সিলেট ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:০৫ পূর্বাহ্ণ, মে ২, ২০২১
স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ৮নং ওয়ার্ডের পীরেরচক গ্রামে ফার্মের টিলা নামক স্থানে প্রশাসনের নাম ভাঙ্গীয়ে অবাধে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বাড়িঘর নির্মাণের কথা বলে ৪০-৫০ ফুট উঁচু টিলা কেটে মাটির শ্রেণি পরিবর্তন করে সমতল করছেন দখল মালিক টিলা খেকো শিতু সহ একটি চক্র। এই মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে নিচু জমি।
অভিযোগ রয়েছে, টিলা কাটার কাজ শুরুর আগে সেখানে অনেক গাছগাছালি ও টিলা ছিল। সেগুলো প্রথমে পরিষ্কার করা হয়। তারপর টিলা খেকো শিতু সহ একটি চক্র মাটি কেটে নিয়ে যান এবং সেখানে একটি বিল্ডিং ঘর নির্মানের কাজ শুরু করেন। নির্মাণ কাজ কিন্তু এখন প্রায় শেষের দিকে। রাতের আঁধারে প্রশাসনের চোখের আড়ালে চুরি করে ওই টিলায় শুরু হয় মাটি কাটা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই টিলা খেকো শিতু ও উনার এক বন্ধু তপু মিলে অল্প কিছু দিন আগে পীরেরচক এলাকায় ৬ ডিসিমেল জায়গা ক্রয় করেন। আর টিলা খেকো শিতুর বাল্যকালের একজন বন্ধু হচ্ছেন পুলিশ অফিসার। তিনি বর্তমানে শাহপরাণ (রহ.) থানার অন্তর্ভুক্ত সুরমা গেইট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত আছেন। তাই এই পুলিশ অফিসারকে বরশীর টপ হিসেবে কাজে লাগিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছেন টিলা খেকো শিতু। টিলা খেকো শিতু ওই জায়গা ক্রয় করার পর টিলা কাটা ও নির্মাণ কাজ শুরুর করার দিন ওই পুলিশ অফিসারকে দাওয়াত করেন এবং ওই পুলিশ অফিসার বাল্যকালের বন্ধুর অনুরোধে সরল মনে তিনি সেখানে উপস্থিত হন কিন্তু উনার সেই সরলতার সুযোগ নিয়ে টিলা খেকো শিতু এলাকায় পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন যে উনিও না কি একজন পুলিশ অফিসার তাই তার বাসার নির্মাণ কাজ শুরু দিনে তার বন্ধু পুলিশ অফিসার এসেছিলো। তবে প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসলো তলের বিড়াল ! টিলা খেকো শিতু একজন ব্যবসায়ী কিন্তু উনি এলাকায় পুলিশ অফিসার হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।
এ বিষয়ে টিলা খেকো শিতুর বাল্যকালের বন্ধু পুুুলিশ অফিসার প্রতিবেদককে বলেন, সে আমার বাল্যকালের বন্ধু তা ঠিক তবে কিছু দিন আগে আমি তার কাছ থেকে শুনেছি যে ওই এলাকায় সে কিছু জায়গায় ক্রয় করেছে। তাছাড়া আমাকে তার বাসার কাজ উদ্বোধন করবে বলে দাওয়াত করছে আমি তার কথার রাখার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। সে আমার সাথে টিলা কাটার বিষয়ে কোন আলাপ করে নি করলে আমি তখনই নিষেধ করতাম। আর এই টিলা কাটার সাথে আমার কোন যোগসূত্র নেই তা আপনারা ক্ষতিয়ে দেখতে পারেন। সে আমাকে এভাবে যে বরশীর টপ হিসেবে ব্যবহার করবে তা আমি বুঝতে পারিনি যদি বুঝতাম তাহলে আমি সেখানে যেতাম না। আপনারা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিন।
এ বিষয়ে জনৈক সাংবাদিকের টিলা খেকো শিতু সাক্ষাতে জানান, যে আমি কোন পুলিশ অফিসার না আমি একজন ব্যবসায়ী। তার বন্ধু পুুুলিশ অফিসারের কথা জানতে চাইলে বলেন, যে সে আমার বাল্যকালের বন্ধু এবং আমার নির্মাণ কাজ শুরুর দিনে সে আমার দাওয়াতে এখানে এসেছিলো ঠিক। টিলা খেকো শিতুর কাছে টিলা কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
প্রকাশ থাকা আবশ্যক যে, পরে টিলা খেকো শিতু স্থানীয় বিভিন্ন স্তরের লোকজনকে দিয়ে প্রতিবেদককে টাকা দিয়ে নিউজ বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছেন।
এ বিষয়ে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া মমতাজের সাথে সাক্ষাতে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কোন অভিযোগ পান নি তবে যেহেতু আমরা উনাকে বিষয়টি অবগত করেছি তাই উনি খুব দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেনের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিয়েও উনার সাথে যোগাযোগ করা যায় নি।
এ বিষয়ে শাহপরাণ (রহ.) থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আনিসুর রহমানের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, আইন সবার জন্য সমান। যদি আইনের লোক হয়ে আমার থানার কোন অফিসার এই বিষয়ের সাথে জড়িত থাকেন তাহলে উনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আপনারা আমাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন আমি এই টিলা খেকো চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এলাকার সচেতন মহল টিলা কাটা ও টিলা খেকো শিতুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd