অধ্যক্ষ নয় যেন রাজার বাহাদুরি

প্রকাশিত: ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৮

অধ্যক্ষ নয় যেন রাজার বাহাদুরি

Manual7 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: সিলেট পলিটেকিনক ইন্সটিটিউট এ দীর্ঘদিন যাবত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ইঞ্জিনিয়ার ড.মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অপ্রীতিকর মন্তব্য কলেজের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মুখে। এমনকি নিম্ন পদস্থ কর্মচারীদের কাছেও। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজের দীর্ঘ জীবনের সুনাম রয়েছে। যা এখন নষ্ট হওয়ার পথে, দাবী স্থানীয়দের।

কয়েকদিন আগেই বৈদ্যুতিক শকে মৃত্যু হয় ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ছাত্র মামুন এবং ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যু হয় হয় ইলেকট্রোমেডিকেল বিভাগের ৩য় পর্বের ছাত্র বাধন’র। সেই সুবাধে ইন্সটিটিউট শিক্ষার্থীরা মিলে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের জন্য অধ্যক্ষের কাছে আবেদনপত্র নিয়ে অনুমতি চাওয়ার জন্য গেলে অফিসের পিয়ন দরজায় ঐ শিক্ষার্থীদের আটকে দেন। শিক্ষার্থীদেরকে বলা হয় স্যার একটু ব্যস্ত আছেন এখানে দাড়ান। এভাবে প্রায় আধঘন্টা পার হয় কিন্তু ভিতর থেকে কোনো জবাব আসে না। অনেক্ষণ তাদের দাড়ানোর পর অফিসের পিয়ন আবার এসে তাদেরকে বলে কি বিষয় আমাকে বলেন। তারা ভিতরে যেতে না পেরে বাধ্য হয়ে পিয়নের কাছেই মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের কথা বলে। পরবর্তীতে আবার পিয়ন তাদেরকে বলে আপনারা দাড়ান আমি স্যারকে বিষয়টি বলছি। এভাবে আরো আধাঘন্টা দাড় করিয়ে রাখা হয় তাদেরকে। পরবর্তীতে অনেক্ষণ পর আবার পিয়ন এসে বলে আপনাদেরকে অনুমতি দেয়া হলো।

Manual5 Ad Code

ঐ শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা অনেক্ষণ দাড়ানোর পরও আমাদের দেখা করতে দেয়া হলো না অধ্যক্ষ স্যারের সাথে। এমনকি উনি মৌখিক অনুমতি দিয়ে দিলেন। আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করলেন না। পরবর্তীতে মিলাদ ও দোয়ার দিন যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে তিনি বলবেন আমি কিছু জানি না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মিলাদ ও দোয়া করা যাবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী জানান, কলেজর স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক করে রেখেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা ভয় দেখিয়ে চাঁদা নেয়া থেকে শুরু করে অনেকভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্তা করে। আরডি ভবনে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজ ইউনিফর্ম ছাড়া প্রবেশ করতে পারি না। প্রবেশ করতে গেলে কারারক্ষী অনেক খারাপভাবে গালিগালাজ করে। কিন্তু যারা অধ্যয়ণরত ছাত্রলীগ করে বা সুরমা হোস্টেলে থাকে তারা আরডি ভবনে নির্ধারিত পোশাক ছাড়া প্রবেশ করতে গেলে কারারক্ষী কিছুই বলে না। আমরা যখন কারারক্ষীকে জিজ্ঞেস করি আপনি তাদেরকে প্রবেশ দিলেন কিন্তু আমাদের দিলেন না। কারারক্ষী বলেন, তাদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ স্যার আগ থেকেই বলে দিয়েছেন। এসব বিষয়ে অধ্যক্ষ স্যারের সাথে বার বার কথা বলতে গেলে উনার সাথে দেখা করা যায় না। বার বার উনার পিয়ন এসে দেখা করে। কিন্তু যখন সুশান্ত কুমার বসু স্যার দায়িত্বে ছিলেন কলেজে এরকম কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

Manual1 Ad Code

গোপন সূত্রে জানা যায় ড. আব্দুল্লাহ শুধু সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে এরকম ব্যবহার করেন। কিন্তু যারা ছাত্রলীগ করে বা সুরমা হোস্টেলে থাকে তাদেরকে তিনি বাঘের মতো ভয় পান। তারা দেখা করতে গেলে তিনি চেয়ার থেকে উঠে এসে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেলায় ঠিক তার উল্টোটি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে ইন্সটিটিউটে সুশান্ত কুমার বসু নামে একজন অধ্যক্ষ ছিলেন যিনি ছাত্রলীগের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত হন। অবৈধভাবে পূজার নাম করে স্যারের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে গেলে তিনি দ্বিমত পোষণ করলে তার ব্যবহৃত গাড়ি এবং বাসা ভাঙচুর করা হয়। ঘটনাটি ঘটে ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে কর্মরত এক কর্মচারী জানান, আব্দুল্লাহ স্যার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কলেজে সন্ত্রাসী, রাহাজানি, চাঁদাবাজি অনেক পরিমাণ বেড়েছে। তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের বছর শেষে জমাকৃত ফাইল এবং খাতার টাকা বিক্রি করে কলেজের ফান্ডে জমা রাখার পরিবর্তে কয়েকজন স্যারকে নিয়ে সেই টাকার ভাগ ভাটুয়ারা করে একাই সব টাকা নিজের ব্যাংক একাউন্টে জমা করে নেন। এমনকি যৎসামান্য উন্নয়ণও করেননি কলেজ কর্তৃপক্ষের।

Manual2 Ad Code

কলেজের এক শিক্ষক জানান, আব্দুল্লাহ স্যার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমাদের শিক্ষকতার জীবনে অনেক দুর্গতি নেমে এসেছে যা আগে কোনোদিনও হয়নি। আমাদের এতো জীবনের চাকুরিতে আব্দুল্লাহ স্যারের আগের অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম স্যার বেতন বৃদ্ধি করতে চাইলে আব্দুল্লাহ স্যার আসার পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা চাকুরি বাঁচানোর ভয়ে উনাকে কিছু বলতে পারি না। কারণ উনি অনেক সময় চাকুরি খেয়ে ফেলবেন বলে ধমকও দেন।
সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং স্থানীয়রা ক্ষোভের সাথে মন্তব্য করে বলেন, তিনি কলেজে অবৈধভাবে টাকা আদায় থেকে শুরু করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানো এরকম মনোভাব প্রকাশ করাকে অধ্যক্ষ নয় যেন রাজার বাহাদুরি নামে আখ্যায়িত করেছেন।

এ বিষয় নিয়ে ড. ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহের সাথে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকরাও উনার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেনি এবং ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..