সিলেট ১২ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৯ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:১৯ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মো. কামাল আহমদ, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রার্থী হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিগত ৫ আগষ্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এর পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রজনতার উপর হামলার ঘটনায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবির হাতে আটক হন তিনি। এর পর তিনি কারামুক্ত হন। জনশ্রুতি রয়েছে স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির কিছু সুবিধাভোগী নেতাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তিনি আইনী গ্যারাকল থেকে মুক্ত হয়েছেন।
এদিকে সরকার পতনের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই গতকাল বুধবার উপজেলা আওয়াীলীগের সভাপতিকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন জামায়াত ও বিএনপির নেতারা এঘটনায় দল দুটির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। জৈন্তাপুর উপজেলার জামায়াত ও বিএনপির কিছু অনৈতিক সুবিধাভোগী নেতারা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের পুনর্বাসনের মিশনের এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। স্যোসাল মিডিয়া রসালো আলোচনা চলছে।
জানা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্তে লন্ডনের মন্টফোর্ট ইউনিভার্সিটি থেকে এপ্লাইড কেমেষ্ট্রী বিভাগে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করায় এম হোসাইন আহমদকে বৃহত্তর দরবস্তবাসী ব্যানারে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি ও জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন, বিশেষ অতিথি ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল আহমদ, জৈন্তাপুর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক বাহারুল আলম বাহার।
অনুসন্ধান ও তথ্য সুত্র জানাযায়, সংবর্ধিত হোসাইন আহমদ বিগত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, সাধারণ ছাত্রদের নানান হুমকী ধামকি দিয়ে ফ্যাসিবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। এমন এক ব্যক্তির সংবর্ধনার আয়োজন জনমনে প্রশ্ন তুলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে নিন্দার ঝড় বইছে। ফ্যাসিবাদের আয়োজন, ফ্যাসিবাদের উপস্থিতিতে কঠিন কোনটাসা হয়ে ট্রলে পরিনত হচ্ছেন জামায়াতে নেতা জয়নাল আবেদীন ও বিএনপি নেতা বাবরুল বাহার।
এদিকে, এঘটনার দায় স্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমল ক্ষমা চেয়ে জয়নাল আবেদীন লিখেছেন- ‘দরবস্ত হাইস্কুলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বৈরাচার সরকারের দোসররা উপস্থিত থাকবেন বলে পূর্বে জানা ছিল না, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, জুলাই বিপ্লবের শহীদের অবমানা হয়, এমন কাজ যাতে ভবিষ্যতে না হয়, সকলের সহযোগিতা ও দোয়া চাই।’
তৃণমূল কর্মীদের দাবি দিনে বিএনপি, দুপুরে জামায়াত, রাতে আওয়ামীলীগ এমন নেতারা তৃণমূল কর্মীদের কোনটাসা করে রেখেছেন। আমরা চায়ের ষ্টল থেকে শুরু করে রাপথে রক্ত দেই আর তারা অন্ধকারে হাত মেলায়।
জানা যায়, জামায়াত নেতা জয়নাল আবেদীনের বাল্যবন্ধু হিসাবে পরিচিত কামাল আহমদ সদ্য বিলুপ্ত জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। বিগত ৩৬ জুলাই পরে ভারতে পালানোর সময় বিজিবির হাতে আটক হয়ে জামিনে মুক্ত হয়ে বিএনপি ও জামায়াতের সেল্টারে রাজনীতির ময়দানে নিজকে ধরে রাখতে চান। তৃণমূল কর্মীদের দাবি এরকম জননেতা হলে দেশ জাতি ও দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ছাত্র সমাজ হারাবে তার প্রেরনার ঠিকানা।
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পলিনা রহমান পলি লিখেছেন, ‘আওয়ামীলীগের এরকম প্রোগ্রাম থেকে আমরা বের হয়ে এসেছি আপনারা চাইলে চলে আসতে পারতেন।’ জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও জেলা শিবিরের সাবেক প্রচার সম্পাদক এনামুল হক তার ফেসবুকে জয়নাল আবেদীন কে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘প্রকাশ্যে উনার অবস্থান ব্যাখ্যা করার আগে পর্যন্ত, সকল ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে ওনাকে বিরত রাখা হোক। এটা শহীদের র*ক্তের উপর দাড়িয়ে থাকা সংগঠন, এটা কারো বাবার সম্পত্তি নয়। একজন সমর্থক হিসাবে এটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত।’
সাবেক মহানগর শিবিরনেতা মহিউদ্দিন ফয়সাল স্যোসাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘এলাকাপ্রীতির কথা বলে পতিত স্বৈরাচারের নেতাদের নিয়ে যারা মিটিং করছেন তিনারা যতবড় নেতাই হোন নে কেন তারা জুলাই বিপ্লবের শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি করছেন।’
সোস্যাল মিডিয়ায় ঘেটে দেখা যায়, জৈন্তাপুরে জামায়াত ও বিএনপির কর্মীরা এঘটনাকে দুই সহস্রাধিক শহীদের রক্তের সাথে গাদ্দারী বলে অভিহিত করেছেন। তারা জয়নাল আবেদীন ও বাহারকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবী জানান।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে আজ জৈন্তাপুরে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের কর্মীরা ঝাড়ু মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর নাজমুল ইসলাম বলেন, উনি(জয়নাল আবেদীন) ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এর বাহিরে এইমূহুর্তে আর মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাফিজ আলোকিত সিলেটকে বলেন, আমরা যুবদলের আহবায়কের কাছে এমন কর্মকাণ্ড আশা করিনি। আমরা জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবগত করব।
সিলেট জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন আলোকিত সিলেটকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এরকম হয়ে থাকলে দল তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।
সিলেট জেলা উত্তর জামায়াতের আমীর হাফেজ আনোয়ার হোসাইন খান বলেন,জয়নাল আনেদীন বিকেল ৪টা থেকে আমাদের সাথে মিটিংয়ে ছিলেন। তাহলে উনি কখন আওয়ামীলীগের সাথে মিটিং করলেন?
আমাদের কাছে ছবি রয়েছে এবং উনি নিজেও স্যোসাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষমা চেয়েছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি ক্ষমা চেয়েছেন, সাংবাদিকরাও তাকে ক্ষমা করে দেন।
সিলেট জেলা জামায়াতের নব নির্বাচিত আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান আলোকিত সিলেটকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই খোঁজ নিয়ে দেখব।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd