রয়োজনে প্লাজমা সংগ্রহ করে দিচ্ছে সফির মানবিক টিম। সফি বলেন, ‘আজও আমরা দুইটা প্লাজমা সংগ্রহ করে দিয়েছি। এভাবে প্রতিদিনই একটা-দুইটা প্লাজমা দিতে হয়। এ ছাড়া আমাদের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিও অব্যাহত আছে। হতদরিদ্র কিছু রোগীর জন্য ওষুধও সংগ্রহ করে দেই।’

সফি জানান, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, অসহায় শিক্ষার্থী ও হতদরিদ্র মানুষদের সাহায্য শুরু করেন তিনি। কখনও চাল, ডাল, নুন, তেল দিয়ে, কখনও রান্না করা খাবার দিয়ে। রক্ত ও প্লাজমা সংগ্রহ করে দেন। আবার করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের দাফনেও সহায়তা করে মানবিক টিম। তবে এখন অক্সিজেন সেবাই বেশি দিতে হচ্ছে।

সফির কার্যক্রম সম্পর্কে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘পুলিশের কমিউনিটি সার্ভিস কার্যক্রমেরই একটি অংশ স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে মানুষকে সহায়তা করা। আমাদের টিমের সদস্য হিসেবে সফি এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

‘তার মানবিক কর্মকাণ্ড প্রশংসার দাবিদার। আমরা সবসময়ই তাকে উৎসাহ দিই। এসব কাজ পুলিশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করে। তার সঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীরাও স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..