আকবরকে পেতে ভারতীয়কে ১২ লাখ টাকা দেয় পুলিশ!

প্রকাশিত: ২:৪১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২০

আকবরকে পেতে ভারতীয়কে ১২ লাখ টাকা দেয় পুলিশ!

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান নিহতের মামলায় প্রধান আসামি এসআই (বরখাস্ত) আকবরকে পেতে ভারতীয় আশ্রয়দাতাকে ১২ লাখ টাকা দিতে হয়েছে সিলেট জেলা পুলিশকে।

চুক্তি অনুযায়ী উমখিয়াং পুঞ্জির খাসিয়াদের হাতে আকবরকে হস্তান্তর করে আশ্রয়দাতা আসামের শিলচরের কইপত্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা গোপাল দাস। কথা অনুযায়ী আকবরকে ডোনা সীমান্তে হস্তান্তর করে ৯ নভেম্বর সকাল ৯টায়।

টাকার বিনিময়ে আকবরকে হস্তান্তরের চুক্তি হয় ৫ নভেম্বর। ৮ নভেম্বর গোয়াহাটি নেয়ার কথা বলে শিলচর থেকে তাকে ডোনা সীমান্তে আনে গোপাল। এমন তথ্য দিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র। এছাড়া বেশ কিছু তথ্য-উপাত্তও রয়েছে।

গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে আকবরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর বিকালে বন্দর ফাঁড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে রাতে শহরেই অবস্থান করে আকবর। পরদিন বিকালে স্থানীয় সাংবাদিক নোমানের সঙ্গে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ এলাকার ভোলাগঞ্জ যায়। সেখানে এক নারী জনপ্রতিনিধির বাসায় রাত্রিযাপন করে।

এবং সেই জনপ্রতিনিধির স্বামীর মাধ্যমেই পরদিন ১৪ নভেম্বর ভোরে ভারতের মাঝাই গ্রামে নরেশ সিংহ নামের এক চুনাপাথর ব্যবসায়ীর বাসায় ওঠে। সেখানে ৪ রাত্রি অবস্থান করে আকবর। এদিকে বাংলাদেশের পুলিশ ভারতীয় খাসিয়া ও নরেশের বন্ধু পান্নার মাধ্যমে নরেশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। কিন্তু নরেশ জানায়, তার কাছে আকবর নেই।

নরেশ সিংহ ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে আকবরকে মাঝাই গ্রাম থেকে সরিয়ে আসামের শিলচরে পাঠায়। সেখানে নরেশের বন্ধু পান্নার আত্মীয় গোপাল দাসের বাড়িতে ওঠে আকবর। জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নরেশের কাছে আকবরকে না পেলেও গোপালের তথ্য পায় জেলা পুলিশ। সেই তথ্য অনুযায়ী জকিগঞ্জ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রফতানিকারক ভারতীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ।

সেই ব্যবসায়ীর মাধ্যমেই পুলিশ নিশ্চিত হয় গোপালের বাড়ি শিলচরের কইপত্যপাড়ায়। পরে সেই ব্যবসায়ীর মাধ্যমেই গোপাল দাসের সঙ্গে আকবরকে ফিরিয়ে দেয়ার আলোচনা শুরু হয়।

প্রথমে রাজি না হলেও পরে সে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফিরিয়ে দিতে রাজি হয়। প্রথমে সে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। ২ নভেম্বর পুলিশকে আকবরের ছবি পাঠানো হয়। পুলিশও নিশ্চিত হয়। তবে ৫০ লাখ টাকা চাওয়ায় পুলিশ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। দু’দিন পর গোপাল নিজেই ফোন করে। পরে ৪ নভেম্বর চুক্তি হয় ১০ লাখ টাকায়।

কিন্তু কীভাবে কোন সীমান্ত দিয়ে তাকে গ্রহণ করবে তা নিয়ে সময় চলে যায়। পরে ৭ নভেম্বর কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত দিয়ে তাকে ফেরত দিতে রাজি হয় গোপাল। কিন্তু নতুন বিপত্তি বাধে টাকা নিয়ে। গোপাল জানায়, তাকে ১০ লাখ ভারতীয় রুপি দিতে হবে; যা বাংলাদেশি টাকায় ১২ লাখ টাকা। পরে পুলিশ সিলেটের জাফলং থেকে ভারতীয় ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ১০ লাখ রুপি সংগ্রহ করে। স্থান নিশ্চিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর সেই ডোনা সীমান্তের খাসিয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেলা পুলিশ।

তার পর গোপাল আকবরকে জানায়, সে শিলচরে নিরাপদ নয়, তাকে ভারতীয় পুলিশ খুঁজছে। তাই তাকে গোয়াহাটির এক আত্মীয়র বাসায় রেখে আসবে। গোয়াহাটির কথা বলে তাকে গাড়িতে করে নেয়া হয় সেই ডোনা সীমান্তে। এর আগে ৮ নভেম্বর সেই এলাকার খাসিয়াদের সঙ্গে আলোচনা করে আসে সিলেট জেলা পুলিশ। আলোচনা অনুযায়ী ৯ নভেম্বর সকাল ৯টায় খাসিয়ারা পুলিশের দেয়া ১০ লাখ রুপি গোপালের কাছে হস্তান্তর করে আকবরকে তাদের কাছে নেয়। এরপরই চলে যায় গোপাল।

এ সময় আকবরকে খাসিয়ারা নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সে সময় এক ভিডিওতে আকবরকে বলতে শোনা যায় ‘ম্যারা ভাই গোপালকো ফোন লাগাও।’ আগের দিনই স্থানীয় রহিমসহ কয়েকজনের সঙ্গে আলোচনা করে ভারতীয় খাসিয়াদের হাত থেকে আকবরকে কীভাবে নিয়ে আসবে তা নিয়ে আলোচনা করে কানাইঘাট থানার ওসি। সেই ছবিও যুগান্তরের হাতে এসেছে।

সেই রহিমকে আগের রাতে ১৫ হাজার টাকা দেয় পুলিশ। পরে রহিম তার লোকজন নিয়ে সকালেই সীমান্তে যায়। পরে পুলিশের কথামতো দুপুর ১২টার দিকে আকবরকে নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রহিমসহ স্থানীয় ৫ জন। পরে পুলিশ তাদের হাত থেকে আকবরকে গ্রেফতার করে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2020
S S M T W T F
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..