যাদুকাটা নদীতে রাতের অন্ধকারে বালু উত্তোলন, বালু খেকোদের লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য

প্রকাশিত: ৪:১২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০

যাদুকাটা নদীতে রাতের অন্ধকারে বালু উত্তোলন, বালু খেকোদের লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হলেও বালু খেকো সিন্ডিকেট সরকারী নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত নদী যাদুকাটায় দু’কিলোমিটার এলাকায় রাতের আঁধারে চলছে বালু লুটের মহোৎসব। যাদুকাটা নদীর পাড়ে বালু স্টক নেই। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বালু উত্তোলন করে প্রতিদিনই লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট যাদের রয়েছে প্রশাসনের সাথে গভীর সখ্যতা। ফলে তারা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয় এলাকাবাসী।

ঐসব বালু খেকোদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার, র‌্যাব ও জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।

জানা যায়, জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গাগটিয়া জালরটেক হতে অদৈত মহাপ্রভুর বাড়ির পশ্চিমপাড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় চলে অবৈধ ভাবে বালু বিক্রির মহাউৎসব। আর পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা অংশেও একেই সময়ে চলে বালু উত্তোলন। এই বালুখেকোদের হাত থেকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগীতা কামনা করছেন যাদুকাটা নদীর তীরে বসবাসকারী অসহায় জনসাধারণ।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও একাধিক সুত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গাগটিয়া জালরটেক হতে অদৈত মহাপ্রভুর বাড়ির পশ্চিমপাড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিনই রাত ১২টায় যাদুকাটা নদীতে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে বালু বিক্রির মহাতান্ডব চালায়। নৌকায় বালু বোঝাই করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রথমে যাদুকাটা নদীর তীর ও তীর সংলগ্ন জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করে ৭’শত থেকে ১ হাজার ফুট স্টিলের ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে। পরে যাদুকাটা নদী হয়ে রক্তি ও সুরমা নদীপথ দিয়ে জামালগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ ও ঢাকায় সেই বালি পাঠায়।

এই খবর পেয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হলে খবর পেয়ে পালিয়ে যায় বালু খেকোরা। রাতে তখন শুরু হয় প্রশাসনের সাথে তাদের চোর পুলিশ খেলা।

আর প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে নৌকাসহ শ্রমিকদের আটক করলেও বালু খেকো স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছেনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বালুখেকোরা সিন্ডিকেট তৈরি করে পুলিশের নাম ভাংগিয়ে প্রতিফুট অবৈধ বালু থেকে ৫ টাকা ও স্থানীয় সাংবাদিকদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিফুট বালু থেকে ২ টাকা চাঁদা নিচ্ছে স্থানীয় একজন সংবাদকর্মী, তার বিরুদ্ধে মাদক ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে নিজে দাড়িয়ে ঘরকাটির শিয়ালের টেক থেকে পাড় কেটে বালু বিক্রি করছে দীর্ঘ দিন ধরে।

এ ব্যাপারে মিয়ারচর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার আজাদ বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত যাদুকাটা নদী থেকে অর্ধ শতাধিক নৌকা বোঝাই করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা বালু বিক্রি করে কিছু সংখ্যক বালুখেকো। আর এতে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব এদিকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে এসব খেকোরা। তাদের বিরুদ্ধে প্রসাশন কখনোই জোরালো কোন পদক্ষেপ নেয়না।

গাগটিয়া ৬নং ওয়ার্ড কমিটির কৃষকলীগের সভাপতি সামসুজ্জামান বলেন, রাতের বেলায় যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে বাড়িঘর নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাসী বাধা দিয়েও বাড়িঘর রক্ষা করতে পারছিনা, প্রশাসন সঠিক ভাবে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে শতশত পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। অবৈধ বালু উত্তোলনকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, যাদুকাটা নদীতে বালু উত্তোলনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু বোঝাই ৪টি ইঞ্জিনের নৌকাসহ ৫জনকে গ্রেফতার করে গত সোমবার সকালে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের কামাল মিয়া (৫০), হযরত আলী (২৪), রুবেল মিয়া (২২), রবিউল আউয়াল (২৫) ও নুর মিয়া (২২)। তাদের বিরুদ্ধে তাহিরপুর থানার মামলা নং-৭ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু এসবের মুল হুতাগন আজও আইনের আওতায় আসে নি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2020
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..